শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

সুনামগঞ্জের আলোচিত কেয়ারটেকার সালাম হত্যা

তিন মাসেও অধরা প্রধান আসামি

ছাতক (সুনামগঞ্জ) উপজেলা সংবাদদাতা : | প্রকাশের সময় : ৩০ জুন, ২০২১, ১১:৪৫ পিএম

সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে আলোচিত কেয়ারটেকার আবদুস সালাম (৩৯) হত্যাকাণ্ডের সাড়ে সাত মাস অতিবাহিত হলেও মামলার প্রধান আসামি এখনো গ্রেফতার হয়নি। ফলে উদ্বেগ উৎকন্ঠায় দিন কাটছে বাদি ও তার পরিবারের। হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী যুক্তরাজ্যে বসবাস করায় দেশের পুলিশ প্রশাসন তাকে গ্রেফতার করতে পারছে না। কিন্তু হত্যাকাণ্ডের পর ঘটনাস্থল থেকে মাথায় কালো ভেজ পরিহিত ৭ জনকে পুলিশ তাৎক্ষণিক আটক করেছিল। পরবর্তীতে এ হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে তাদেরকে সুনামগঞ্জ আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়। এদের মধ্যে ১ জন ছাড়া অন্য ৬ জন আসামি জামিনে আছেন।
জানা যায়, দোয়ারাবাজার উপজেলার সদর ইউনিয়নের পূর্ব নৈনগাঁও গ্রামের মৃত মমশ্বর আলীর ছেলে আবদুস সালাম। দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেয়া আবদুস সালাম ১২ বছর বয়স থেকে তিনি উপজেলার দোহালিয়া ইউনিয়নের বাদে গোরেশপুর গ্রামের মৃত আবদুল খালিকের পুত্র যুক্তরাজ্য প্রবাসী কামরান আবদুল হাই এর বাড়িতে চাকরি নেন। তিনি প্রবাসীর জমি-জমা, বাড়ি-ঘর দেখাশুনার পাশাপাশি কৃষি কাজ ও গরু লালন-পালন করে আসছিলেন দীর্ঘ দুই যুগ ধরে। বিনিময়ে প্রবাসী তাকে প্রতিমাসে বেতনের টাকা দিতেন। প্রায় ১২ বছর আগে ওই প্রবাসী তাকে বিয়ে করিয়েছিলেন। বিয়ে করে স্ত্রী ও তিন সন্তান নিয়ে সেখানেই বসবাস করতেন সালাম।
গ্রামের আলী হোসেন মেম্বারের সাথে যুক্তরাজ্য প্রবাসীর মামলা সংক্রান্ত বিরোধ রয়েছে। এ বিরোধকে কেন্দ্র করে অন্যদের ফাঁসাতে নিজের বাড়ির কেয়ারটেকার সালামকে গত বছরের ১৬ নভেম্বর সন্ধ্যায় কাজের কথা বলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করে ধানক্ষেতে ফেলে রাখে। ওইদিন রাতভর হত্যাকারীদের বিভিন্ন নাটকীয়তা শেষে পরদিন ১৭ নভেম্বর ভোর সকালে গ্রামের পশ্চিমের হাওরে আলী হোসেন মেম্বারের পাকা ধানক্ষেত থেকেই তারাই লাশের সন্ধান দেয়।
খবর পেয়ে থানা পুলিশ সকালে ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে এবং তাৎক্ষনিক ৭ জনকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। আটক সকলের মাথায় ছিল কালো ভেজ। ঐদিন নিহতের স্ত্রী লাভলী বেগম বাদি হয়ে যুক্তরাজ্য প্রবাসী কামরান আবদুল হাইকে প্রধান আসামি করে দোয়ারাবাজার থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আটক ৭ জনকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছিল। এদের মধ্যে প্রায় একমাস কারাভোগের পর জামিনে বেরিয়ে আসে গ্রামের অজুদ আলীর ছেলে সালমান হোসেন ও এমরান হোসেন। জুনে মাঝামাঝিতে উচ্চ আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পান গ্রামের মৃত জফর আলীর ছেলে মোছদ আলী ও ইছাক আলীর ছেলে সোহেল মিয়া। গত এক সপ্তাহ আগে মৃত জফর আলীর ছেলে জয়নাল আবেদীন ও অজুদ আলী সুনামগঞ্জ আদালত থেকে জামিন লাভ করেন।
এ মামলার আসামি তাজুল ইসলাম শুধু জেল হাজতে রয়েছেন। এদিকে, নিরাপত্তাজনিত কারণে বাদি কর্তৃক দোয়ারাবাজার থানা থেকে মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) সিলেটে স্থানান্তরিত করেছিলেন ঘটনার প্রায় মাস দেড়েক পর। বর্তমানে মামলাটি তাদের তদন্তাধীন আছে।
নিহতের স্ত্রী ও মামলার বাদি লাভলী বেগম জানান, পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ছিলেন তার স্বামী। তাকে হত্যা করার পর বাদে গোরেশপুর ছেড়ে তিন সন্তান নিয়ে তার স্বামীর বাড়ি দোয়ারাবাজার উপজেলার সদর ইউনিয়নের নৈনগাঁও গ্রামে বসবাস করে আসছেন। ভিটে আছে কিন্তু বসত ঘর নেই। তাই চাচা শশুর আজর আলীর সাথে জরাজীর্ণ ঘরে অনাহারে-অর্ধহারে মানবেতর জীবন-যাপন করতে হচ্ছে তাকে। বর্তমানে তিনি সিলেটের একটি ক্লিনিকে অসুস্থ অবস্থায় ভর্তি আছেন। তিনি তার স্বামীকে নির্মমভাবে হত্যাকারীদের ফাঁসি চান। পাশাপাশি হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী, যুক্তরাজ্য প্রবাসী কামরান আবদুল হাইকে দেশে এনে স্বামী হত্যার বিচারের জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
নিহত আবদুস সালামের চাচাতো ভাই হাফিজুর রহমান জানান, লাশ উদ্ধারের দিন ঘটনাস্থলে মাথায় কালো ভেজ পড়া ৭ আসামিকে পুলিশ গ্রেফতার করেছিল। এরা সকলই ছিল প্রবাসী কামরান আবদুল হাইর আত্মীয়-স্বজন ও সালাম হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত। বর্তমানে একজন ছাড়া অন্য সব আসামিরা জামিনে বেরিয়ে আসছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন