সিরাজগঞ্জের শক্ত কাঠামোযুক্ত ১০০ বছরের গ্যারান্টি দেয়া শহররক্ষা বাঁধে ভাঙন যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। বন্যায় বাঁধ ভাঙবে এটি এখন সবার মনে পরিচিতি লাভ করেছে। এতে আতঙ্কে রয়েছে সিরাজগঞ্জবাসী।
জানা গেছে, সিরাজগঞ্জ শহররক্ষা বাঁধ ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। চলতি বছর পঞ্চমবারের মত আবারো ১৫০ মিটার যমুনা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। গত মঙ্গলবার সকাল থেকে শুরু হওয়া টানা বর্ষণ আর যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধির ফলে হঠাৎ করেই ভাঙন দেখা দেয়। বাঁধ ভাঙনের সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে শত শত মানুষ ঘটনাস্থলে ভীড় জমায়।
গতকাল বুধবার সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী পরিচালক জাকির হোসেন জানান, ধস ঠেকাতে প্রায় ১০ হাজার বালুভর্তি জিওব্যাগ ফেলে ভাঙন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। তিনি আরো জানান, মঙ্গলবার দুপুর থেকে শহর রক্ষা বাঁধের পুরাতন জেলখানা ঘাট এলাকায় এ ধস শুরু হয়। দেড় ঘণ্টার মধ্যেই বাঁধের তিনটি স্থানে প্রায় ১৫০ মিটার নদীতে বিলীন হয়ে যায়। বর্তমানে এর বিস্তৃতি বাঁধের সংযোগ রক্ষাকারী পাকা সড়কে এসে ঠেকেছে। এদিকে বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা বাঁধে ধস নামায় শহরবাসীর মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে আতঙ্ক।
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড অফিস সূত্রে জানা যায়, সিরাজগঞ্জ শহরকে যমুনা নদীর ভাঙন থেকে রক্ষায় বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতু প্রকল্পের আওতায় ১৯৯৭ সালে আড়াই কিলোমিটার দীর্ঘ এই শহররক্ষা বাঁধটি নির্মাণ করা হয়। ৩৭৫ কোটি টাকা ব্যয়ে দক্ষিণ কোরিয়া ভিত্তিক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান হুন্দাই লিমিটেড এই শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করে। নির্মাণকালে এই বাঁধটির স্থায়িত্ব নির্ধারণ করা হয়েছিল একশ বছর। বাঁধটি নির্মাণের পর ১৯৯৭ সালে বাঁধের দায়িত্ব বুঝে নেয় স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড।
একশ বছরের স্থায়িত্ব নির্ধারণ করে নির্মিত এই বাঁধটির নিয়মিত পর্যবেক্ষণের জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হুন্দাই লিমিটেড পানি উন্নয়ন বোর্ডকে পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু নানা অজুহাতে এই বাঁধটি নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ এবং পর্যবেক্ষণ করা হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড দায়িত্ব গ্রহণের ১২ বছর পর ২০০৯ সালের ১০ জুলাই প্রথমবারের মতো এই বাঁধে ধস নামে। এরপর একই বছরের ১৭ জুলাই দ্বিতীয় দফায় ধস নামে। ২০১০ সালের ১৬ জুলাই তৃতীয় দফায় সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা বাঁধে ধস নামে। এরপর ২০১১ সালের ১৮ জুলাই চতুর্থবারের মতো এবং সর্বশেষ ২০২১ সালের ২৯ জুন পঞ্চম বারের মতো এই বাঁধটিতে ধস নামলো। তবে এবারের ধসে মুহূর্তের মধ্যে পাশাপাশি তিনটি স্থানে প্রায় ১৫০ মিটার বাঁধ নদীতে বিলীন হয়েছে।
এদিকে বাঁধ ধসের খবর পেয়ে সিরাজগঞ্জের জেলা প্রশাসক ড. ফারুক আহাম্মদ, পুলিশ সুপার হাসিবুল আলম, জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট কে এম হোসেন আলী হাসান, কেন্দ্রীয় মহিলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ড. জান্নাত আরা তালুকদার হেনরী, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আনোয়ার পারভেজ, জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক একরামুল হকসহ প্রশাসনের কর্মকর্তা এবং জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ ভাঙনস্থল পরিদর্শন করেন।
এ ব্যাপারে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. নাসির উদ্দিন জানান, মঙ্গলবার দুপুর থেকে হঠাৎ করেই শহর রক্ষা বাঁধের পুরাতন জেলখানা ঘাট অংশে ধস দেখা দেয়। মুহূর্তের মধ্যে প্রায় ১২০ মিটার নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোডের্র নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শফিকুল ইসলাম জানান, টানা বর্ষণ ও নদীর পানির তীব্র স্রোতে ঘূর্ণাবর্তের সৃষ্টি হয়ে বাঁধের নিচ থেকে মাটি সরে সিসি ব্লকগুলো ডেবে গেছে। বালুভর্তি জিওব্যাগ ফেলে ভাঙন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। এতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই বলে তিনি আশ্বস্ত করেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন