মুহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান, টেকনাফ থেকে : টেকনাফ বাহারছড়া ইউনিয়নের নোয়াখালীপাড়ায় বন বিভাগের সংরক্ষিত পাহাড় কেটে নিমার্ণ করা হচ্ছে আলিশান দালান বাড়ি। যে বনে গাছ রক্ষা করার কথা যাদের সেই বনকর্মীরাই পাহাড়ের জমি ও গাছ কেটে বিক্রি করে দিচ্ছে এলাকার কাঠচোরদের কাছে। সেই সাথে মোটা টাকায় পকেট ভরে বনবিভাগের গেজেটভূক্ত জমি একে একে তুলে দিচ্ছেন ভূমিদস্যুর হাতে। ফলে একদিকে হারিয়ে যাচ্ছে বন, অন্যদিকে সরকার হারাচ্ছে তার রাজস্ব, সেই সাথে প্রকৃতি হারাচ্ছে তার পরিবেশ।
জানা যায়, টেকনাফ-শামলাপুর এলজিইডি সড়ক এবং মেরিন ড্রাইভ সড়ক নির্মিত হওয়ায় উপকূলীয় এলাকায় এখন জায়গা জমির দাম আকাশচুম্বি। ব্যক্তি মালিকানাধীন জায়গা জমি প্রায় বিক্রি শেষ। এসব জায়গার মালিক এখন দেশী ও বিদেশী ব্যবসায়ীরা। তা উপকূলীয় এলাকায় যে জমি- গত ১৫ বছর আগে বিক্রি হতো ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকা, এখন তা বিক্রি হচ্ছে প্রতি একর ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা। অর্থের লোভে পড়ে অনেকেই ব্যক্তি মালিকানাধীন জমিজমা বিক্রি করে এ সরকারি বনভূমি দখল এবং বাণিজ্যে মেতে উঠেছে। কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের শীলখালী রেঞ্জের অধীন রাজারছড়া বনবিটের দৃষ্টি নন্দন সংরক্ষিত উপকূলীয় বনাঞ্চল ক্রমান্নয়ে বেদখল হয়ে যাচ্ছে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, শীলখালী রেঞ্জের আওতাধীন রাজারছড়া বিটকর্মকর্তারা স্থানীয় বনকর্মী দাবিদার নোয়াখালীপাড়ার মোহাম্মদ হোছন প্রকাশ মাছন এর নেতৃত্বে কাঠচোর ও ভূমিদস্যুর সাথে সখ্য গড়ে তোলে। প্রতিদিন ডিউটির নাম করে কাঠচোর ও ভূমিদস্যুর সাথে আড্ডায় মেতে থাকে। আর সুযোগ বুঝে রেঞ্জ ও বিটকর্মকর্তারা চোরদের গাছকাটার সুযোগ করে দেয়। পরে কাটা গাছের গুড়ি উপরে ফেলে বনের জমি অলিখিতভাবে তুলে দিচ্ছে ভূমিদস্যুদের হাতে। ফলে বনবিভাগের গেজেট ভূক্ত জমিতে দিন দিন গড়ে উঠেছে পানের বরজ, সুপারী বাগান গুদাম ও বাসাবাড়ি। এভাবেই বেদখল হয়ে যাচ্ছে বন বিভাগের জমি।
এদিকে বড়ডেইল মৌজায় বনবিভাগের রোপনকৃত গাছের ৭০ ভাগই চুরি হয়ে গেছে। সরকারি কাগজে কলমে বনবিভাগের বাগান থাকলেও ভূমিদস্যুরা সেইসব জমিতে পানের বরজ করেছেন। সেই সাথে গড়ে তুলছেন অবৈধ স্থাপনা। নোয়াখালীপাড়ার স্থানীয় কতিপয় প্রভাবশালী ও ভূমিদস্যু মো. হোছন প্রকাশ মাছনের নেতৃত্বে সরকারি বনভূমিকে পৈত্রিক সম্পত্তির মত ব্যবহার করে দখল বাণিজ্যের প্রতিযোগিতা চলছে, যেন পর্যটকদের দৃষ্টি নন্দন এবং আকর্ষণীয় এলাকা স্থানীয় ভূমিদস্যুদের দখলে চলে গেলে দেশী ও বিদেশী পর্যটকেরা এতে বিমূখ হবে। তার পাশাপাশি প্রাকৃতিক পরিবেশের মারাত্মক অবনতি ঘটবে, এমন আশংকা করেছেন সচেতন জনসাধারণ।
স্থানীয় প্রভাবশালী মো: হোছন প্রকাশ মাছন কাছে বনবিভাগের জমির উপর বাড়ি নির্মাণ করা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সে জানায়, তার নির্মাণধীন বাড়ির জমি খতিয়ানভূক্ত।
রাজারছড়া বিট কর্মকর্তা আলমগীর কবিরের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, পাবলিক বলে আমার জমি, আমরা বলি সরকারের জমি এ নিয়ে ঝামেলায় আছি ভাই। তবে নেতা মেম্বার সাহেব কে বলেছি তিনি কাগজপত্র দেখে একটা ফয়সালা দিবেন। বনবিভাগের জমি নেতা কিভাবে ফয়সালা দিবেন জানতে চাইলে তিনি উত্তেজিত হয়ে মোবাইলের লাইন কেটে দেন।
উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আহমদ নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন- গাছ চুরি ও জমি বেদখল হয়ে যাওয়া এটা তারা কোন বিষয়ই মনে করেন না, তারা সবসময় নিজেদের পকেট ভারী করতে গরিবের নামে মামলা দিয়ে ধনীদের বাঁচাতে বেশি ব্যস্ত থাকে।
এ বিষয়ে শীলখালী রেঞ্জার জসীম উদ্দিনের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, বন সংক্রান্ত কোন বিষয় হলে আমাকে জানাবেন আমি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিব।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন