শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

কুষ্টিয়া আওয়ামী লীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষে নিহত ২

প্রকাশের সময় : ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

আহত ২৫ : বাড়িঘরে হামলা-ভাঙচুর লুটপাট
কুষ্টিয়া থেকে স্টাফ রিপোর্টার : কুষ্টিয়া সদর উপজেলার ঝাউদিয়া ইউনিয়নে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে আওয়ামী লীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনায় দুইজন নিহত হয়েছে। গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছে। শনিবার সকাল ৬টা থেকে দফায় দফায় ঝাউদিয়া ইউনিয়নের মাছপাড়া গ্রামে বর্তমান চেয়ারম্যান সমর্থক কেরামত আলী সাবেক চেয়ারম্যান বখতিয়ার গ্রুপের মধ্যে এ সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটে।
নিহত দুজন হলেন- ইমান আলী (৩৫) ও শাহাবুুদ্দিন (৪২)। তাদের মধ্যে ইমান আলী ঘটনাস্থলে এবং শাহাবুদ্দিন কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। ইমান আলীর বাড়ি মাছপাড়া ও শাহাবুদ্দিনের বাড়ি বৈদ্যনাথপুর গ্রামে। নিহত দুইজনই বর্তমান চেয়ারম্যান কেরামত আলীর সমর্থক। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে ৮ জন কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। সংঘর্ষ চলাকালে ২০ থেকে ২৫টি বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাট হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঝাউদিয়া পুলিশ ক্যাম্প ইনচার্জ দিলিপ কুমার জানান, সমাজিক দলাদলি ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে শনিবার ভোর থেকে ঝাউদিয়া ইউনিয়নের মাছপাড়া গ্রামে বর্তমান ও সাবেক চেয়ারম্যান সমর্থিত সুজা মেম্বাব ও মজিদ মেম্বার গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ ও গোলাগুলি শুরু হয়। প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী দফায় দফায় এই সংঘর্ষে ঘটনাস্থলে গুলিবিদ্ধ হয়ে ইমাম আলী নিহত ও গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ২৫ জন আহত হয়।
এদিকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক রুহুল আমিন জানান, চিকিৎসাধীন অবস্থায় শাহাবুুদ্দিন নামে একজন মারা গেছে। আশংকাজনক অবস্থায় সেকেন ও আকালেসহ ৬ জন কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি আছে।
স্থানীয়রা জানায়, সদ্য শেষ হওয়া ইউপি নির্বাচনে ঝাউদিয়া ইউনিয়ন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি বখতিয়ার হোসেন। বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে জয়লাভ করেন সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কেরামত আলী। নির্বাচনের পর থেকে বর্তমান ও সাবেক এই দুই চেয়ারম্যানের সমর্থকদের বিরোধ চলে আসছে। এ নিয়ে গত এক সপ্তাহে তিনটি গ্রামে তিনবার সংঘর্ষ হয়েছে। প্রতিনিয়ত হামলা-পাল্টা হামলার ঘটনায় অশান্ত হয়ে উঠেছে ঝাউদিয়া ইউনিয়ন। সর্বশেষ সোমবার রাত ১টার দিকে ইউনিয়নের আলীনগরসহ কয়েকটি গ্রামে হামলায় শতাধিক বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাট হয়।
স্থানীয়রা জানিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে এলাকার আধিপত্য নিয়ে আওয়ামী লীগের দু’গ্রুপ মজিদ মেম্বর ও সুজা মেম্বর গ্রুপের মধ্যে বিরোধ চলে আসছিল। এর জের ধরে সুজা গ্রুপের সমর্থকরা জীবনের ভয়ে এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে যায়। ইউপি নির্বাচনের পর হঠাৎ সুজা মেম্বরের লোকজন এলাকায় বসবাস করার জন্য মজিদ মেম্বরের কাছে আত্মসমর্পণ করার জন্য এলাকায় ফিরে আসে। এ সংবাদ মজিদ মেম্বর জানতে পারলে ক্ষিপ্ত হয়ে হঠে এবং শনিবার ভোর সাড়ে ৬টার দিকে ব্যাগ ভর্তি কাধে আগ্নেয়াস্ত্রের গুলি নিয়ে প্রকাশ্যে মজিদ মেম্বর ও মেহেদেী গুলিবর্ষণ করতে করতে ইমান আলী ও সাহাবুদ্দিনের বাড়ির দিকে যেতে থাকে। পথের মধ্যে ইমান আলীকে দেখা মাত্রই তাকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়লে ইমান আলী আহত অবস্থায় তার বাড়িতে প্রবেশ করে ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়ে। এতেও তার শেষ রক্ষা হয়নি। ইমান আলীকে ঘরের মধ্যে কুপিয়ে এবং গুলি করে হত্যা নিশ্চিত করে। একইভাবে সাহাবুদ্দিনকে গুলি করলে সে মারাত্মক আহত হয়। এ সময় সাহাবুদ্দিনকে উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে আনা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে।
স্থানীয়রা আরো জানায়, মজিদ মেম্বরের সশস্ত্র ক্যাডার বাহিনীর ভয়ে শত শত পরিবার এলাকা ছাড়া হয়েছে। অনেক ঘরবাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাট চালিয়েছে এই ক্যাডারবাহিনীর সদস্যরা। মাছপাড়া গ্রামের রেজাউল ডাক্তার, খাইরুল, আলীনগর গ্রামের গফুর ম-লের ছেলে জিয়া সহ বেশ কিছু ঘরবাড়ি ভাঙচুর করে লুটপাট চালিয়েছে মজিদ সমর্থিতরা। এই ভাঙচুরের সময় জিয়ার বাড়ির আলমারি থেকে নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার, আসবাবপত্রসহ প্রায় ৫ লক্ষাধিক টাকার মালামাল লুট করে। লুটপাট করার সময় বাধা দিলে গফুরের স্ত্রী ও বাড়ির অন্য মেয়েদের বেধড়ক মারপিট করে। অন্যদিকে মাছপাড়া গ্রামের মৃত নবিসদ্দিন ম-লের ছেলে ইসলাম ম-লের ১৪ মণ পাট ও মৃত আকবাদ ম-লের ছেলে আবিছদ্দিন ম-লের ৫ মণ পাট লুটে নিয়ে যায়।
এরই মধ্যে প্রভাব বিস্তার করতে মারধর করেছে মাছপাড়া গ্রামের ফজলু বিশ্বাসের ছেলে আলম, মৃত মনসের-এর ছেলে আয়নদ্দিন, মফিজ উদ্দিনের ছেলে আতিয়ার, মৃত পলানের ছেলে সিরাজুল, মঙ্গল মালিথার ছেলে শামছুল, আলীনগর এলাকার মৃত আজব আলী ম-লের ছেলে ইউনুছ, সরকার পাড়ার রহমানের ছেলে সুজন, মাঠ পাড়ার রুজদারের ছেলে সুজাতসহ বেশ কয়েকজনকে।
এছাড়াও বাড়ি ছাড়া হয়েছে প্রায় শতাধিক পরিবার। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- আক্কাস ম-লের গোষ্ঠী, ইসলাম ম-লের গোষ্ঠী, সোনাউল্লাহ ম-লের গোষ্ঠী, ইজাল ম-লের গোষ্ঠী, আমির ম-লের গোষ্ঠী, আছাল ম-লের গোষ্ঠী ও জালাল ম-ল গোষ্ঠীর লোকজন।
সংঘর্ষের পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন কুষ্টিয়া পুলিশ সুপার প্রলয় চিসিমসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তবে সেখানে এখনো থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। যে কোন মুহূর্তে ফের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশংকা করছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন