রাজস্ব আহরণে অর্ধ লক্ষ কোটি টাকার মাইলফলক অতিক্রম করেছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস। করোনার মহামারীর মধ্যেও রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে প্রায় ২৪ শতাংশ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানিসহ নানা ফাঁক-ফোকরে শুল্ক ফাঁকির অপচেষ্টা কঠোর হাতে প্রতিরোধের ফলে রাজস্ব আদায়ে গতি এসেছে। বিদায়ী ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রায় ৫২ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায় হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা থেকে পিছিয়ে থাকলেও বিগত একদশকে রাজস্ব আহরণে সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। এর আগে বিগত ২০০৯-১০ অর্থ বছরে ২১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়।
এদিকে সাফল্যের এ ধারাবাহিকতায় চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআর চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরভিত্তিক এই রাজস্ব আদায়কারী প্রতিষ্ঠানকে ৬৫ হাজার ৪৩৫ কোটি টাকা রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দিয়েছে। সদ্য বিদায়ী অর্থবছরের শেষদিন ৩০ জুন পর্যন্ত দেশের সিংহভাগ রাজস্ব আহরণকারী এই প্রতিষ্ঠানটি আদায় করেছে ৫১ হাজার ৮৪৪ কোটি ১৫ লাখ টাকা। এর আগে ২০১৯-২০ অর্থবছরের একই সময়ে আদায় হয়েছিলো ৪১ হাজার ৮৫৩ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। অর্থাৎ ২০১৯-২০ অর্থবছরের চেয়ে ২০২০-২১ অর্থবছরে ৯ হাজার ৯৯১ কোটি টাকা বেশি আদায় করেছে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস। ফলে প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ২৩ দশমিক ৭৮ শতাংশ। কাস্টম হাউসের কর্মকর্তারা জানান আজ সোমবার হিসাব চূড়ান্ত করা হবে। এতে রাজস্ব আদায় আরো বাড়তে পারে।
তবে গত বছরের চেয়ে বেশি রাজস্ব আদায় হলেও অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে পিছিয়ে পড়ে কাস্টম হাউস। বিদায়ী অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬৪ হাজার ৩০৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা। সেই হিসাবে ঘাটতি প্রায় সাড়ে ১৩ হাজার কোটি টাকা। লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা না গেলেও করোনা মহামারিতে রেকর্ড প্রবৃদ্ধি অর্জিত হওয়ায় স্বস্তিতে কাস্টম হাউসের কর্মকর্তারা। অর্থবছরের শেষ মাস জুনে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫ হাজার ৪২ কোটি ৪২ লাখ টাকা। তবে আদায় হয়েছে ৬ হাজার ৮০৯ কোটি ১২ লাখ টাকা। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে জুন মাসে এক হাজার ৭৬৬ কোটি ৭০ লাখ টাকা বেশি আদায় হয়েছে। প্রবৃদ্ধি দাঁড়ায় ৩৫ শতাংশ।
কাস্টম হাউস ও আমদানি-রফতানি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনার মধ্যেও দেশের সার্বিক আমদানি-রফতানি সচল রয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে রাজস্ব আহরণে। এর পাশাপাশি রাজস্ব আদায়ে স্বচ্ছতা এসেছে। নানা ফাঁক-ফোকরে শুল্ক ফাঁকির অপচেষ্টাও কমিয়ে আনা হয়েছে। মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানির মাধ্যমে রাজস্ব ফাঁকি এবং বিদেশে অর্থ পাচারের অনেক ঘটনা ধরা পড়ায় অসাধু চক্রের মধ্যে কিছুটা হলেও ভীতি তৈরি হয়েছে। এতে শুল্ক ফাঁকির প্রবণতা তথা চোরাচালান কমেছে। মিথ্যা ঘোষণায় আনা চালানে শুল্ক ফাঁকির ঘটনায় দ্বিগুণ হারে জরিমানা আদায় হয়েছে। ফৌজদারি মামলা এবং বিদেশে অর্থপাচারের অভিযোগে মামলা হয়েছে। এর ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে সার্বিক রাজস্ব আহরণে।
চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের কমিশনার মো. ফখরুল আলম ইনকিলাবকে বলেন, ব্যাপক নজরদারির ফলে আগের তুলনায় অনিয়ম অনেক কমে গেছে। আগে এক একটি মিথ্যা ঘোষণায় আনা চালানে বিপুল অর্থ জড়িত থাকতো। যার কারণে বড় অঙ্কের রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া হতো। এখন অনিয়ম কমে গেছে। কাস্টমসের অনিয়মের দন্ড বিধিতে পরিবর্তন আনা হয়েছে। এখন অনিয়মের কারণে নূন্যতম দ্বিগুণ জরিমানা করা হয়। যা ক্ষেত্র বিশেষে অনিয়মের মাত্রা হিসেবে সর্বোচ্চ চারগুণ করা হয়।
গেল অর্থবছরে বড় ধরনের শুল্ক ফাঁকির ২২টি ঘটনায় ফৌজদারি মামলা হয়েছে। পাঁচটি ঘটনায় অর্থপাচারের মামলা হয়েছে। এতে মিথ্যা ঘোষণায় আমদানির প্রবণতা কমছে। এছাড়া বন্ড ব্যবস্থায় কঠোর অবস্থানের কারণেও রাজস্ব ফাঁকি কমে গেছে। আগে বন্ড সুবিধায় অনেকে কমার্শিয়াল পণ্য আমদানি করে খালাস করতো। এতে সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া হতো। কড়া নজরদারির কারণে এই সুযোগ আর কেউ পাচ্ছে না জানিয়ে তিনি বলেন এ ধারা অব্যাহত থাকলে রাজস্ব আদায় আরো গতিশীল হবে। নতুন অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন