শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

উন্নতির স্বপ্নে মৃত্যুযাত্রা

দেড় বছরে ভূমধ্য সাগরেই উদ্ধার সাড়ে ৫ হাজার বাংলাদেশি নতুন কর্মক্ষেত্র তৈরি করতে না পারায় অবৈধ পথে ইউরোপ, আমেরিকাসহ উন্নত দেশে ঝুঁকছে তরুণরা প্রতিবছর শ্রববাজারে অন্তর্ভূক্ত হচ্ছে ২

ফারুক হোসাইন | প্রকাশের সময় : ৬ জুলাই, ২০২১, ১২:০১ এএম

বিশ্বদরবারে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় যায়গা করে নিয়েছে। স্বল্প উন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের উন্নীত হওয়ার ‘গৌরব’ এখন বাংলাদেশের ঝুলিতে। রিজার্ভ এবং মাথাপিছু আয়ে অনেক দেশকে পেছনে ফেলে সামনের কাতারে। অন্যদিকে ক্ষুধা-জরাগ্রস্ত সোমালিয়া, ইথিওপিয়া, সুদান, সিরিয়ার মতো দেশের তালিকায় উঠছে বাংলাদেশের নাম। কারণ সাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপ-আমেরিকা যাওয়ার পথে বাংলাদেশের প্রচুর শিক্ষিত তরুণ ধরা পড়ছে। দেশে কর্মসংস্থান না থাকায় আফ্রিকার ওই গরিব দেশগুলোার তরুণদের মতোই মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে ‘সুন্দর জীবন গড়তে’ উন্নত দেশে পৌঁছার চেষ্টা করছে, বাংলাদেশের হাজার হাজার তরুণ। মাসের পর মাস মরুভূমি, পাহাড়, বনজঙ্গল, সাগর পাড়ি দিয়ে, জুলুম-নির্যাতন সহ্য করে উন্নত দেশে যাওয়ার চেষ্টা করে কেউ পথেই মারা যাচ্ছে; কেউ ঘরা পড়ে ফিরে আসছে। ভূমধ্যসাগরে ভাসতে ভাসতে বিভিন্ন দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়া বাংলাদেশি তরুণদের নিয়ে আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় প্রতিবেদন ছাড়ানো হচ্ছে। সেসব প্রতিবেদনে অফ্রিকার ওই গরিব দেশগুলোর তালিকায় থাকছে বাংলাদেশের নাম। গত দেড় বছরে ভূমধ্যসাগরে ভাসমান অবস্থায় উদ্ধার সাড়ে ৫ হাজার বাংলাদেশি তরুণ।

বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছাড়িয়ে গেছে ৪৬ বিলিয়ন (৪ হাজার ৬০০ কোটি মার্কিন ডলার)। রিজার্ভ থেকে শ্রীলংকা সরকারকে ২০০ মিলিয়ন বা ২০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ দিচ্ছে সরকার। এশিয়া-প্যাসিফিক অ্যামপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল আউটলুকের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হয়ে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্তিতে জাতিসংঘের চূড়ান্ত স্বীকৃতি পাবে। কিন্তু এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের নিম্ন আয়ের দেশগুলোর মধ্যে সরকারি খাতে কর্মসংস্থান সবচেয়ে কম বাংলাদেশে। অন্যদিকে দেশে তরুণ শ্রমশক্তির উল্লম্ফন ঘটছে। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানিয়েছেন, দেশের জনসংখ্যার ৫০ শতাংশই তরুণ। এছাড়া প্রতিবছর ২০ লাখের বেশি তরুণ শ্রমবাজারে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে। কিন্তু সে শ্রমশক্তিকে যথাযথভাবে কাজে লাগানো যাচ্ছে না। এ ছাড়াও প্রচুর শিক্ষিত তরুণ বেকার থাকছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিপুলসংখ্যক শিক্ষিত তরুণ-তরুণী প্রতিবছর শ্রমবাজারে যুক্ত হলেও তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। সরকারি-বেসরকারি খাতে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির হার অত্যন্ত কম।

দেশে কর্মক্ষেত্রে বন্ধাত্ব চলছে। চাকরির ছোট বাজার, তার ওপর তদবিরবাজি, পদে পদে দুর্নীতি আর হয়রানি। এর মধ্যে বৈশ্বিক মহামারি করোনায় সবকিছুই প্রায় বন্ধ। সামনে অনিশ্চিত এবং বেকার জীবন থেকে বাঁচতে দেশের তরুণ উন্নত জীবনের আশায় স্বপ্নে বিভোর হয়ে মৃত্যু পথ পড়ি দিয়ে যাচ্ছেÑ ইউরোপ, আমেরিকার মতো উন্নত দেশে। অনেকে জমাজমি বিক্রি, ঋণ নিয়ে, ধারদেনা করে টাকা জোগাড় করে বিদেশে যাওয়ার চেষ্টা করেন। প্রত্যাশা বিদেশে গেলেই চাকরি পাবেন বেকারত্বের অবসান ঘটবে। পরিবারের দুঃখ ঘুচবে। যেসব তরুণ দেশ ছেড়ে বিদেশে পাড়ি দিচ্ছে, তাদের বেশিরভাগই শিক্ষিত সম্ভাবনাময়ী তরুণ। শুধু কর্মসংস্থানের সুযোগ না থাকায় তারা দেশ ত্যাগ করছেন বলে মনে করছেন মানবাধিকারকর্মীরা।

প্রবাসীদের নিয়ে কাজ করছেন এমন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কর্মসংস্থানের অভাব আর দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সুফল সমানভাবে সবার কাছে না পৌঁছানোয় নানা প্রলোভনে মানব পাচারকারীদের খপ্পরে পড়ছেন তরুণরা। মানবপাচার বিষয়ে গবেষকরা বলছেন, বৈধভাবে বিদেশে যাওয়ার সীমিত সুযোগ এবং পাচারকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত না হওয়ায় পাচার কমছে না।

জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের সাম্প্রতিক পরিচালন তথ্য অনুয়ায়ী ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত সাড়ে ৫ হাজার জন শুধু বাংলাদেশিকে ভূমধ্যসাগর থেকে উদ্ধার করেছে সংস্থাটি। এর বাইরে লিবিয়া, মেক্সিকো, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, মেসিডোনিয়া, গ্রিসসহ অন্যান্য দেশেও বাংলাদেশি আটক হওয়ার তথ্য পাওয়া যায়। তবে ভূমধ্যসাগরে সবচেয়ে উদ্ধার হওয়া বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের মধ্যে সংখ্যার বিচারে বাংলাদেশের অবস্থান ৪ নম্বরে। যাদের সবাই ইউরোপে প্রবেশের জন্যই বাংলাদেশ থেকে অবৈধ পথে গিয়েছিলেন।

সর্বশেষ গত শনিবারও উত্তর আফ্রিকার দেশ তিউনিশিয়ার উপকূলের কাছে ভূমধ্যসাগরে বাংলাদেশিসহ অভিবাসনপ্রত্যাশীদের বহনকারী একটি নৌকা ডুবে অন্তত ৪৩ জন নিখোঁজ হয়েছেন। লিবিয়া থেকে যাত্রা শুরু করে ইতালি যাওয়ার পথে ভূমধ্যসাগরে ডুবে যাওয়া ওই নৌকার অন্য আরও ৮৪ আরোহীকে উদ্ধার করেছে তিউনিশিয়ার নৌবাহিনী। তিউনিশিয়া রেড ক্রিসেন্ট বলেছে, ডুবে যাওয়া ওই নৌকায় বাংলাদেশ, মিসর, সুদান এবং ইরিত্রিয়ার নাগরিকরা ছিলেন। তারা লিবিয়া থেকে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেওয়ার চেষ্টার সময় নৌকাটি ডুবে যায়।

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে তিউনিশিয়া উপকূলে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের বহনকারী বেশ কয়েকটি নৌকাডুবির ঘটনা ঘটেছে। এর আগে, গত ২৭ জুন লিবিয়া থেকে ইউরোপে যাওয়ার পথে একটি নৌকা ভূমধ্যসাগরে ভেঙে যায়। পরে তিউনিশিয়ার নৌবাহিনী ওই নৌকা থেকে ১৭৮ অভিবাসনপ্রত্যাশীকে উদ্ধার করে। উদ্ধার অভিবাসনপ্রত্যাশীরা বাংলাদেশ, মিসর, ইরিত্রিয়া, আইভরিকোস্ট, মালি, নাইজেরিয়া, সিরিয়া এবং তিউনিসিয়ার নাগরিক। গত ২৪ জুন ভূমধ্যসাগর থেকে ভাসমান অবস্থায় ২৬৭ জন অভিবাসনপ্রত্যাশীকে উদ্ধার করেছে তিউনিসিয়ার কোস্টগার্ড। যার ২৬৪ জনই বাংলাদেশি। ১০ জুন ১৬৪ জন বাংলাদেশিকে তিউনিশিয়া উপকূল থেকে উদ্ধার করে দেশটির কোস্টগার্ড। তারাও ইতালি যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। এ ছাড়া ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি যাওয়ার সময় গত ১৮ মে ৩৬ জন, ২৭ ও ২৮ মে ২৪৩ জন বাংলাদেশিকে উদ্ধার করে তিউনিশিয়ার কোস্টগার্ড। সব মিলিয়ে এই মুহূর্তে তিউনিশিয়ায় কমপক্ষে ৭৫০ জন বাংলাদেশি রয়েছেন।

চলতি বছরে ইউরোপ যাত্রার পরিমাণ আবারও বৃদ্ধি পেয়েছে। এ বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ১৯ হাজার ৮০০ অভিবাসনপ্রত্যাশী ইতালিতে পৌঁছেছেন। গত বছরের একই সময়ে ইতালিতে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের পৌঁছানোর এই সংখ্যা ছিল মাত্র ৬ হাজার ৭০০ বলে জানিয়েছে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর’র তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ১১ হাজারেরও বেশি অভিবাসী অবৈধভাবে ইউরোপে প্রবেশ করতে লিবিয়া থেকে রওয়ানা হয়েছিলেন। গত বছরের প্রথম চার মাসের তুলনায় যা ৭০ শতাংশেরও বেশি। গত ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ মে পর্যন্ত ভূমধ্যসাগরে কমপক্ষে ৭৬০ অভিবাসনপ্রত্যাশীর প্রাণহানি ঘটেছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।

শুধু তিউনিশিয়া নয়, গত ১২ জুন ইউরোপের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের বলকান রাষ্ট্র নর্থ মেসিডোনিয়ায় পৃথক অভিযান চালিয়ে ভ্যান ও ট্রাক থেকে অন্তত ৮২ অভিবাসনপ্রত্যাশীকে আটক করা হয়। যাদের মধ্যে অন্তত ২০ বাংলাদেশি নাগরিক।

স্বপ্নের এই ইউরোপ যাত্রার পথে পথে রয়েছে ভয়ঙ্কর মৃত্যুফাঁদ! আলো-বাতাসহীন কন্টেইনার, গহিন অরণ্য, গভীর সমুদ্র, তপ্ত মরুভূমি পাড়ি দিয়ে ভয়ানক স্বপ্নযাত্রায় পা রাখছে অনেক বেকার যুবক। ভয়াবহ এই স্বপ্নযাত্রায় সর্বস্ব বিক্রি করে দালালদের হাতে তুলে দিচ্ছেন শেষ সম্বল। কেউ কেউ অবৈধ পথে স্বপ্নের ঠিকানায় পৌঁছাতে পারলেও অধিকাংশই হন ভাগ্যাহত। কারো কারো সলিল সমাধি হয় নৌকাডুবিতে। কেউ প্রাণ হারায় অনাহারে-অর্ধাহারে, নানা রোগশোকে। যাতে বিপর্যস্ত হওয়াসহ পথে বসছে পরিবার। মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও জীবনে স্বপ্নের হরিণ ধরতে ঝুঁকি নিয়ে ইউরোপে প্রবেশ করছে বাংলাদেশিরা।

গত সাত বছরে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপ যেতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ৬ হাজার ৯০৬ জন। ইউরোপীয় কমিশনের পরিসংখ্যানবিষয়ক দফতর ইউরোস্ট্যাটের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১০-১৯ পর্যন্ত এক লাখেরও বেশি বাংলাদেশি ইউরোপের দেশগুলোতে অবৈধভাবে প্রবেশ করেছে।

কয়েক বছর আগে সাগরপথে মালয়েশিয়া পাঠানোর সময় কয়েকশ’ বাংলাদেশির সলিল সমাধি ঘটলে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছিল। একই রকম চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয় থাইল্যান্ডের জঙ্গলে শত শত বাংলাদেশির গণকবর আবিষ্কৃত হওয়ার ঘটনায়।

এরই মধ্যে করোনাভাইরাসের বৈশ্বিক মহামারির কারণে চারদিকে বাড়ছে অভাব আর হতাশা। গত বছরের মার্চে দেশজুড়ে লকডাউন ঘোষণার পর কর্মসংস্থান হারিয়ে হাজার হাজার মানুষ নাম লিখিয়েছিলেন বেকারের খাতায়। করোনাকালে বিরাটসংখ্যক নিম্নধ্যবিত্ত তথা স্বল্প আয়ের মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে গেছেন। অর্থনীতিবিদদের মতে, এই সংখ্যা আড়াই কোটির মতো। আইএলওর গবেষণার তথ্য হলো করোনা মহামারির কারণে সবচেয়ে ঝুঁকিতে তরুণ প্রজন্ম। ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সিদের মধ্যে ২৪ দশমিক ৮ শতাংশই বেকার হয়েছেন। গবেষণায় দেখা যায়, তরুণদের মধ্যে বেকারত্বের হার দ্বিগুণ। তাই প্রাণঘাতী ঝুঁকি-বিপত্তির পরও অবৈধ অভিবাসন প্রক্রিয়া বন্ধ হচ্ছে না।

মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ইউরোপের মতো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও অবৈধ পথে প্রবেশের চেষ্টা করছেন অনেক বাংলাদেশি। ২০১৮ সালের অক্টোবরে মেক্সিকোর দুর্গমপথে প্রায় ২০০ বাংলাদেশি আটক হন। তাদের গন্তব্য ছিল যুক্তরাষ্ট্র। এ পথে অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে দেশটির জেলে বন্দি ৩৯১ জন বাংলাদেশি। জানা গেছে, মেক্সিকোর সীমান্ত এলাকায় মার্কিন সীমান্তরক্ষী বাহিনী ১৯৯০ সাল থেকে গত বছর পর্যন্ত ২৯ বছরে প্রায় ছয় হাজারেরও বেশি লাশ উদ্ধার করেছে। তবে, এর মধ্যে কতজন বাংলাদেশি, তার সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই। ২০১৮ সালে মার্কিন ফেডারেল কোর্টের তথ্য অনুযায়ী, ওই বছরের প্রথম চার মাসে মেক্সিকো সীমান্ত দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের সময় দেশটির সীমান্তরক্ষীর হাতে ধরা পড়েছেন ১৭১ বাংলাদেশি। যাদের সবাইকে যুক্তরাষ্ট্রের জেলে বন্দি করে রাখা হয়।

ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব মাইগ্রেশন, মেক্সিকো (আইএনএম) এবং ইউএস কাস্টমস অ্যান্ড বর্ডার প্রটেকশন এজেন্সির তথ্য অনুযায়ী, ২০১১ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত এই সাত বছরে অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে যথাক্রমে ১৪৯, ১৬৭, ৩২৮, ৬৯০, ৬৪৮, ৬৯৭ ও ১২০ বাংলাদেশি আটক হন। তাদের ভাগ্যে কী ঘটেছে সে সম্পর্কিত সুস্পষ্ট কোনো ধারণা কারও নেই। ২০১৮ সালে জানা গিয়েছিল, দালালের মাধ্যমে ইউরোপে ঢোকার চেষ্টা করে লিবিয়ার কারাগারে বন্দি জীবন কাটাচ্ছেন ২৮০ জন বাংলাদেশি।

এ প্রসঙ্গে বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের অভিবাসন বিভাগের প্রধান শরিফুল হাসান বলেন, ইউরোপে অবৈধভাবে প্রবেশের ক্ষেত্রে অন্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের নাম আসায় তা আন্তর্জাতিকভাবে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে। মধ্য আয়ের দেশসহ বিভিন্নভাবে বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিং করা হলেও যুদ্ধ চলমান দেশগুলোর মানুষের অবৈধভাবে প্রবেশের সঙ্গে বাংলাদেশিরা কেন প্রবেশ করছে, আন্তর্জাতিক ফোরামে তার উত্তর দিতে আমাদের বেগ পেতে হয়।

বাংলাদেশ মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার পরও এতো বিপুলসংখ্যক মানুষ দেশ ছাড়ার কারণ হিসেবে কর্মসংস্থানের সঙ্কটকে দায়ী করছেন সমাজবিজ্ঞানীরা। তারা বলেন, দেশের তরুণরা মনে করেন বিদেশে গেলে দেশের চেয়ে উন্নত জীবন পাবেন। রাজনৈতিক অস্থিরতা, সামাজিক ও অর্থনৈতিকসহ সার্বিক পরিস্থিতির কারণে দেশের প্রতি তাদের নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হচ্ছে। তাই যেকোনভাবেই কোন দেশে ছেড়ে উন্নত কোন দেশে স্থায়ী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন তারা। আর এই সুযোগকে কাজে লাগাচ্ছে দালালচক্র। সমাজবিজ্ঞানীরা মনে করেন, এই অবস্থার পরিবর্তন করতে হলে তরুণদের কাজের সুযোগ দিতে হবে, দালালচক্র যারা পাচারের সাথে জড়িত তাদেরকে নির্মূল করতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর রাশেদা ইরশাদ নাসির বলেন, যারা অবৈধ পথে বিদেশ যাত্রায় পা পাড়াচ্ছেন তাদের বেশিরভাগই উন্নত জীবন গড়ার স্বপ্ন দেখছেন। মনে করছেন ইউরোপ, আমেরিকার দেশগুলোতে গেলে ভাগ্য পরিবর্তন হবে। অনেকের ক্ষেত্রে সেটি হচ্ছে, কারো কারো ভাগ্য তো ভূমধ্যসাগরের চিত্রই বলে দিচ্ছে। এর জন্য সংশ্লিষ্টদের দায়ও আছে বলে তিনি মনে করেন।

অভিবাসন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করা ব্যারিস্টার সাবরিনা জেরিন বলেন, যারা নানা কাজ আর উচ্চ বেতনের কথা বলে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে অবৈধভাবে লোক পাঠায়, তারা আসলে নিজেরাই জানে না ওইসব দেশে কোনো ধরনের লোকের কাজের বা থাকার-সুবিধা আছে। তারা আসলে পুরো কাজটাই করে প্রতারণার জন্য। মানুষকে ঠকিয়ে টাকা আয় করার জন্য। সাবরিনা জেরিন বলেন, না জেনে, না বুঝে ঝাঁপ দেয়া ঠিক না। নিজের দক্ষতা আর যোগ্যতা বিবেচনা করেই ইউরোপে অভিবাসী হওয়ার চেষ্টা করতে হবে। অবৈধভাবে প্রবেশ করলে অনেক ক্ষতির মুখে পড়তে হতে পারে।

অভিবাসন বিশেষজ্ঞ ব্যারিস্টার আব্দুল হালিম বলেন, সমস্যা হচ্ছে, বাংলাদেশিদের একটি বড় অংশ, যারা ইউরোপে যেতে চান, তার ইংরেজি পড়তে পারেন না বা বুঝতে পারেন না। আবার অন্যান্য বিদেশি ভাষাও তারা জানেন না। ফলে এখানকার এজেন্সিগুলো নানা ভুয়া তথ্য দিয়ে তাদের ফুঁসলিয়ে নানা প্রলোভন দেখিয়ে ফাঁদে ফেলে। এখানে বাংলাদেশের অভিবাসন মন্ত্রণালয়েরও অনেক দায় আছে বলে মনে করেন আব্দুল হালিম।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রফেসর ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, যারা মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার রুট ধরে অবৈধ পথে ইউরোপ যেতে চায় তাদের বেশিরভাগই আগে মধ্যপ্রাচ্য যায় সেখান থেকে পরবর্তীতে ইউরোপ যাওয়ার চেষ্টা করে। এ কাজে দেশীয় দালালদের সাথে আন্তর্জাতিক দালালচক্রও জড়িত। তাই দালালচক্রকে ধরতে না পারলে এটি বন্ধ হবে না।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (10)
Mohammed Fareed ৫ জুলাই, ২০২১, ১২:৩৮ এএম says : 2
আমরা যারা অবৈধ পথে আসি,দায় আমাদের সরকারের কিছুই করার নাই। দেখেন, অনেকেই বাংলাদেশ থেকে না আসতে পারি, ভারত হয়ে এসেছে,শুধু সরকার কে দায়ী করে কি লাভ?
Total Reply(0)
Mohammed Fareed ৫ জুলাই, ২০২১, ১২:৩৮ এএম says : 6
আমরা যারা অবৈধ পথে আসি,দায় আমাদের সরকারের কিছুই করার নাই। দেখেন, অনেকেই বাংলাদেশ থেকে না আসতে পারি, ভারত হয়ে এসেছে,শুধু সরকার কে দায়ী করে কি লাভ?
Total Reply(0)
Rafiq Islam ৫ জুলাই, ২০২১, ১২:৪০ এএম says : 0
লিবিয়ার পরিস্থিতি কি যারা লিবিয়ায় আছে একমাএ তারাই বোঝে।
Total Reply(0)
Nandini Nihar ৫ জুলাই, ২০২১, ১২:৪০ এএম says : 0
বিদেশে গিয়ে মরার চেয়ে দেশে রিকশা চালানো অনেক ভাল, আসলে আমরা বিদেশে ছোট কাজ করে খাই,কিন্তু দেশে ছোট কাজকে ছোট নজরে দেখি।
Total Reply(0)
Saidul Islam ৫ জুলাই, ২০২১, ১২:৪১ এএম says : 0
অবৈধভাবে যেই যাবে অন্য কোন দেশে তার জন্য কোন প্রকার মায়াকান্না বন্ধ করতে হবে। এদের দেখে শিক্ষা নিতে হবে যারা অবৈধভাবে বিদেশে যেতে চায়।
Total Reply(0)
Abul Kalam ৫ জুলাই, ২০২১, ১২:৪১ এএম says : 0
বারবার অবৈধ বাবে দালালের খপ্পরে পডে লখ্ক লখ্ক টাকা হারিয়ে নিজের জীবন বিস্জন দিতেচে তবুও যায় লোভে পাপ পাপে মৃত্য পিতামাতার সকল আশা শেষ করে।
Total Reply(0)
Shafique Ullah ৫ জুলাই, ২০২১, ১২:৪২ এএম says : 0
দেশে ক্ষেতি কাজ করলেও তো দেশটা এগিয়ে যেতো। যেখানে ধান কাটার লোক পাওয়া যায় না।
Total Reply(0)
Shamol Khan ৫ জুলাই, ২০২১, ১২:৪২ এএম says : 0
দেখেন সরকারের জনগনের প্রতি কোন দায়বদ্ধতা নেই। কারন জনগনের ভোট তাদের প্রয়োজন হয় না।
Total Reply(0)
Zahid Hasan Palash ৫ জুলাই, ২০২১, ১২:৪৪ এএম says : 0
অবৈধ পথে বিদেশ গিয়ে মারা গেছে, এদের জন্য আজ আমরা লজ্জিত।
Total Reply(0)
Eqram Chowdhury ৫ জুলাই, ২০২১, ১২:৪৫ এএম says : 0
আমার মাথায় ঢো‌কেনা। বি‌দে‌শে যাওয়ার জন‌্য টাকা দি‌য়ে দালাল ধরার দরকার কি? ঐ টাকা দি‌য়ে মান সম্মত ব‌্যবসা ক‌রে বি‌দে‌শে যা আয় কর‌বে, এখা‌নে তার দিগুণ আয় কর‌তে পার‌বে। আস‌লে, যারা বিপদ কাঁ‌ধে নি‌য়ে বি‌দে‌শে টাকা খরচ ক‌রে যাওয়ার জন‌্য পাগল, তা‌দের‌কে বুঝা‌বে কে। য‌দি শখ চা‌পে বি‌দে‌শে যাওয়া, তাহ‌লে টু‌রিষ্ট ভিসা নি‌য়ে বি‌দেশ ঘু‌ড়ে আস‌তে পা‌রে। আস‌লে দালাল চিনা খুব মুস‌কিল।
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন