শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

এবার অনলাইন পশুর হাটই নিরাপদ

ফারুক হোসাইন | প্রকাশের সময় : ৬ জুলাই, ২০২১, ১২:০০ এএম

সারা দেশে করোনাভাইরাসের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে। মৃত্যু ও শনাক্তের সংখ্যায় নতুন নতুন রেকর্ড ছুঁইছে। এমন পরিস্থিতিতে পবিত্র ঈদ-উল-আজহা উদযাপিত হবে। এ উপলক্ষ্যে সাধারণত হাটে গিয়ে কোরবানির পশু কেনাকাটাও এক প্রকার উৎসবের মতোই থাকে। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে গতবছরের মতো এবারও ভীড় এড়িয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কেনাকাটার পরামর্শ দিয়েছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। বরং ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের কারণে হাটের পরিবর্তে ডিজিটাল হাটকেই এবার সবচেয়ে বেশি নিরাপদ মনে করছেন তারা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল সোমবার (২৪ ঘণ্টার পরিসংখ্যান) করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন ১৬৪ জন। যা এ পর্যন্ত একদিনে সর্বোচ্চ সংখ্যক মৃত্যুর ঘটনা। শনাক্তের দিক দিয়েও এদিন সর্বোচ্চ সংখ্যক ৯ হাজার ৯৬৪ জন। এমন পরিস্থিতিতে আগের মতো কোরবানির পশুর হাট, গাদাগাদি, ভীড়, সারাদেশ থেকে বিপুল সংখ্যক বেপারি পশু নিয়ে রাজধানীতে আসা-যাওয়াকে করোনা সংক্রমণের জন্য আশঙ্কাজনক মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

তারা বলছেন, করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট দেশের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতেই সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ ছড়াচ্ছে। আর কোরবানীর সময় দেশের সীমান্তবর্তী জেলা বিশেষ করে- কুষ্টিয়া, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, যশোর, মাগুরা, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, নওগাঁ, বগুড়া, জয়পুরহাট, দিনাজপুর, নাটোর। এরবাইরে মাদারিপুর, শরিয়তপুর, মুন্সিগঞ্জসহ আরও বেশি কয়েকটি জেলা থেকে রাজধানীর বিভিন্ন পশুর হাটে গরু-ছাগল বিক্রির জন্য নিয়ে আসেন খামারি, বেপারিরা। টেস্ট ছাড়াই করোনা সংক্রমণে উর্ধ্বোমুখী এসব জেলা থেকে পশু নিয়ে রাজধানীর হাটগুলোতে আসা মানুষের গাদাগাদি করে অবস্থান, পশু কিনতে বিপুল সংখ্যক মানুষের উপস্থিতি ও ভীড় করোনা ছড়ানোর সবচেয়ে উপযোগী বলে মনে করা হয়। বরং করোনা মহামারির এই সময়ে অনলাইন মাধ্যমে পশু কেনাকাটা করাকেই সবচেয়ে নিরাপদ মনে করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও তথ্য-প্রযুক্তিবিদরা।

এফবিসিসিআই’র সভাপতি জসিম উদ্দীন বলেন, প্রযুক্তির ছোঁয়ায় দেশের ব্যবসা বাণিজ্যের ধরণ বদলে যাচ্ছে। করোনার এই দুঃসময়ে হাটে না গিয়ে ঘরে বসে কোরবানি পশু অনলাইনে কেনাকাটা করা জনসাধারণের জন্য একটি আর্শীবাদ। করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় এটিই এখন অনলাইনে পশু কোনকাটাকেই সবচেয়ে নিরাপদ মনে করেন তিনি। জনগণকে এর সুফলের কথা জানিয়ে দেয়ার জন্য তিনি অনুরোধ করেন।

বিগত কয়েকবছর ধরেই ঢাকা ও চট্টগ্রামে অনলাইনে কোরবানির পশু কেনাবেচা শুরু হয়েছে। কিন্তু করোনা পরিস্থিতি এটি ছড়িয়ে দিয়েছে সারাদেশেই। রাজধানী থেকে জেলা-উপজেলা শহরেও অনলাইনে বসছে কোরবানির পশুর হাট। খামারি-কৃষকরা তাদের পালিত পশু ডিজিটাল প্লাটফর্মে তুলে ধরছেন, ক্রেতারা ঘরে বসেই কিনে নিচ্ছেন পছন্দের গরু-ছাগল। আর গতবছর থেকে কেন্দ্রীয়ভাবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) উদ্যোগে চালু হয়েছে ‘ডিজিটাল হাট’। তাদের সঙ্গে তথ্য-প্রযুক্তি বিভাগ, ই-ক্যাব এবং বাংলাদেশ ডেইরি ফার্ম অ্যাসোসিয়েশন যৌথভাবে এই ডিজিটাল হাট বাস্তবায়ন করছে। এছাড়াও বিভিন্ন জেলা প্রশাসন অনলাইন হাটের উদ্যোগ নিয়েছে। বিভিন্ন খামারির ব্যক্তিগত উদ্যোগে চলছে ই-হাট, কোরবানির গরুর মেলা। এসব হাটে ঘরে বসেই লাখ লাখ কোরবানির পশু দেখতে পারবেন ক্রেতারা। পছন্দ হলে এক ক্লিকেই কিনতেও পারবেন তারা। কেনার পর বিক্রেতারাই পৌঁছে দিবেন বাড়িতে।

ডিএনসিসির ডিজিটাল হাট, বিক্রয় ডটকম, বেঙ্গল মিট, কিউকম ডটকম, ডিজিটাল হাট, দারাজ গরুর হাট, প্রিয়শপ, দেশি গরু, মাদল, হেক্সা ট্রেডিং, ই-বাজার, অথবা ডটকম, সদাগর, আজকের ডিলসহ বেশ কয়েকটি অনলাইন হাটে দেখা যায় কোরবানির জন্য পশু বিক্রির ছবি দেয়া আছে প্রতিটি সাইটে। এর সাথে পশুর বিবরণ, কোন স্থানে রয়েছে, কিভাবে প্রতিপালন করা হয়েছে, পশুর মালিক খামারি, কৃষক ও ফার্মের সাথে যোগাযোগের নাম্বারসহ প্রয়োজনীয় সকল তথ্য। সেখানে অর্ডার করলেই বিক্রেতারাই হোম ডেলিভারির ব্যবস্থা করবেন। এক্ষেত্রে কোন কোন অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ডেলিভারি চার্জ নিচ্ছে, কোন কোনটি আবার ফ্রি ডেলিভারি দিচ্ছে।

ই-ক্যাবের তথ্য অনুযায়ী, গতবছর চালু হওয়া ডিএনসিসি ডিজিটাল হাট থেকে বেচাকেনা হয়েছে ২৭ হাজার গরু-ছাগল ও অন্যান্য পশু। আর অনলাইন থেকে ছবি দেখে পরে সরাসরি কৃষকের বাড়ি ও খামার থেকে ৯০ হাজারের বেশি গরু কিনেছেন ক্রেতারা। এর মধ্যে ডিজিটাল হাট এবং এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মার্চেন্ট ও ই-ক্যাব সদস্যদের অনলাইনে প্ল্যাটফর্মে বিক্রি হওয়া গরু, ছাগল ও ভেড়ার সংখ্যা ৬ হাজার ৮০০। জেলাভিত্তিক সরকারি প্ল্যাটফর্মে কমপক্ষে ৫ হাজার ৫০০ গরু-ছাগল বিক্রি হয়েছে। বাংলাদেশ ডেইরি ফার্ম অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যভুক্ত কোম্পানির অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে বিক্রি হয়েছে প্রায় ৯ হাজার এবং ফুড ফর নেশন থেকে চার হাজার কোরবানির পশু। এছাড়াও অন্যান্য প্ল্যাটফর্ম থেকে আরও ৫০০ গরু বিক্রি হয়েছে বলেও জানায় ই-ক্যাব। এবার শুধু ডিএনসিসি ডিজিটাল হাট থেকেই এক লাখের বেশি গরু বিক্রির টার্গেট করা হয়েছে।

বাংলাদেশ ডেইরী ফার্ম এসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ ইমরান হোসেন বলেন, ডিএনসিসি’র ডিজিটাল হাট ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ের স্বার্থ সুরক্ষায় কাজ করবে। এটা উভয়ের জন্য নিরাপদ। ক্রেতাদের সঠিক পশু দেয়া যেমন নিশ্চিত করা হবে তেমনি বিক্রেতার পাওনাও নিশ্চিত করা হবে। পাশাপাশি স্লটারিং সেবার মাধ্যমে ঘরে ঘরে মাংস প্রক্রিয়াকরণ করে পাঠানো হবে। বর্তমানে আমাদের ৫০০ স্লটারিং সেবা দেয়ার সক্ষমতা রয়েছে। চাহিদার উপর ভিত্তি করে আমরা ১ হাজার গরু জবাই করে বাসায় ডেলিভারী দিতে পারব। আমাদের লক্ষ্যমাত্র ঢাকায় ৫০ হাজার এবং দেশব্যাপী বিভিন্ন প্লাটফর্ম থেকে ১ লাখ পশু বিক্রি করা।

ই-ক্যাবের সভাপতি শমী কায়সার বলেন গতবার ৪৫টি মেম্বারসহ মোট ৬০ জন মার্চেন্ট এবং এবার ই-ক্যাব ও ডেইরী ফার্ম এসোসিয়েশন মিলে ১০০এর বেশী মার্চেন্ট। গতবছর দেশব্যাপী ২৭ হাজার গরু বিক্রি হয়েছে। কিন্তু এবার তা আরো অনেক বাড়বে বলে আমরা মনে করি।

ই-ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াহেদ তমাল বলেন, বিগত বছরগুলোর তুলনায় এবার অনলাইনে পশু বিক্রি হচ্ছে অনেক বেশি। খুশির খবর হচ্ছে শুধু রাজধানী বা বড় শহরগুলোতেই নয়, উপজেলা পর্যায়েই অনলাইনে কেনাকাটায় অভ্যস্ত হচ্ছে মানুষ। তিনি বলেন, আমরা ৬৪ জেলা প্লাটফর্মগুলো সরকারের সহযোগিতা পেলে এর সাথে যুক্ত করতে চাই।

তথ্য ও যোগাযোগ-প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ইতোমধ্যে প্রতিটি জেলায় কোরবানী পশু বিক্রির প্লাটফর্ম তৈরী হয়েছে। সব প্লাটফর্মকে একই সূত্রে গেঁথে মানুষকে জানিয়ে দিতে হবে।

মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেন, করোনার ভয়াবহ পরিস্থিতিতে জনসমাগম থেকে দূরে থাকা সবচেয়ে প্রয়োজন। এ পরিস্থিতিতে অনলাইনে কোরবানির গরু ক্রয়-বিক্রয়ের সুযোগ রাষ্ট্রের জন্য, সরকারের জন্য বড় সহায়ক।

স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, করোনা মহামারী থেকে সুরক্ষা পেতে মানুষ বড় ধরনের একটা সহযোগিতা পাবে অনলাইনে পশু ক্রয়ের মাধ্যমে।#

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন