মঙ্গলবার, ২৮ মে ২০২৪, ১৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৯ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

যাত্রাবাড়ী-কদমতলী কি লকডাউনমুক্ত?

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৮ জুলাই, ২০২১, ১২:০১ এএম

রাজধানীর যাত্রাবাড়ী ও কদমতলী এলাকা কী লকডাউনমুক্ত? এমন প্রশ্ন যে কেউ করতে পারেন এখানকার জনসমাগম ও রিকশা, ভ্যান, ইজিবাইক ও গাড়ি চলাচল দেখে। যাত্রাবাড়ী পাইকারী আড়ৎ থেকে শুরু করে শনিরআখড়া, গোবিন্দপুর বাজার, মুরাদপুর, জুরাইন এলাকায় রাস্তায় মানুষ আর মানুষ। পাড়া মহল্লায় দিনে রাতে চলছে বখাটে ও উঠতি বয়সীদের আড্ডা। নিষিদ্ধ ব্যাটারিচালিত রিকশা, ইজিবাইকের ভিড়ে পাড়া-মহল্লা, অলি-গলিতে যানজট লেগেই থাকে। কঠোর বিধি-নিষেধের মধ্যেও এমন অবস্থায় সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত।

গতকাল বুধবার সকালে এই দুই থানা এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, কঠোর বিধি-নিষেধের মধ্যেও সব কিছু স্বাভাবিক নিয়মেই চলছে। ভোর থেকে যাত্রাবাড়ী পাইকারী আড়তে খুচরা বিক্রেতাদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। হাজার হাজার মানুষের ভিড়ে মুখরিত পাইকারী বাজারে আসা বেশিরভাগ ক্রেতা বিক্রেতাকে মাস্ক ব্যবহার করতে দেখা যায় নি। শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার মতো পরিবেশ সেখানে চোখে পড়েনি। শনিরআখড়া ও গোবিন্দপুর বাজারেও একই অবস্থা। হাজার হাজার মানুষের ভিড় দেখে বোঝার উপায় নেই এখানে কোনো বিধি-নিষেধ আছে।

জানতে চাইলে বেশ কয়েকজন বিক্রেতা বলেন, মানুষ বাজারে আসবেই। এখানে আবার কিসের লকডাউন? শনিরআখড়া বাজারে আবুল বাশার নামে এক ক্রেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, জীবন জীবিকার জন্য বাজারে আসতে হয়। কিন্তু এখানে যে অবস্থা তাতে ভয় লাগে। কেউ কোনো নিয়ম মানে না। মানানোর চেষ্টাও নেই। তিনি বলেন, আমি ফাঁকে ফাঁকে থেকে যতোদূর সম্ভব নিজেকে রক্ষা করার চেষ্টা করেছি। গোবিন্দপুর বাজারের মিজানুর রহমান নামে একজন ক্রেতা বলেন, এখানে লকডাউন বলে কিছু নেই। গত বছরও ছিল না। তিনি বলেন, গত বছর কঠোর লকডাউনের মধ্যে এই গোবিন্দপুর বাজার নিয়ে বিদেশি টেলিভিশন মিডিয়া রিপোর্ট করে হৈ চৈ ফেলে দিয়েছিল। তারপরেও এখানকার প্রশাসনের এতটুকু টনক নড়েনি।

দনিয়া এলাকায় দেখা গেছে, ব্যাটারিচালিত রিকশার জট। শত শত রিকশার ভিড়ে রাস্তা আটকে গেছে। মানুষ চলাচলের পথও বন্ধ। ধোলাইপাড় থেকে শনিরআখড়া বাজার পর্যন্ত চলাচল করছে শত শত ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক। জুরাইন ও মুরাদপুরে অবাধে চলছে ইজিবাইক। সেগুলোতে গাদাগাদি করে যাত্রী তোলা হচ্ছে। দনিয়া এলাকার বাসিন্দারা জানান, বর্ণমালা স্কুল রোডে উঠতি বয়সী কিশোর গ্যাংয়ের আড্ডা লেগে থাকে মধ্যরাত পর্যন্ত। গতকাল বেলা ১২টার দিকেও বর্ণমালা স্কুল রোডে অনামিকা ভবনের সামনে ১৫/২০ জন যুবককে আড্ডা দিতে দেখে কেউ একজন নিষেধ করায় তারা রীতিমতো তেড়ে আসে। সেখানকার একজন দোকানদার বলেন, ওদেরকে আড্ডা দিতে নিষেধ করার ক্ষেপে গেছে। তিনি জানান, যারা এখানে প্রতিদিন আড্ডা জমায় তারা কেউই এই এলাকার নয়। পাটেরবাগ, মুরাদপুর, সুত্রাপুর, রায়েরবাগ এলাকা থেকে এসে অনামিকা ভবনের সামনে আড্ডা দেয়। শনিরআখড়া জিয়া সরণীতে কয়েকজন পুলিশকে ইজিবাইক চলাচলে বাধা দিতে দেখা গেছে। তবে কিছুক্ষণ পর পুলিশ চলে গেলে আবার সেগুলো চলাচল শুরু হলে রাস্তায় যানজটের সৃষ্টি হয়। কয়েকজন অভিযোগ করে বলেন, লকডাউনে পুলিশের পোয়াবারো হয়েছে। তাদের উপরি আয় বেড়েছে। বিনা কারণে ঘোরাঘুরির জন্য পুলিশ আটক করছে ঠিকই। কিন্তু তাদেরকে শাস্তি না দিয়ে টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। তবে যারা মোবাইল কোর্টের সামনে পড়ছে তাদের রেহাই মিলছে না।

কয়েকজন ভুক্তভোগি বলেন, আইজিপি বলেছিলেন, কঠোর বিধি-নিষেধের মধ্যে যন্ত্রচালিত কোনো রিকশা চলাচল করতে পারবে না। কিন্তু যাত্রাবাড়ী-কদমতলী থানা এলাকায় লকডাউনের মধ্যে এসব রিকশা অবাধে চলছে। তাও পুলিশের চোখের সামনেই। এটা কি করে সম্ভব? খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কঠোর বিধি-নিষেধের মধ্যে শত শত ইজিবাইক, ব্যাটারিচালিত রিকশা চলছে পুলিশকে টাকা দিয়েই। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কদমতলী থানার ওসি জামাল উদ্দিন মীর ইনকিলাবকে বলেন, সরকারি বিধিনিষেধ মানার জন্য টহলের পাশাপাশি চেকপোস্ট বসিয়েও দায়িত্ব পালন করছে পুলিশ। তারপরও প্রয়োজন ছাড়া যেসব মানুষ রাস্তায় বের হচ্ছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে এবং এলাকায় সচেতনা কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।

লকডাউন অমান্য করে লোকজন রাস্তায় ভিড় ও কিশোর গ্যাং সদস্যদের আড্ডার ব্যাপারে তিনি বলেন, যেসব এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা আড্ডা দেয় সেইসব এলাকায় সব সময় পুলিশ টহল দেয়। তারপরও যদি কিশোর গ্যাং সদস্যদের ব্যাপারে কোনো তথ্য আমাদের কাছে আসে তা হলে দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন ওসি।

যাত্রাবাড়ী থানার ওসি মো. মাজহারুল ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন, লকডাউন পালনের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো হচ্ছে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকায় চেকপোস্ট বসিয়ে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে অকারণে ঘোরাফেরা করার দায়ে অনেকের বিরুদ্ধে মামলাও করা হয়েছে।
ব্যাটারিচালিত রিকশার ব্যাপারে তিনি বলেন, কদমতলী এলাকায় কয়েকটি গ্যারেজ রয়েছে। ওইসব গ্যারেজ থেকে রিকশাগুলো অনেক সময় যাত্রাবাড়ী এলাকায় আসে। তবে গ্যারেজগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হলে ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধ হয়ে যাবে।

এদিকে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইন ডিরেক্টর ও মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম গতকাল করোনা বিষয়ক বুলেটিনে বলেছেন, দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের যে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, সে অনুযায়ী জুলাই মাসের সংক্রমণ গত জুন এবং এপ্রিল মাসকে ছাড়িয়ে যাবে। রোগীর সংখ্যা দিনদিন এভাবে বাড়লে সামনে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে। এমনকি অক্সিজেন সরবরাহেও চ্যালেঞ্জ তৈরি হবে। বিধি-নিষেধ না মেনে এভাবে চলতে থাকলে যাত্রাবাড়ী-কদমতলী থানা এলাকায় করোনা ভয়াবহ রুপ ধারণ করতে পারে বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের আশঙ্কা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (8)
MD Kalim Khan ৮ জুলাই, ২০২১, ১২:৫৩ এএম says : 1
বাহিরে না বের হলে বুঝতে পারবানা ভাই,আজ সাভার গিয়েছিলাম অনেক যানজট দেখলাম।
Total Reply(0)
A R Shohel Shohel ৮ জুলাই, ২০২১, ১২:৫৩ এএম says : 1
অবৈধ সরকারের লকডাউন / শাটডাউন জনগণ কোনটাই মানে না ।।। মিডনাইট সরকার, মাফিয়া সরকার।।
Total Reply(0)
Ariful Islam Sakil ৮ জুলাই, ২০২১, ১২:৫৩ এএম says : 1
আমাদের কদমতলী সন্ধ্যার পর করোনা বাড়ে। আর দিনে করোনা কম থাকে।
Total Reply(0)
Shamiul Alim Shagur ৮ জুলাই, ২০২১, ১২:৫৩ এএম says : 1
সরকার দেয় লকডাউন পুলিশ দেয় শোডাউন নেতা ভরে গোডাউন গরিবের পকেট ডাউন ইহা ডিজিটাল শার্টডাউন
Total Reply(0)
MD Mydul Islam Sawon ৮ জুলাই, ২০২১, ১২:৫৪ এএম says : 0
দেখেতো তাই মনে হয়
Total Reply(0)
Skd Apu ৮ জুলাই, ২০২১, ১২:৫৪ এএম says : 0
কঠোর লকডাউনে জটিল জট...!!!
Total Reply(0)
Akm Kamal Uddin ৮ জুলাই, ২০২১, ১২:৫৫ এএম says : 0
লক ডাউনে সহসা করোনা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে কিনা? যে সকল স্বাস্হ বিশেষজ্ঞর পরামর্শে লক ডাউন দেওয়া হয়, তাদের কাছে এ প্রশ্ন?
Total Reply(0)
মোঃ+দুলাল+মিয়া ৮ জুলাই, ২০২১, ২:৩৬ এএম says : 0
বিজনেসের লকডাউন,অন্যথায় একেক জায়গায় একেক রকম কি জন্য।
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন