ইনকিলাব ডেস্ক : তার অর্থ এই যে, নিজের কার্যক্রম বাস্তবায়নে হিলারিকে এক অস্থিতিশীল রিপাবলিকান পার্টির সাথে অভিন্ন ক্ষেত্র খুঁজে পাওয়া দরকার যাদের কংগ্রেসে সম্মিলিত লক্ষ্য হচ্ছে তাকে অপদস্থ করা। তবে রাজনৈতিক খুঁত সত্ত্বেও হিলারি আসন বিভক্তকারী রেখার ওপারে পৌঁছানোর অসাধারণ ক্ষমতা প্রদর্শন করেছেন।
২০০১ সালে হিলারি যখন নিউইয়র্ক থেকে সিনেটর হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন তখন রিপাবলিকান নেতারা তাদের ককাসকে এমন কিছু না করার জন্য হুশিয়ার করে দেন যা তার জন্য ভালো দেখায়। তা সত্ত্বেও সিনেট সশস্ত্রবাহিনী কমিটির সদস্য হিসেবে জটিল সামরিক বিষয়গুলোতে তার দক্ষতা প্রদর্শন করে সিনেটর জন ম্যাককেইনের মতো রিপাবলিকানদের শ্রদ্ধা অর্জন করেন।
সিনেটর হিসেবে তার স্থায়ী সাফল্যগুলোর মধ্যে রয়েছে ৯/১১-র প্রথম সাড়া দাতাদের দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য মনিটরিংয়ের জন্য কেন্দ্রীয় তহবিল, রিজার্ভিস্ট ও ন্যাশনাল গার্ডের জন্য সামরিক সুবিধার সম্প্র্রসারণ এবং শিশুদের জন্য চিকিৎসা নিরাপত্তা উন্নয়নে ওষুধ কোম্পানিগুলোর জন্য আইন। তিনি কৃষক, হাসপাতাল, ছোট ব্যবসা ও পরিবেশগত প্রকল্পের অর্থ বরাদ্দের জন্য লড়াই করেছেন। ইরাক যুদ্ধের পক্ষে ভোট তার জন্য একটি কালো দাগ, কিন্তু তার কৃতিত্ব হচ্ছে ইতিহাস পুনর্লিখনের চেষ্টার বদলে তিনি তার চিন্তা-ভাবনা ব্যাখ্যা করেছেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে তার দায়িত্ব ছিল বুশ প্রশাসনের ৮ বছরের কর্তৃত্ববাদের পর আমেরিকার বিশ^াসযোগ্যতার পুনঃপ্রতিষ্ঠা। বিশেষ করে লিবিয়াসহ ওবামা প্রশাসনের পররাষ্ট্র-নীতির ব্যর্থতার দায়ভােেরর অংশ তিনিও বহন করেন। তবে তার অর্জনও গুরুত্বপূর্ণ। তিনি ইরানের বিরুদ্ধে অবরোধ জোরদারের উদ্যোগে নেতৃত্ব দেন যা শেষ পর্যন্ত ইরানকে তার পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনার টেবিলে বসতে বাধ্য করে। ২০১২ সালে তিনি ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধ বিরতির আলোচনায় সাহায্য করেন।
হিলারি ক্লিনটন মিয়ানমারের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক নবায়নের উদ্যোগে নেতৃত্ব দেন, তিনি মিয়ানমার সামরিক জান্তাকে রাজনৈতিক সংস্কার গ্রহণে তাগাদা দেন। তিনি চীনের প্রতি গুরুত্বপূর্ণ তুল্যবাণিজ্য শক্তি এবং এশিয়াকে শক্তিশালী করতে ওবামা প্রশাসনের এক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান আন্তঃপ্রশান্ত মহাসাগরীয় অংশীদারিত্ব বৃদ্ধিতে সাহায্য করেন। এই চুক্তির ব্যাপারে নির্বাচনী বছরে দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন তার কিছু সমর্থককে বিভ্রান্ত করেছে, কিন্তু শ্রমিকদের অধিকারের সাথে বাণিজ্যকে শক্তিশালী করতে তার অন্তর্নিহিত অঙ্গীকার নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। রাশিয়ার সাথে সম্পর্ক উন্নয়নে তার চেষ্টা সাফল্যের কাছাকাছি না গেলেও প্রতিদ্বন্দ্বী পারমাণবিক শক্তির সাথে মিথস্ক্রিয়া উন্নয়নে তা ছিল এক যৌক্তিক প্রচেষ্টা।
তিনি নিজেকে সেই বাস্তববাদী হিসেবে প্রদর্শন করেছেন যার বিশ^াস যে আমেরিকা কোনোভাবেই মহাসাগর ও দেয়ালগুলোর পিছনে প্রত্যাহার করতে পারে না, বরং তাকে অবশ্যই আত্মবিশ^াসের সাথে বিশে^ তার নিজ স্বার্থ রক্ষা করতে হবে এবং তার মূল্যবোধের প্রতি সৎ হতে হবে যার মধ্যে রয়েছে দারিদ্র্য ও নিপীড়ন থেকে রক্ষা পেতে অন্যদের সাহায্য করা।
হিলারি ক্লিনটনের স্বামী বিল ক্লিনটন যে সময় আমেরিকা শাসন করেছেন সে যুগকে দেখতে এখন আশাবাদী ও ভদ্র যুগ বলে মনে হয়। সে সময় ¯œায়ু যুদ্ধের অবসান এবং প্রযুক্তি ও বাণিজ্যের উন্নয়ন বিশে^র জন্য অশুভ কিছুর বদলে সম্ভাবনাকেই জাগ্রত করছিল বলে মনে হচ্ছিল। সে দিনগুলোতে নিউজ মিডিয়া, দেশের এবং প্রশাসনের অনেকেই প্রেসিডেন্ট ক্লিনটনের কেলেংকারিজনিত ইমপিচমেন্ট উদ্যোগের ঘটনায় বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছিলেন। সে সময়টাতেই সন্ত্রাসী হুমকি বৃদ্ধি পাচ্ছিল। আমরা এখন সেই হুমকির বাস্তবায়ন ও তার বহুমুখী ফলাফলে অন্ধকার এক বিশে^ বাস করছি।
এ দু’ আমলেই হিলারি সেবার সময় বিস্তৃত। তিনি তিনজন প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে কঠোর শিক্ষা লাভ করেছেন যাদের তিনি কাছ থেকে দেখেছেন। তিনি তার নিজের ভুলের দায়ও বহন করেছেন। তিনি গোপনীয়তার প্রতি দুঃখজনক অবহেলা প্রদর্শন করেছেন এবং পররাষ্ট্র দফতরে থাকাকালে বেসরকারি ইমেইল সার্ভারের উপর নির্ভর করার অনুচিত সিদ্ধান্ত নেন। এ সিদ্ধান্ত পরীক্ষা করা উচিত ছিল। পরবর্তী প্রেসিডেন্টকে যেসব প্রকৃত চ্যালেঞ্জ ঘিরে ধরবে সেগুলোর বিবেচনায় এ ইমেইল সার্ভারের বিষয়টি যা নির্বাচনী প্রচারণার অনেকখানি জুড়ে আছে, তা এখন হেল্প ডেস্কের মতো বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং এ সব চ্যালেঞ্জের বিরুদ্ধে দেখলে ট্রাম্প তার আসল ছোট পর্দার মধ্যে সংকুচিত হয়ে আছেন, রিয়েলিটি শো’র আনুপাতিকতায় যার বিশদ রূপটি সোমবার দেখা যেতে পারে।
যুদ্ধ ও মন্দা সত্ত্বেও ৯/১১-র সময় জন্মগ্রহণকারী আমেরিকানদের দ্রুত বেড়ে উঠতে হয়েছে এবং তারা একজন পরিণত প্রেসিডেন্টকেই চায়। বাস্তব পৃথিবীতে সমস্যা সমাধানের আজীবনের অঙ্গীকার হিলারি ক্লিনটনকে এ পদের জন্য যোগ্য করেছে এবং দেশের উচিত তাকে কাজ করতে দেয়া। সূত্র নিউইয়র্ক টাইমস। (শেষ)
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন