ভোর হতে না হতেই শুরু হয়ে যায় কিচিরমিচির গান। শহরের বুকে দোকানের সামনে অসংখ্য শালিক পাখির ওই শব্দে ঘুম ভাঙতেই হবে। প্রতিদিন তেমনটি ঘটছে পাবনা শহরে।
পাবনা শহরে ভোরের আলো ফুটতেই শতশত ক্ষুধার্ত শালিক কিচিরমিচির শুরু করে দেয়। করোনাকালে দোকানের দরজা খুলে শালিক পাখির মুখোমুখি হতে হয় সমর কুমার ঘোষকে। তবে হাতে থাকে খাবারের পাত্র। আর সেই পাত্রের দিকে চোখ থাকে সকল শালিক পাখির।
শালিকের ঝাঁক খাবরের জন্য ভিড় করে সমরের মিস্টির দোকানের সামনে। এ সময় ঝুড়িভাজা নিয়ে দোকানের সামনে আসতেই শালিকের ঝাঁক তাকে ঘিরে ফেলে। তখন পরম মমতায় পাখীদের খাবার দেয় সমর। প্রায় এক দশক ধরে শালিকের জন্য সকালে খাবারের আয়োজন করেন সমর ঘোষ।
তিনি জানান, শালিক দল বেধে ভোর হলেই তার কাছে ছুটে আসে। চারদিক থেকে তাকে ঘিরে ধরে। করোনায় রেস্তোরাঁ বন্ধ থাকলেও নিয়ম করে সমরের অপেক্ষাতেই চেয়ে থাকে এই পাখিগুলো। পরমত মমতায় আগলে রাখা পাখিগুলোকে কখনোই হতাশ করেন না সমর।
করোনার ঝুঁকি থাকলেও ঘরবন্দি দিনগুলোতে নিয়মিত কেবলই শালিকের জন্য খাবারের ব্যবস্থা অব্যাহত রেখছেন। এই পাখী প্রেম তাকে এনে দিয়েছে সরকারি বেসরকারি অনেক পুরুষ্কারও। তার সাথে এসব পাখীর রয়েছে নিবিড় ভালোবাসার সম্পর্ক। সমর কুমার ঘোষ গতকাল ইনকিলাবকে বলেন, শালিক পাখি আমার কাছে সন্তানের মত। অবুঝ ক্ষুধার্ত পাখির দল পাশে বসে পরম তৃপ্তির সাথে খাবার খায়। ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু করে একটি দিনের জন্যও খাবার দেওয়া বন্ধ করিনি। প্রতিদিন প্রায় ১৫ থেকে ২০ কেজি চানাচুর খায় এসব শালিক। সমর ঘোষ আরো বলেন, ওরা খাবারের জন্য তার পথ চেয়ে থাকে। ওরা খাবারের জন্য আপন নীড় থেকে উড়ে এসে ফিরে যাবে এটা ভাবতেই কষ্ট হয়। তাই করোনার ঝুঁকি থাকলেও ওদের মুখে খাবার তুলে দেই। ওরা জানে, প্রতিদিন সকালে দোকানের সামনে এলেই খাবার পাওয়া যাবে।
স্থানীয় অনেকেই বলেছেন, পাখির প্রতি এমন ভালোবাসা সত্যিই অপূর্ব। কয়েক বছর ধরে শালিক পাখি দল বেধে এসে খাবার খেয়ে আবার উড়ে তারা নিজেদের গন্তব্যে ফিরে যায়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন