শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

পশ্চিমবঙ্গে গ্রেফতার ফারুক ত্রিশালে জঙ্গি ছিনতাইয়ের ‘হোতা’-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

প্রকাশের সময় : ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গে গ্রেফতার জেএমবি সদস্য আনোয়ার হোসেন ফারুকই ত্রিশালে প্রিজন ভ্যান থেকে আসামি ছিনতাইয়ের ‘হোতা’ ফারুক হোসেন ওরফে জামাই ফারুক ।
গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলা কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, ভারতে দু’দিন আগে গ্রেফতার ছয় জঙ্গির মধ্যে আর কেউ বাংলাদেশী থেকে থাকলে আসামি প্রত্যার্পণ চুক্তির আওতায় তাদের ফিরিয়ে আনা হবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, সেই ফারুক যদি হয়ে থাকে, তাহলে আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে, ২০১৪ সালে ময়মনসিংহের ত্রিশালে প্রিজন ভ্যান থেকে কনস্টেবলকে হত্যা করে পালিয়ে গিয়েছিল জঙ্গিরা। সে ঘটনার হোতা ফারুক। তার নামে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, কলকাতায় জেএমবি নেতা ফারুক গ্রেফতার হওয়ার খবর এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে পাওয়া যায়নি। তবে ময়মনসিংহের ত্রিশালে পুলিশ হত্যা করে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনার মূল হোতা এই ফারুকই যদি ভারতে গ্রেফতার জেএমবি নেতা ফারুক হয়, তাহলে তো আমাদের জন্য বড় খবর। তবে তাকে গ্রেফতারের খবর আমরা এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে পাইনি। এ জন্য হয়তো আরো দু-একদিন অপেক্ষা করতে হবে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভারতের সঙ্গে আমাদের চুক্তি আছে। চুক্তি অনুযায়ী, বাংলাদেশে ওয়ারেন্টভুক্ত আসামিকে তারা ফেরত দেবে। এই ফারুক সেই ফারুক হলে ভারতের সঙ্গে আমাদের চুক্তি অনুযায়ী তাকে দেশে ফিরিয়ে আনা যাবে।
প্রসঙ্গত, কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্কফোর্স গত শনি ও রোববার পশ্চিমবঙ্গ ও আসাম থেকে ফারুকসহ ছয়জনকে গ্রেফতার করে, যাদের মধ্যে চারজন ২০১৪ সালে বর্ধমানের খাগড়াগড়ে বিস্ফোরণের ঘটনায় অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি। ভারতীয় পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, আনোয়ার হোসেন ফারুক ওরফে ইনাম জেএমবির পশ্চিমবঙ্গ শাখার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। বনগাঁওয়ের বাগদা রোড থেকে রোববার তাকে আটক করে পুলিশ।
ওই ছয়জনের কাছ থেকে বিস্ফোরক, ডেটোনেটর, জাল পরিচয়পত্র, ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন এবং বাংলাদেশী ও ভারতীয় মুদ্রা পাওয়া গেছে বলেও জানানো হয় কলকাতা পুলিশের পক্ষ থেকে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সে যদি হয়ে থাকে আমাদের কাছে একটা গুরুত্বপূর্ণ খবর। আমরা যতটুকু জেনেছি সেই (ফারুক) ধরা পড়েছে।
তবে ভারত এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়ে কোনো তথ্য দেয়নি জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, সেজন্য আরও অপেক্ষা করতে হবে। এটা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আসবে।
২০১৩ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি ত্রিশালের সাইনবোর্ড এলাকায় প্রিজন ভ্যানে হামলা চালিয়ে পুলিশ হত্যা করে জেএমবির শূরা সদস্য রাকিবুল হাসান ও সালাউদ্দিন সালেহীন ওরফে সানি (৩৮) এবং বোমা বিশেষজ্ঞ মিজানকে (৩৫) ছিনিয়ে নেয়া হয়। পালানোর পথে ওই দিনই মির্জাপুরে গ্রেফতার হন রাকিবুল হাসান। পরে পুলিশের সঙ্গে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন তিনি। বাকি দু’জনের কোনো খোঁজ না পেয়ে বাংলাদেশের পুলিশ তাদের ধরিয়ে দেয়ার জন্য পাঁচ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করে। পরের বছর বর্ধমানে বিস্ফোরণের ঘটনায় জেএমবির নাম আসার পর তদন্ত করতে ঢাকায় আসে ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থা এনআইএ-এর একটি প্রতিনিধিদল। সে সময় বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে সন্দেহভাজনদের নামের একটি তালিকা দেন তারা, যাতে সানি, মিজান ও ফারুকের নামও আসে।
গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তারা সে সময় বলেছিলেন, জেএমবির একটি অংশের নেতা মাওলানা সাঈদুর রহমান কারাগারে থাকায় ওই অংশের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন ‘জামাই ফারুক’। তিনিই ত্রিশালে জঙ্গি ছিনতাইয়ের মূল পরিকল্পনায় ছিলেন বলে পুলিশের সন্দেহের কথাও বলা হয় সে সময়।
কলকাতা পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, গ্রেফতার ছয় জঙ্গি পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলোতে জেএমবির স্লিপার সেল চালাচ্ছিল। তারা সেখানে হামলার পরিকল্পনা করছিল বলেও তদন্তকারীদের ধারণা। গ্রেফতার ওই ছয়জনের মধ্যে তিনজন বাংলাদেশী বলে কয়েকটি পত্রিকার খবরে বলা হয়।
এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, আমাদের সঙ্গে ভারতের একটা চুক্তি হয়েছে যেকোনো ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি সেখানে পালিয়ে গিয়ে থাকলে আমাদের ফেরত দেবে। বাকি দু’জনের ব্যাপারে বিস্তারিত জানা যায়নি। তবে তারাও ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি ছিল বলে শুনেছি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, আসন্ন দুর্গাপূজা ও আশুরা উপলক্ষে দেশে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি বলেন, সারাদেশে গতবারের চেয়ে এবার ৩শ’ বেশি পূজাম-প হবে। শারদীয় দুর্গা উৎসবে প্রতিমা তৈরি, পূজা, প্রতিমা বিসর্জনসহ সব ক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। উৎসব নির্বিঘেœ করতে আমাদের কোনো ঘাটতি থাকবে না।
তিনি বলেন, ম-পের আকার ও অবস্থান বিবেচনা করে ৪ থেকে ৮ জন করে আনসার সদস্য সার্বক্ষণিকভাবে নিয়োজিত থাকবে। এছাড়া মেট্রোপলিটন এলাকায় মেট্রোপলিটন পুলিশ, জেলায় জেলা পুলিশ এবং সীমান্ত এলাকায় পুলিশ, আনসার এবং বিজিপি নিয়োজিত থাকবে।
বিসর্জন ১১ অক্টোবর এবং আশুরা ১২ অক্টোবর হওয়ার কারণে যাতে দুই ধর্মের লোকদের মধ্যে কোনো ধরনের ভুল বোঝাবুঝি না হয় সে জন্য সবাইকে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে উদযাপন করতে সংশ্লিষ্টদের বলা হয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন