কূটনৈতিক সংবাদদাতা
সুন্দরবনের পাশে রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদুৎ প্রকল্প নির্মাণে বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনা বাতিলের জন্য ইউনেস্কোর সুপারিশকে সমর্থন করেছে জাতিসংঘ। নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান, জাতিসংঘ মহাসচিবের সহকারী মুখপাত্র ফারহান হক। নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় গত সোমবার জাতিসংঘের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে মহাসচিব বান কি মুনের মুখপাত্র ফারহান হক রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রসঙ্গে বলেন, ইউনেস্কো রিপোর্টের বাইরে এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য নেই।
এছাড়া সম্প্রতি সরকার কর্তৃক ৩৫টি নিউজ পোর্টাল বন্ধ করে দেয়ার বিষয়ে অপর এক প্রশ্নের জবাবে ফারহান হক বলেছেন, বাংলাদেশে সংবাদমাধ্যমের অধিকার সমুন্নত দেখতে চায় জাতিসংঘ। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের ন্যায় আমরা বাংলাদেশে সংবাদমাধ্যমের অধিকার সমুন্নত দেখতে চাই।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ-ভারত যৌথ উদ্যোগে রামপাল কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়ে সম্প্রতি উদ্বেগ জানায় ইউনেস্কো। সংস্থাটির দাবি, এই বিদ্যুৎ প্রকল্প সুন্দরবনের পাশাপাশি হুমকিতে ফেলবে স্থানীয়দের জীবনযাত্রা। বদলে যাবে পুরো এলাকার চিত্র, যা পরিবেশ বিপর্যয়ের পাশাপাশি অর্থনৈতিক নানা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেবে। ইউনেস্কোর এই প্রতিবেদনে পূর্ণ সমর্থন জানায় জাতিসংঘ। এদিকে সরকার জানিয়েছে, আগামী সপ্তাহে ইউনেস্কোর প্রতিবেদনের জবাব দেয়া হবে।
উল্লেখ্য, ইউনেস্কোর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রামপাল প্রকল্পের পরিবেশগত প্রভাব সমীক্ষা প্রতিবেদন (ইআইএ), প্রকল্পের নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী পাওয়ার কোম্পানির বক্তব্য এবং দরপত্রের নথির মধ্যে বেশ কিছু অসঙ্গতি পাওয়া গেছে। গত মার্চে ইউনেস্কোর ৩ সদস্যের প্রতিনিধিদলকে বাংলাদেশ সফরের সময় সীমিতসংখ্যক বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ দেয়া হয়েছে। স্থানীয় জনগণের সঙ্গে কথা বলার যে সুযোগ দেয়া হয়েছে, তা কোম্পানির লোকেরা সংগঠিত করেছে।
প্রকল্প বাতিল করার যৌক্তিকতা তুলে ধরতে ইউনেস্কো চারটি ঝুঁকির কথা প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে। ঝুঁকিগুলো হচ্ছে বায়ুুদূষণ, পানিদূষণ, জাহাজ চলাচল বেড়ে যাওয়া এবং প্রকল্প এলাকায় শিল্প-কারখানা ও অবকাঠামো নির্মিত হলে পুঞ্জীভূত দূষণ।
এছাড়া রামপালের জন্য যে পরিবেশগত প্রভাব সমীক্ষা করা হয়েছে, তা সঠিকভাবে হয়নি মন্তব্য করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সুন্দরবনের সম্ভাব্য ক্ষতি মোকাবিলায় বিদ্যুৎ প্রকল্পটিতে বাজারে সহজলভ্য ও সবচেয়ে ভালো প্রযুক্তি আনা হচ্ছে না। সর্বোচ্চ আন্তর্জাতিক মানও বজায় রাখা হচ্ছে না।
রামপালে নির্মিতব্য ১৩২০ মেগাওয়াট মৈত্রী সুপার থার্মাল বিদ্যুৎকেন্দ্রটি সুন্দরবনের বিশ্ব ঐতিহ্য এলাকা থেকে ৬৫ কিলোমিটার ও মূল সুন্দরবনের ১৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। বিদ্যুৎ প্রকল্পের কয়লার ছাই বাতাসে মিশে সুন্দরবনে দূষণ ঘটাবে। বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে নির্গত ছাইসহ দূষিত পানি বনের নদীতে পড়েও দূষণ ঘটাবে। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, গত দেড় শ’ বছরে সুন্দরবনের আয়তন অর্ধেকেরও বেশি কমে গেছে। এই বন থেকে লোনা পানি এলাকার হরিণ, বুনো মহিষ, জাভান জলহস্তি, হগ হরিণ, বনগরু ও মাগার কুমির বিলুপ্ত হয়ে গেছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন