চট্টগ্রাম ব্যুরো : বঙ্গবন্ধুর ছবি বিকৃতির অভিযোগে সরকার দলীয় সংসদ সদস্য এম এ লতিফের বিরুদ্ধে গতকাল (মঙ্গলবার) আরও দু’টি মামলা হয়েছে। রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় দায়েরকৃত দু’টি মামলা তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
এ নিয়ে লতিফের বিরুদ্ধে চারটি মামলা হলো। চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম ফরিদ আলমের আদালতে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে মামলা করেন মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য এ কে এম বেলায়েত হোসেন। একই আদালতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন ২০০৬ (সংশোধিত ২০১৩) এর ৫৭ ধারায় অন্য মামলাটি করেন সাবেক যুবলীগ নেতা সাইফুদ্দিন রবি।
বাদির আইনজীবীরা জানান, আদালত ৫৭ ধারার মামলাটি তদন্ত করে ১৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে নগরীর পাঁচলাইশ থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন। রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে থানার ওসিকে নির্দেশ দেন আদালত।
বেলায়েত হোসেনের আইনজীবী রনি কুমার দে বলেন, বঙ্গবন্ধুর ছবি বিকৃত করে এম এ লতিফ এমপি সংবিধান বিরোধী কাজ করেছেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে। একজন গ্রাফিক ডিজাইনারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে তিনি (লতিফ) এর দায় স্বীকার করিয়েছেন। অথচ ওই ডিজাইনার একদিন আগে গণমাধ্যমে বলেছিলেন লতিফ সাহেবের তত্ত্বাবধানেই এ কাজ হয়েছে।
মামলার বাদী বেলায়েত হোসেন আদালত চত্বরে সাংবাদিকদের বলেন, এম এ লতিফ বঙ্গবন্ধুর ছবি বিকৃত করে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধ করেছেন, তার বিচার করতে হবে।
এদিকে একই আদালতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে আরেকটি অভিযোগ করেছেন সাবেক যুবলীগ নেতা সাইফুদ্দিন রবি। তিনি বলেন, এই ব্যানার-ফেস্টুন তৈরিতে যারা জড়িত তারা জামায়াত ও বিএনপির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। এই অভিযোগে তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হয়েছে এম এ লতিফের সহযোগী মো. আমজাদ, চট্টগ্রাম চেম্বারের কর্মচারী রাজীব দাশ এবং অ্যাডফার্ম হায়দার প্রিন্টার্সের চিফ ডিজাইনার কবির হোসেন বাবুর বিরুদ্ধে। সাইফুদ্দিন রবি আইনজীবী মোসলেহ উদ্দিন চৌধুরী শাহীন বলেন, চারজনের নাম উল্লেখ করে আরও অজ্ঞাত ২০-২৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে। আমজাদ হোসেন জামায়াতের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলাও আছে। তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা ধারায় সর্বোচ্চ শাস্তি ১৪ বছরের সাজা।
গত ৩০ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চট্টগ্রাম সফরের আগে লতিফের নির্বাচনী এলাকায় (বন্দর, কাঠগড় ও পতেঙ্গা) সড়কের পাশে কয়েক ডজন বিলবোর্ড-ফেস্টুন লাগানো হয়। এসব বিলবোর্ডে বঙ্গবন্ধুর দাঁড়ানো অবস্থার একটি ছবি এবং এম এ লতিফের নামে দেওয়া বক্তব্য ছিল।
ছবি বিকৃতির অভিযোগে আওয়ামী লীগে তোলপাড় শুরু হয়। এমপি লতিফের বিরুদ্ধে সমাবেশ-মিছিল-মানববন্ধন কর্মসূচিতে নেমে পড়ে আওয়ামী লীগের একাংশ। বিলবোর্ড-ফেস্টুনে ছবি বিকৃত করে জাতির জনকের অবমাননা করার অভিযোগে লতিফের বিরুদ্ধে গত বৃহস্পতিবার মামলা করেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক উপ-পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক আবদুর রহিম জিল্লু। একই দিন আরেকটি আদালতে আওয়ামী লীগের এই সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে হাজার কোটি টাকার মানহানির মামলা করেছিলেন সাবেক যুবলীগ নেতা সাইফুদ্দিন রবি। ওই মামলাটি গোয়েন্দা পুলিশকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। লতিফের বিরুদ্ধে করা আবদুর রহিম জিল্লুর মানহানির মামলার তদন্ত করতে রোববার পুলিশের তদন্ত ব্যুরোকে (পিবিআই) নির্দেশ দিয়েছেন চট্টগ্রামের আদালত।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন