অর্থনৈতিক রিপোর্টার : রেলের উন্নয়নে ২০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ দিচ্ছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। এ জন্য গতকাল রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলনকক্ষে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) যুগ্ম-সচিব সাইফুদ্দিন আহমদ এবং এডিবির পক্ষে বাংলাদেশের আবাসিক মিশনের চিফ ইনচার্জ ইয়োসিনোবি টাটেওয়াকি।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে জানানো হয়, রেলপথ মন্ত্রণালয় এ প্রকল্পের উদ্যোগী মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ রেলওয়ে বাস্তবায়নকারী সংস্থা। প্রকল্পের মোট প্রাক্কলিত ব্যয় ২৯৪ মিলিয়ন ডলার। তার মধ্যে এডিবি ২০ কোটি মার্কিন অর্ডিনারী ক্যাপিটেল রিসোর্সেস (ওসিআর) ঋণ প্রদান করবে। অবশিষ্ট ব্যয় বাংলাদেশ সরকারের নিজস্বখাত হতে অর্থায়ন করা হবে। এ লক্ষ্যে, বাংলাদেশ রেলওয়ের জন্য মিটার গেজ ও ব্রড গেজ প্যাসেঞ্জার ক্যারেজ সংগ্রহ এবং বাংলাদেশ রেলওয়ের জন্য লোকোমোটিভ, রিলিফ ক্রেন এবং লোকোমোটিভ সিমুলেটর সংগ্রহ শীর্ষক দুটি উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) ইতোমধ্যেই অনুমোদিত হয়েছে।
এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য হচ্ছে বাংলাদেশ রেলওয়ের দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২৫০টি যাত্রীবাহী কোচ, ১০টি ডিজেল চালিত লোকোমোটিভ, ৪টি রিলিফ ক্রেইন, ২টি ট্রেন ওয়াশিং প্লান্ট এবং লোকো-মাস্টার ট্রেনিং এর জন্য ১টি সিমুলেটর সংগ্রহ করা। এর ফলে আধুনিক, নিরাপদ ও মানসম্পন্ন যাত্রীবাহী গাড়ি পরিচালনার মাধ্যমে যাত্রীসেবা প্রদান, পুরান ও মেয়াদ উত্তীর্ণ গাড়ি প্রতিস্থাপন, যাত্রীবাহী গাড়ির স্বল্পতা দূরীকরণ, ট্রেন পরিচালনার ক্ষেত্রে সময়ানুবর্তিতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, ভ্রমণ সময় কমিয়ে আনা, নতুন ট্রেন পরিচালনার মাধ্যমে যাত্রী সাধারণের চাহিদা বৃদ্ধি করা এবং রেলওয়ের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে।
এডিবির সহজ শর্তের ঋণ (ওসিআর) ৫ বছর গ্রেস পিরিয়ডসহ ২৫ বছরে পরিশোধ করতে হবে। সুদের হার লন্ডন ইন্টার ব্যাংক অফার্ড রেটের (লাইবোর) সঙ্গে শূণ্য দশমিক ৫ শতাংশ (স্প্রেড) ও ম্যাচুরিটি প্রিমিয়াম শূণ্য দশমিক ১ শতাংশ। তাছাড়াও অবিতরণকৃত ঋণের উপর শূণ্য দশমিক ১৫ শতাংশ কমিটমেন্ট চার্জ আরোপ হয়। এ পর্যন্ত বাংলাদেশকে এডিবি ঋণ সহায়তার পরিমাণ প্রায় ১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
শিল্প-বাণিজ্যে প্রতিষ্ঠানের লাভের ৪ শতাংশ কর্মকর্তা কর্মচারীদের বণ্টন করুন- শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী
স্টাফ রিপোর্টার : শিল্প-বাণিজ্যে প্রতিষ্ঠানের লভ্যাংশের ৪ শতাংশ মালিক ছাড়া সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে সমহারে বণ্টনের আইনি বিধানটি কার্যকর করতে সরকার উদ্যোগী হয়েছে বলে জানিয়েছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু। গতকাল বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নতুন সদস্যদের বরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বিধানটি ব্যাখ্যা করে বলেন, যে কোনো শিল্প ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, দুই কোটি টাকার উপরে যাদের মূলধন বা ৩ কোটি টাকার উপরে যাদের সম্পদ, তাদের বার্ষিক লাভের ৫ শতাংশ কর্মকর্তা কর্মচারীদের জন্য। গণমাধ্যমে কর্মরতরাও এই সুবিধা পাবেন। শ্রম আইন অনুসারে, কোনো প্রতিষ্ঠান ১ কোটি টাকা লাভ করলে তার পাঁচ শতাংশের ৮০ ভাগ ওই প্রতিষ্ঠানের মালিক ছাড়া কর্মকর্তা কর্মচারীরা সমান ভাগে ভাগ করে নেবেন। বাকি ২০ ভাগের মধ্যে ১০ ভাগ ওই প্রতিষ্ঠানের কল্যাণ ট্রাস্টে আর বাককি ১০ ভাগ শ্রম মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়ার নিয়ম রয়েছে।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি জামাল উদ্দীনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানের সঞ্চালনায় ছিলেন সাধারণ সম্পাদক রাজ্ ুআহমেদ। বক্তব্যে রাখেন সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ মুহাম্মদ জামাল হোসাইন।
মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, “মেঘনা পেট্রলিয়াম কিছু দিন আগে আমাদের দুই কোটি টাকা দিয়ে গেছে। তার মানে আরও ২ কোটি টাকা তাদের কল্যাণ ফান্ডে গেছে। বাকি ১৬ কোটি টাকা ওই প্রতিষ্ঠানের পিয়ন থেকে শুরু করে মালিক ছাড়া বাকি সবাই সমহারে ভাগ করে নিয়েছে। একজন ৫-৭ লাখ করে পেয়েছে। বেতনের চেয়েও বেশি পেয়েছে।”
গ্রামীণ ফোণ ঘোষিত লভ্যাংশের কল্যাণ ফান্ডের অংশ হিসেবে মন্ত্রণালয়ে ২০ কোটি টাকা দিয়েছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “তার মানে ১৬০কোটি টাকা গ্রামীণের কর্মচারী-কর্মকর্তারা নগদ ভাগ করে নিয়েছে। এটা আইন।”
সম্প্রতি সোনারগাঁও হোটেলের এক অনুষ্ঠানে গিয়ে সেখানেও এ আইন কার্যকর করার উদ্যেগ নেওয়ার কথা জানিয়ে শ্রম প্রতিমন্ত্রী বলেন, তিনি ছিলেন ওই অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি, আর প্রধান অতিথি ছিলেন বিমানমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন। “সেখানে সোনারগাঁওয়ের জিএম জানালেন, তারা এবার ৫৬ কোটি টাকা লাভ করেছেন। আমি উঠে বললাম, মেনন ভাই, আপনি শ্রমিক রাজনীতি করছেন, আমি জীবনে শ্রমিক রাজনীতি করি নাই। এই যে ৫৬ কোটি লাভ করল, এখানকার ৫ শতাংশ কই? দয়া করে দেন, নাইলে আপনার বিরুদ্ধে মামলা করে দেব।” এরপর হাসতে হাসতে চুন্নু বলেন, “মামলা করা লাগেনি। কাজ হয়েছে।”
তিনি বলেন, এই আইন কেউ না মানলে শ্রম আদালতে মামলা করা যায়। প্রতিমন্ত্রী হওয়ার পর তহবিলে মাত্র ৪৫ লাখ টাকা দেখে সংশিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে চিঠি দিতে শুরু করেন বলে জানান চুন্নু। “অল্প কিছু প্রতিষ্ঠান টাকা দিয়েছে। তাতে এই মুহূর্তে ফান্ডে ১৭২ কোটি টাকা জমা হয়েছে। সবাই টাকা দিলে অনেক টাকা হবে।”
মন্ত্রণালয়ের তহবিলে আসা টাকা ব্যয়ের খাত সম্পর্কে প্রতিমন্ত্রী বলেন, কোনো শ্রমিক আহত হলে এক লাখ টাকা দেওয়া যাবে। সন্তানদের উচ্চশিক্ষার ব্যবস্থা করা যাবে। “আগে এটা থেকে কেবল শ্রমিকরা সুবিধা পেত। এখন কর্মকর্তারাও পাচ্ছে। ২০১৩ সালে এই সংশোধনী এনেছি। তাই টাকা প্রদানে তাদের আগ্রহ তৈরি হয়েছে। মিডিয়া মালিকদের বলব, আপনারা যারা লাভ করেন, পাঁচ শতাংশ দিবেন। “এই পাঁচ শতাংশ না দিলে কোনো চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট ফার্ম অডিট রিপোর্ট ক্লিয়ার করতে পারে না। তাদেরকেও এটা বলেছি। তারা এটা করলে অটোমেটিক টাকা আসবে।”
এই বিধান বাস্তবায়নে সংবাদ মাধ্যমের মালিকদের চিঠি দেওয়া হবে কি-না, এ প্রশ্নে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “চিঠি না দেওয়ার কোনো কারণ নাই। সবাইকে চিঠি দেওয়া হবে। যারা লাভ বেশি করে বলে চোখে পড়েছে তাদেরকে আগে দিয়েছি। বাকিদেরকেও দেব।”
তিনি বলেন, গ্রামের মেয়েদের কারণেই বাংলাদেশ এখন পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক। “আমি একটা কাজ করছি। এখানকার রপ্তানির ১০০ টাকায় ৩ পয়সা কেটে রাখতে মালিকদের রাজি করিয়েছি। গত ১ জুলাই থেকে টাকা আসতেছে। হিসাব করে দেখেছি, বছরে প্রায় ৬২-৭০ কোটি টাকা আসবে। এই টাকা থেকে কর্মরত অবস্থায় কেউ মারা গেলে সেই শ্রমিকের পরিবারকে তিন লাখ টাকা করে দেব। নির্দিষ্ট মেয়াদের পর চাকরি ছেড়ে গেলে ইন্সুরেন্স কাভারেজে দুই লাখ টাকা আর তিন লাখ টাকা নগদে দেওয়া হবে।”
অনুষ্ঠানে বক্তব্যের শুরুতে চুন্নু সংবাদকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, “আপনারা আছেন বলেই আমরা অনেক ভালো আছি। বাংলাদেশে সংবাদপত্র ও মিডিয়ার কারণে অনেক অনাচার, দুর্নীতি অনেক কম হয়। নয়ত অনেক বেশি হত।”
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন