বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

পাবনায় গ্যাস কূপ খননসহ ৮ প্রকল্প অনুমোদন

প্রকাশের সময় : ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

অর্থনৈতিক রিপোর্টার : পাবনার মোবারকপুর তেল-গ্যাস অনুসন্ধান কূপ খননসহ ৮টি উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। এতে মোট ব্যয় হবে ২ হাজার ৮৬৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ১ হাজার ৫৩৬ কোটি ৪৩ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে ১ হাজার ৩২৮ কোটি ৬১ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে।
মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপার্সন শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এসব প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। পরে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সাংবাদিকদের বিস্তারিত জানান।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে মোবারকপুরে কূপ খননের কাজ শুরু হয়। সাড়ে ৮ ইঞ্চি হোল সেকশনে খননকালে ৪ হাজার ১৭৫ মিটার গভীরতায় হঠাৎ করে ড্রিল পাইপ স্টাক (আটকে) হয়ে যায়। এ বিষয়ে অনেক চেষ্টা সত্ত্বেও সেই পাইপের পুরোপুরি উঠিয়ে আনা যায়নি। এর মধ্যে ৩ হাজার ৬২০ মিটার উঠিয়ে আনা গেলেও ৫৫৫ মিটার এখনো মাটির নিচে রয়ে গেছে। এই অবস্থায় কাক্সিক্ষত লক্ষ্যমাত্রায় কূপ খনন করতে হলে বিকল্প উপায়ে যেতে হবে। নতুন প্রস্তাবনায় সাইড ট্রেকিং এর মাধ্যমে ৪৭০০ মিটার গভীর কূপ খনন করতে চায় পেট্রোবাংলা। কিন্তু মূল প্রকল্প প্রস্তাবনায় (ডিপিপি) সাইড ড্রিলিং সংক্রান্ত কোনো কম্পোনেন্ট নেই। ইতোমধ্যে প্রকল্পে দ্বিতীয় সংশোধনীর মেয়াদও শেষ হয়ে গেছে। তাই প্রকল্পের মেয়াদ আরো ৬ মাস বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়। একই সঙ্গে প্রকল্পের মোট ব্যয় ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা কমানো হয়েছে।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপোরেশন এন্ড প্রোডাকশন কোম্পানী লিমিটেড (বাপেক্স) সূত্র জানায়, ১৯৮০ থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত জার্মান কোম্পানী (জিজিএজি) উত্তরাঞ্চলের বেশ কয়েকটি জেলায় গ্যাস ও তেল অনুসন্ধান ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ করে। এ সময় পাবনার সুজানগর উপজেলার মোবারকপুর গ্রামে তেল ও গ্যাসের সম্ভাব্য মজুতের সম্ভাবনা দেখা দেয়। এছাড়া রিগ সংক্রান্ত জটিলতার কারণে সময়মতো কাজ শেষ হয়নি। এখন এসব সমস্যা দূর হয়েছে । এতদিন কাজ শেষ না হলেও বর্ধিত সময়ে কাজ শেষ করা সম্ভব হবে।
এর আগে মোবারকপুরের গ্যাস উত্তোলনের জন্য ২০০৪-০৫ অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন প্রকল্পে একটি প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ওই সময় প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্প হিসেবে ২০০৬ সালের ৬ জুন একনেক বৈঠকে ৫৬ কোটি ৪০ লাখ টাকার ‘মোবারকপুর অনুসন্ধান কূপ খনন প্রকল্প’ নামে অনুমোদন দেয়া হয়।
প্রস্তাবিত ওই প্রকল্পে শর্ত অনুসারে, কূপ খননের আগে গ্যাস পাওয়ার বিষয়ে ভূ-তাত্ত্বিক দ্বি-মাত্রিক (টু-ডি) জরিপের ফলাফল ভালো হলেই অনুসন্ধান করার অনুমতি পাওয়া যাবে। পরে ২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সেখানে ১৬০ দশমিক ৩৮ কিলোমিটার লাইন জরিপ করা হয় এবং ডিসেম্বর মাসে এর ফলাফল প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। দ্বিমাত্রিক জরিপের তথ্য-উপাত্ত থেকে বাপেক্স সেখানে গ্যাসের অস্তিত্বের ব্যাপারে আবারও আশাবাদী হয়। কিন্তু পরবর্তীকালে এই প্রকল্পটির কাজের কোন অগ্রগতি দেখা যায়নি। এরপর ২০১২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়ে ৮৯ কোটি ২৬ লাখ টাকা অর্থায়নে ঐ প্রকল্পটি আবার অনুমোদন দেয়া হয়। পরে বাপেক্স কারিগরি কারণ দেখিয়ে মোবারকপুর থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার উত্তর পশ্চিমে সাঁথিয়া উপজেলার পাগলাদহ, চন্ডিপুর ও বিষষ্ণুবাড়ীয়া মৌজায় প্রায় ৯ একর জমি ২০১০ সালে দুই বছরের জন্য ইজারা নিয়ে নতুন করে সেখানে প্রকল্পটি স্থানান্তর করে। অবকাঠামো নির্মানের পর প্রায় দু’বছর পেরিয়ে গেলেও ’রিগ’ না পাওয়া যাওয়ায় নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে এ কূপ খনন শুরু করা যায়নি। এরপর ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে রিগ বসানোর কাজ শুরু হয় এবং মে মাসে শেষ হয়।
পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, নরসিংদী বিসিক শিল্পনগরী সম্প্রসারণ শীর্ষক প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে সমন্বিত অবকাঠামোগত সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট স্থানে শিল্প স্থাপনের জন্য শিল্পোদ্যোক্তদের উৎসাহিতকরণ, জিডিপিতে এসএমই খাতের অবদান বৃদ্ধিকরণ, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প স্থাপনের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিকরণ এবং সামাজিক প্রতিবন্ধকতা ও পরিবেশ দূষণ হ্রাসপূর্বক শিল্প স্থাপনের মাধ্যমে শিল্পায়ন তরান্বিত করা হবে।
একনেকে অনুমোদিত অন্য প্রকল্পগুলো হচ্ছে, পানি ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন প্রকল্প, এটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হবে ৮১৫ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় পাচঁপীর বাজার চিলমারী উপজেলা সদর দপ্তরের সাথে সংযোগকারী সড়কে তিস্তা নদীর উপর ১ হাজার ৪৯০ মিটার দীর্ঘ পিসি গার্ডার সেতু নির্মাণ প্রকল্প, এর ব্যয় ৭৩০ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। জাতীয় প্রাণিসম্পদ ও পোল্ট্রি ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউট এবং রোগ অনুসন্ধান গবেষণাগার স্থাপন প্রকল্প, এর ব্যয় ৪২ কোটি ৮০ লাখ টাকা। আন্তঃজেলা সীমান্ত সড়ক নির্মাণ, মযমনসিংহ ও নেত্রকোনা জেলা অংশ প্রকল্প, এর ব্যয় ৪৫৭ কোটি ৩০ লাখ টাকা। ঢাকার বেইলি রোডে পার্বত্য চট্টগ্রাম কমপ্লেক্স নির্মাণ প্রকল্প, এর ব্যয় ১০২ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। ভোলা জেলার দৌলতখান ও বোরহানউদ্দিন উপজেলায় মেঘনা নদীর ভাঙন হতে পোল্ডার/৫৬/৫৭ রক্ষা প্রকল্প, এর ব্যয় ৫৫১ কোটি ৫০ লাখ টাকা।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান, পরিকল্পনা সচিব তরিকুল ইসলাম এবং তথ্য ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব কানিজ ফাতেমা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন