শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

দক্ষ জনবলের অভাবে পিছিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক

সোনালী রূপালী অগ্রণী জনতা ব্যাংকে কর্মচারী থেকে মহাব্যবস্থাপক

প্রকাশের সময় : ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

সোহাগ খান : দেশের বেসরকারী খাতের ব্যাংকগুলোতে নিয়োগের ক্ষেত্রে বিষয়ভিত্তিক দক্ষদের প্রধান্য দিলেও রাষ্ট্রয়ত্ত ব্যাংকে জনবল নিয়োগের ক্ষেত্রে তা মানা হয় না। বরং নিয়োগের ক্ষেত্রে বাণিজ্য বা ব্যাংক সংশ্লিষ্ট বিষয়সমূহকে গুরুত্ব না দিয়ে অর্ধশিক্ষিতদের প্রমোশন দিয়ে ডিজিএম এমনকি জিএম পর্যায়ের কর্মকর্তাও করা হয়ে থাকে। শিক্ষিত ও দক্ষ জনবলের ঘাটতির কারণেই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো বেসরকারী ব্যাংক থেকে প্রতিযোগিতায় অনেক পিছিয়ে পড়েছে বলে মনে করেন সাবেক ব্যাংকাররা।
জনতা ব্যাংকের সাবেক উপব্যবস্থাপনা পরিচালক হাসান ইকবাল এর মতে, বাণিজ্য বিভাগের শিক্ষার্থীরা ব্যাংকের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ব্যাংকার হিসেবে যোগদান করলে তাদের লক্ষ্য থাকে প্রফেশনাল হওয়া। বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও থাকে সদা তৎপর। কিভাবে ব্যবসা করে প্রতিষ্ঠানকে লাভবান করা যাবেÑ এটাই থাকে তাদের চিন্তা-চেতনা।
কিন্তু অন্য বিভাগের শিক্ষার্থীরা একই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ব্যাংকার হিসেবে যোগদান করলেও তাদের ব্যাংকিং শিখতেই চলে যায় অন্তত ৩ থেকে ৫ বছর। বাণিজ্য বিভাগের শিক্ষার্থীদের ব্যাংকিং কার্যক্রম প্রায় বেশিরভাগ জানাই থাকে। আর অন্য বিভাগের শিক্ষার্থীরা ভাউচার লেখা শিখতে চলে যায় ছয় মাস। সরকারী ব্যাংক সব বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রীধারী নিয়োগ দেয়ার কারণে প্রথমেই বেসরকারী ব্যাংক থেকে তারা পিছিয়ে থাকে। এ বিষয়ে রূপালী ব্যাংকের মানব সম্পদ বিভাগের সাবেক উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, অনেক সরকারী ব্যাংকে মৃত্তিকা বিজ্ঞানের ছাত্র সিনিয়র ক্রেডিট স্পেশালিস্ট (ডিএমডি) হিসাবে কর্মরত আছে। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, মৃত্তিকা বিজ্ঞান থেকে পাশ করা একজন কর্মকর্তা ব্যাংকের বিনিয়োগ সম্পর্কে কী বুঝবে?
সাবেক ওই কর্মকর্তা বলেন, পে-স্কেল কার্যকরের আগে সরকারী ব্যাংকে বাণিজ্য বিভাগের শিক্ষার্থীরা আসতে চাইতো না। কারণ তখন বেতন কম ছিলো। এখন পে-স্কেল কার্যকরের ফলে সকল ব্যাংকারদের বেতন দ্বিগুণ হয়েছে। ব্যাংকগুলোর পরিচালন ব্যয় দ্বিগুণ হয়েছে। সুতারাং এখন সরকারী ব্যাংকগুলো নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রাইভেট ব্যাংকের মত বাণিজ্য বিভাগ তথা ব্যাংকিং জানা লোকদের নিয়োগ দেয়ার বাধ্যবাধকতা তৈরী করতে পারে। তাহলেই সরকারী ব্যাংকগুলো প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারবে।
ব্যাংকপাড়া সূত্রে জানা যায়, অনেক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে এসএসসি পাশ মহাব্যবস্থাপক ছিলেন। বর্তমানে রূপালী ব্যাংকে কর্মচারী থেকে প্রমোশন পেয়ে উপ-মহাব্যবস্থাপক হয়েছেন এমন কর্মকর্তার সংখ্যা অন্তত: ৫ জন। এমনিভাবে সহকারী মহাব্যবস্থাপক আছেন অন্তত ৫০ জন যারা ব্যাংকের জন্য বোঝা হয়ে আছেন। তাদের কাজে প্রচ- বিরক্ত ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ।
সর্ববৃহৎ বাণিজ্যক ব্যাংক সোনালীর অবস্থা আরও ভয়াবহ। এখানে কর্মচারী থেকে কর্মকর্তা হয়েছেন প্রায় হাজার খানেক। এর মধ্যে ৬ জন মহাব্যবস্থাপক, ২১ জন উপ-মহাব্যবস্থাপক এবং শতাধিক সহকারী মহাব্যবস্থাপক রয়েছেন। জনতা ব্যাংকের একজন মহাব্যবস্থাপক জানান, তাদের ব্যাংকে একজন প্রমোটি জিএমসহ প্রায় ৩ শতাধিক প্রমোটি (কর্মচারী-কর্মকর্তা) রয়েছেন। যারা ব্যাংকিং তো বোঝেনই না, উল্টো স্বাভাবিক ব্যাংকিং কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটান।
অগ্রণী ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, এখানেও সহকারী মহাব্যবস্থাপক থেকে মহাব্যবস্থাপক পর্যন্ত প্রমোটি আছেন কমপক্ষে ৩০ জন। সব মিলিয়ে কর্মচারী থেকে কর্মকর্তা হয়েছেন প্রায় এক হাজার। যাদের বেশীরভাগই অযোগ্য এবং রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রমোশন বাগিয়ে নিয়েছেন।
বাংলাদেশ ডেভলোপমেন্ট ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক আব্দুল হামিদ জানান, তারাও এরকম সমস্যা মোকাবেলা করছেন প্রায় ২ শতাধিক কর্মকর্তা নিয়ে। যারা কর্মচারী থেকে প্রমোশন পেয়ে কর্মকর্তা হয়েছেন। কৃষি ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, বেসিক ব্যাংকসহ প্রায় সব রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক একই সমস্যায় ভুগছে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র শুভঙ্কর সাহা বলেন, ব্যাংকে যাতে মেধাহীনরা না ঢুকতে পারে, সেজন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটির মাধ্যমে নিয়োগ শুরু করেছে। এতে করে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত থাকবে দেশের সবচেয়ে সংবেদনশীল খাত। তবে শুধুমাত্র বাণিজ্য বিষয়ের শিক্ষার্থীরাই ব্যাংকিং ভালো করবে এ যুক্তি মানতে নারাজ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই কর্মকর্তা। যে সব কর্মচারীদের প্রমোশনের মাধ্যমে কর্মকর্তা বানানো হচ্ছে তাতে রাজনৈতিক প্রভাব তথা সিবিএ’র প্রভাব থাকছে বলে স্বীকার করেন এই কর্মকর্তা। তবে সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের কঠোর হওয়ার পরমার্শ দেন তিনি। বলেন, যে সকল কর্মচারী চাকরির শেষ জীবনে প্রমোশন পান, তারা কোন রিস্ক নিতে চান না। এতে তারা ব্যাংকের জন্য সত্যি সত্যি বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Mohd.Abdur Rouf Deputy Manager Bangladesh Bank ১ অক্টোবর, ২০১৬, ১০:১৬ এএম says : 0
In service training and others training must develop that prompt officer. Promotion is attraction and charming of an employee. so,vhalo korbe kormokhetra atai shavakik. That is no problem.OK,thanks.
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন