শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

সম্প্রসারণশীল মুদ্রানীতি অব্যাহত থাকবে

ওয়েবসাইটে প্রকাশ হচ্ছে আজ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৯ জুলাই, ২০২১, ১২:০১ এএম

করোনা মহামারিতে অর্থনীতির পুনরুদ্ধারের জন্য এবারও সম্প্রসারণমূলক মুদ্রানীতি ভঙ্গি বজায় রাখবে বাংলাদেশ ব্যাংক। কাঙ্খিত জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য উৎপাদনশীল খাতে ঋণ জোগান বাড়ানোর ওপর জোর দেয়া হবে। নীতি সুদহার ও সিআরআর কমিয়ে রাখার অবস্থান অপরিবর্তিত থাকবে। তবে এসব নীতিসহায়তার কারণে তৈরি হওয়া উদ্বৃত্ত তারল্য যেন অনুৎপাদনশীল খাতে গিয়ে মূল্যম্ফীতির ওপর চাপ তৈরি না করে সে বিষয়ে সতর্ক থাকবে বাংলাদেশ ব্যাংক। চলতি অর্থবছরের মুদ্রানীতি ওয়েবসাইটে প্রকাশ হচ্ছে আজ বৃহস্পতিবার। জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৭ দশমিক ২ শতাংশ। অন্যদিকে মূল্যম্ফীতি ৫ দশমিক ৩ শতাংশে সীমিত রাখার লক্ষ্য ঠিক করেছে সরকার। লক্ষ্যমাত্রা অর্জনকে সামনে রেখে মুদ্রানীতির কর্মসূচি সাজানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন মুদ্রানীতি প্রণয়নের সঙ্গে যুক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা। তারা জানান, মুদ্রানীতির মূল লক্ষ্য হবে করোনার প্রভাব মোকাবিলা করে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করা। বিশ্ববাজারের পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ চাহিদা বাড়ানোর মাধ্যমে কর্মসংস্থানমূলক কার্যক্রমে উৎসাহ দেওয়া হবে। প্রণোদনাসহ সব ধরনের ঋণের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে বলা হবে। ব্যাংক ব্যবস্থায় থাকায় বাড়তি অর্থ যেন অনুৎপাদনশীল খাতে না যায় সে বিষয়ে নজর দেওয়া হবে।

গত অর্থবছরের মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর প্রক্ষেপণ করা হয় ১৪ দশমিক ৮০ শতাংশ। তবে মে পর্যন্ত অর্জিত হয়েছে মাত্র ৭ দশমিক ৫৫ শতাংশ। নতুন বিনিয়োগ কম হওয়ায় আগামীতেও ঋণপ্রবৃদ্ধি কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় বাড়বে কিনা তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। গত অর্থবছরের জন্য সরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৪৪ দশমিক ৪০ শতাংশ প্রাক্কলন করা হলেও সঞ্চয়পত্র থেকে প্রচুর ঋণ পাওয়ায় সরকার ব্যাংক থেকে নিয়েছে অনেক কম। গত অর্থবছর রেমিট্যান্সে ৩৬ দশমিক ১০ শতাংশ এবং রপ্তানিতে ১৫ দশমিক ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। করোনার এ সময়ে অর্থনীতির জন্য যা সহায়ক হয়েছে। গত মে পর্যন্ত ১৭ শতাংশের বেশি আমদানি বাড়লেও প্রবৃদ্ধির বড় অংশই খাদ্যপণ্য হওয়ায় এখানে খুব একটা আশার আলো নেই। মুদ্রানীতি কেমন হওয়া উচিত জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক এবারও সম্প্রসারণমূলক ধারা বজায় রাখবে বলে মনে হচ্ছে। তবে শুধু কিছু সংখ্যা প্রকাশ না করে বাস্তবায়ন কৌশল নির্ধারণের ওপর জোর দিতে হবে। ব্যাংক খাতে এখন প্রচুর উদ্বৃত্ত তারল্য রয়েছে। এই অর্থ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয় এমন খাতে বিতরণ বাড়ানোর নির্দেশনা দিতে হবে। মানুষের আয় বাড়লে এই মুহূর্তে মূল্যস্ম্ফীতি বড় কোনো বিষয় নয়। ঋণ বিতরণে বেশি জোর দিতে হবে ক্ষুদ্র ও মাঝারিশিল্প এবং কৃষি খাতে। রপ্তানির ক্ষেত্রে তৈরি পোশাকের পাশাপাশি চামড়া ও হালকা প্রকৌশলের মতো খাতে জোর দেওয়ার মাধ্যমে বহুমুখী করতে হবে। এছাড়া ঋণ প্রবৃদ্ধির সামগ্রিক প্রক্ষেপণ না দিয়ে ব্যাংকভিত্তিক লক্ষ্যমাত্রা দিতে হবে। একই সঙ্গে বলে দিতে হবে লক্ষ্য অর্জন করতে না পারলে সিআরআর, ব্যাংক রেট ও নীতি সুদহার বাড়িয়ে দেওয়া হবে। রপ্তানি ও রেমিট্যান্সে ভালো প্রবৃদ্ধির কারণে অধিকাংশ ব্যাংকের হাতে এখন পর্যাপ্ত ডলার রয়েছে। বাজার ঠিক রাখতে বাড়তি ডলার কিনে নিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। একই সঙ্গে নৈতিক চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে ডলারের দর স্থিতিশীল রাখা হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে ডলার ৮৪ টাকা ৮০ পয়সায় স্থিতিশীল রয়েছে। আগামীতেও এ ধারা অব্যাহত রাখা হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘বাংলাদেশে কভিড-১৯ মহামারি : নীতিসহায়তা এবং এর প্রভাব’ শীর্ষক সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে চলমান সংকট থেকে উত্তরণে সরকারকে আরও নীতি সহায়তার পরামর্শ উঠে এসেছে। একই সঙ্গে করোনার প্রভাব মোকাবিলায় নিয়ন্ত্রকদের আগের অভিজ্ঞতা থেকে ত্রুটি চিহ্নিত করে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিতে বলা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনা মহামারি থেকে উত্তরণে ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের সঠিক ব্যবহার এবং অর্থনীতিতে এর প্রভাব বিবেচনা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দক্ষ ব্যবস্থাপনা ও তদারকির মাধ্যমে এসব প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে ভালো ফলাফল আসতে পারে। এদিকে প্রণোদনার ঋণের অপব্যবহারের তথ্য পাওয়ায় গত রোববার সতর্ক করে সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীকে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করে, সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর বড় ধরনের কর্মসংস্থান এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির জন্য এসএমএই খাতের ওপর বিশেষ নজর দিতে হবে। মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারিশিল্প (এমএসএমই) খাতের অনুকূল পরিবেশ দরিদ্রদের জীবিকা নির্বাহের ক্ষেত্রে সহায়ক হবে। এক্ষেত্রে ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রতিটি ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদ থেকে বিশেষ ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন