শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

১৮ জেলার ৩০ সীমান্ত পয়েন্টে চলে বেচাকেনা : চকচকে অস্ত্র সন্ত্রাসীদের হাতে

প্রকাশের সময় : ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

নূরুল ইসলাম : অস্ত্র মানেই ঝকঝকে চকচকে। র‌্যাব পুলিশের অভিযানেও উদ্ধার হচ্ছে চকচকে অস্ত্র। রাজধানীসহ সারাদেশেই ছড়িয়ে পড়ছে নতুন-ঝকঝকে চকচকে আগ্নেয়াস্ত্র। সংঘবদ্ধ একাধিকচক্র বিভিন্ন দেশ থেকে অবৈধপথে প্যাকেটজাত নতুন অস্ত্র আনছে। বিভিন্ন পন্থায় সেগুলো চলে যাচ্ছে হাতে হাতে। মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন অভিযানে সম্পৃক্ত থাকা র‌্যাব, পুলিশ, গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, গত দু’বছরে উদ্ধারকৃত আগ্নেয়াস্ত্রগুলোর বেশির ভাগই ছিল নতুন-চকচকে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, আগে বিভিন্ন অভিযানে ভাঙাচুরা, পুরাতন এবং দেশে তৈরি পাইপগান মার্কার অস্ত্রশস্ত্রই বেশি পাওয়া যেতো। কিন্তু ইদানীং সন্ত্রাসীদের হাতে উঠে এসেছে অপেক্ষাকৃত ছোট আকৃতির এবং অধিক ক্ষমতাসম্পন্ন অস্ত্র। সূত্র জানায়, অস্ত্র ব্যবসায়ীরা কয়েকটি বিশেষ রাষ্ট্র থেকে প্যাকেটজাত অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র আনছে। কয়েক হাত হয়ে সেগুলো ছড়িয়ে পড়ছে সারাদেশে। তবে বেশির ভোগ অস্ত্র আসছে ভারত থেকে।
জানা গেছে, দেশের ১৮ জেলার ৩০টি সীমান্ত পয়েন্ট এখন অস্ত্র ও মাদক কেনাবেচা চলে। সেসব স্থানে ইয়াবা, ফেন্সিডিলের যেমন খোলামেলা কেনাবেচা চলে, তেমনি অস্ত্রশস্ত্রও বেচাকেনা চলে। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যবসায়ীরা সীমান্ত পয়েন্টের অস্ত্র-মাদকের খোলা বাজারগুলোতে নিয়মিত ভিড় করছে। বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্ট ফাঁকি দিয়ে ঢুকে পড়ছে ছোট আকারের আগ্নয়াস্ত্রসহ ‘আরজিএস’ গ্রেনেড, একে-৪৭ রাইফেলের মতো অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্রও। হাতবোমা, চকলেট বোমা, টুটু বোর, রিভলবারের চালান আনা হচ্ছে স্বাভাবিক গতিতে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে ইতোমধ্যে অত্যাধুনিক ভারী আগ্নেয়াস্ত্রও ধরা পড়েছে। তবে সীমান্তে অস্ত্র-মাদকের ছোট ছোট চালানও আটক হয়। কিন্তু বন্ধ হয় না বেচাকেনা।
সূত্র জানায়, গতবছর একটি গোয়েন্দা সংস্থার এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, দেশজুড়ে অস্ত্রশস্ত্র সহজলভ্য হয়ে পড়েছে। বেশ কিছু পয়েন্টে অস্ত্র কেনাবেচা চলছে প্রায় প্রকাশ্যেই। অপর একটি গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের বিভিন্ন সীমান্তের অন্তত ২৬টি পয়েন্ট দিয়ে আরজিএস গ্রেনেড, একে-৪৭ রাইফেল, নাইন এমএম-এর মতো মারাত্মক ধরনের অস্ত্রশস্ত্রও অবাধে ঢুকে পড়ছে। এসব পয়েন্টে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), সীমান্ত থানাগুলোর পুলিশ ও বিভিন্ন গোয়েন্দা নজরদারি নিশ্চিত করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকেও বিশেষ নির্দেশনা জারি করা হয়।
সূত্র জানায়, হবিগঞ্জের সাতছড়ি, শেরপুরের গাজনী, দিনাজপুরের হিলিসহ হাকিমপুর-ফুলবাড়ী, ময়মনসিংহের হালুয়া ঘাটের প্রত্যন্ত পাহাড়ি সীমান্ত, সাতক্ষীরার কলারোয়া ও সুন্দরবন নদী সীমান্ত, মৌলভীবাজারের শরীফপুর সীমান্ত পয়েন্ট, রাজশাহীর বেড়পাড়া, টাঙ্গন, নওদাপাড়া, ইউসুফপুর সীমান্ত পয়েন্টে আগ্নেয়াস্ত্র আনা-নেয়া ও বেচাকেনা চলে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে এসব এলাকা দিয়ে অবাধে অস্ত্র আনা-নেওয়া হয়। তবে কখনো কখনো ধরাও পড়ে। কোনো রুটে একবার অস্ত্র ধরা পড়লে সেই পথ দিয়ে সহসা আর কোনো অস্ত্র আসে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক সূত্র মতে, একবার একটি চালান ধরা পড়লে ভিন্নমতে চোরাচালান বেড়ে যায়। সবার দৃষ্টি একদিকে রেখে সে সুযোগ গ্রহণ করে চোরাকারবারীরা।
সূত্র জানায়, রাজশাহীর নওদাপাড়া-কাটাখালী অঞ্চলে চিহ্নিত চোরাকারবারী বাবুর নেতৃত্বাধীন ফাইভ স্টার গ্রুপের সদস্যরা মাদক চোরাচালানের পরিবর্তে এখন অবৈধভাবে আগ্নেয়াস্ত্র কেনাবেচায় ব্যস্ত। সেখানে মাত্র ২০/২২ হাজার টাকাতেই ভারতের তৈরি পিস্তল, হালকা রিভলবার জাতীয় অস্ত্রশস্ত্র কেনাবেচা চলে বলেও একটি জানা গেছে। এছাড়া দিনাজপুরের হিলি সীমান্ত দিয়েও ভারত থেকে অস্ত্র ঢুকছে। হিলি ও বিরামপুরের একাধিক চিহ্নিত মাদক চোরাচালানী এ কাজে জড়িত।
ডিএমপির থানা পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত দুইবছর ধরে যেসব অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে সেগুলোর বেশির ভাগই নতুন, চকচকে, ঝকঝকে। আলাপকালে একজন এসআই জানান, তিনি সবুজবাগ থানায় থাকাকালে একটি নাইন এমএম অস্ত্র উদ্ধার করেছিলেন। সেটি ছিল একেবারে চকচকে। ওই কর্মকর্তা স্বীকার করেন, ৩/৪ বছর আগেও সহসা এমন অস্ত্র পাওয়া যেতো না। তখন অস্ত্র মানেই ছিল দেশি পাইপগান, ভারী রিভলবার, শর্টগানসহ বড় সাইজের অস্ত্র। এখন যেসব ব্যবহার হচ্ছে বা উদ্ধার হচ্ছে সেগুলো উন্নতমানের, গঠনে ছোট এবং দেখতে সুন্দর চকচকে। গত দুইবছরে সন্ত্রাসীদের হাতে অস্ত্র চালনার যেসব দৃশ্য পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে সেগুলোও ছিল অত্যাধুনিক ও চকচকে। ডিএমপির মিডিয়া উইংয়ের উপ কমিশনার মারুফ হোসের সরদার বলেন, যেকোনো ধরনের অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের জন্য পুলিশ তৎপর রয়েছে। পুলিশের অভিযানে অস্ত্র উদ্ধার হচ্ছে। তিনি বলেন, অস্ত্র ব্যবসায়ী ও অস্ত্রধারীদের বিষয়ে গোয়েন্দা তৎপরতা অব্যাহত আছে। এতে করে অস্ত্রধারীরা সুবিধা করতে পারছে না। যে কারণে ঢাকার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখন অনেক ভালো।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন