আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কিয়ামতের বিভীষিকাময় মুহুর্তে তাঁর প্রিয় রাসুল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ‘শাফায়াত’ করার জন্য অনুমতি দিবেন। অনুমতি পেয়ে রাসুল (সা.) তাঁর প্রিয় উম্মতদের জাহান্নাম থেকে মুক্তির জন্য মহান জাতেপাক পরম দয়ালু আল্লাহর নিকট ‘শাফায়াত করবেন। মুফাসসিরগণের মতে- যেস্থানে দাঁড়িয়ে তিনি তাঁর উম্মাতদের জন্য ‘শাফায়াত’ করবেন ঐ স্থানকে ‘মাক্বামে মাহমুদ’ বলে। কিয়ামত ময়দানে হিসাব নিকাশের প্রাক্কালে আল্লাহপাকের ‘আরশ কুরসি’ সংলগ্ন কিংবা ‘আরশ’ সংলগ্ন বিশেষ মর্যাদা ও সম্মানের স্থান হলো ‘মাক্বামে মাহমুদ’। অতি সম্মানীয় স্থান ‘মাক্বামে মাহমুদ’ লাভের সৌভাগ্য কেবল সাইয়েদুল মুরসালীন মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামেরই হবে। অন্যকোন নবী রাসুল এ স্থান লাভ করবেন না। এদৃষ্টিকোন থেকে এটি বিশ্বনবীর শ্রেষ্ঠত্ব এবং তাঁর উম্মাতেরও শ্রেষ্ঠত্ব।
কুরআন মাজীদে মাক্বামে মাহমুদ প্রসঙ্গ : পবিত্র কুরআন মাজিদে আল্লাহপাক ‘মাক্বামে মাহমুদ’ প্রসঙ্গে বলেন, ‘রাত্রির কিছু অংশ কোরআন পাঠ সহ জাগ্রত থাকুন। এটা আপনার জন্যে অতিরিক্ত। হয়ত বা আপনার পালনকর্তা আপনাকে মোকামে মাহমুদে পৌঁছাবেন। (সুরা বনী ইসরাঈল: আয়াত: ৭৯)। এ আয়াতস্থিত ‘মাক্বামে মাহমুদ’ ই কিয়ামত ময়দানের ‘শাফায়াতের’ স্থান। এ আয়াতের ব্যাখ্যায় প্রখ্যাত মুফাসসির আল্লাহ ইবনে জারীর বলেন, ‘অধিকাংশ আহলে তাবীলের মতে ‘মাক্বামে মাহমুদ’ হলো যেস্থানে দাঁড়িয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিয়ামতের দিন মানবজাতির জন্য ‘শাফায়াত ’ করবেন। শাফায়াতের উদ্দেশ্য হল বিভীষিকাময় ভয়াবহতা থেকে মানবজাতিকে রক্ষা করা, আযাবের কষ্ট থেকে প্রশান্তি দেয়া। (তাফসীরে তাবারী)।
মুহাম্মদ ইবনে আলী ইবনে মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ আশ শাওক্বানী (রহ.) বলেন, ‘সুরা বনী ইসরাঈলের ৭৯ নং আয়াতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে মাকামে মাহমুদের ওয়াদা দেয়া হয়েছে। মাকামে মাহমুদ শব্দদ্বয়ের অর্থ, প্রশংসনীয় স্থান। এই মাকাম রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্যেই বিশেষভাবে নির্দিষ্ট অন্য কোন নবীর জন্যে নয়। এর তাফসীর প্রসঙ্গে বিভিন্ন উক্তি বর্ণিত আছে। সহীহ হাদীস সমূহে স্বয়ং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত আছে যে, এ হচ্ছে ‘বড় শাফাআতের মাকাম’। (ফাতহুল কাদীর)।
হাদীস শরীফে মাক্বামে মাহমুদ প্রসঙ্গ : সহীহুল বুখারীতে এসেছে, ‘হাশরের ময়দানে যখন সমগ্র মানব জাতি একত্রিত হবে এবং প্রত্যেক নবীর কাছেই শাফয়াতের দরখাস্ত করবে, তখন সব নবীই শাফায়াত করতে অপারগতা প্রকাশ করবেন। তখন কেবল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামাই সমগ্র মানবজাতির জন্যে শাফায়াত করবেন। এ সম্পর্কে বিভিন্ন হাদীস বর্ণিত হয়েছে। ইবনে উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন : কিয়ামতের দিন লোকেরা দলে দলে বিভক্ত হবে। প্রত্যেক উম্মত তার নিজের নবীর কাছে যাবে। তারা বলবে, হে অমুক (নবী)! আল্লাহর কাছে আমাদের জন্য শাফায়াত করুন। হে অমুক (নবী)!! আল্লাহর কাছে আমাদের জন্য শাফায়াত করুন। (কিন্তু তারা কেউ শাফায়াত করতে রাযী হবেন না)। শেষ পর্যন্ত শাফায়াতের দায়িত্ব এসে পড়বে নবী (মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর উপর। আর এই দিনেই আল্লাহ তাকে মাকামে মাহমুদে দাঁড় করবেন।’ (সহীহুল বুখারী: হাদিস: ৪৭১৮)।
হযরত কা‘ব বিন মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত নিশ্চয়ই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘কিয়ামতের ময়দানে সকল মানুষ পুনরুত্থিত হবে আমি এবং আমার উম্মত একটি ঊঁচু জায়গায় দাঁড়াব। আমার রব আমাকে সবুজ পোশাকে সজ্জিত করবেন, অত:পর তিনি আমাকে অনুমতি দিবেন, আমি তাঁর ইচ্ছায় কথা বলবো। আর ঐ স্থান হলো মাক্বামে মাহমুদ। (মুসনাদে আহমদ: ৪৫৬/৩, মাজমাউজ যাওয়ায়েদ: ৫৪/৭)।
মাক্বামে মাহমুদ ও শাফায়াত : আনাস ইবনু মালকি (রা.) হতে র্বণতি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলছেনে : ঈমানদারদরেকে কিয়ামতের দনি আবদ্ধ করে রাখা হবে। অবশেেষ তারা অস্থির হয়ে যাবে এবং বলবে, আমরা যদি আমাদের রবের নিকট কারো দ্বারা শাফায়াত করাই যিনি আমাদরে স্বস্তি দান করনে। তারপর তারা আদম (আ.)-এর কাছে এসে বলবে, আপনইি তো সে আদম, যিনি মনুষ্য জাতির পিতা, স্বয়ং আল্লাহ্ আপন হাত দিয়ে আপনাকে সৃষ্টি করছেনে। আপনাকে বসবাসরে সুযোগ দিয়ছেনে তাঁর জান্নাতে, ফেরশেতাদের দিয়ে আপনাকে সিজদা করিয়েছেন এবং আপনাকে সব জিনিসের নাম শিক্ষা দিয়েছেন। আমাদের এ জায়গা থেকে মুক্তি লাভের জন্য আপনার সেই রবের কাছে শাফায়াত করুন।
তখন আদম (আ.) বলবেন, আমি তোমাদের এ কাজের জন্য নই। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন : এরপর তিনি নিষেধকৃত গাছের ফল খাওয়ার ভুলের কথাটি উল্লেখ করবেন। তিনি বলবেন, বরং তোমরা নূহ (আ.)-এর কাছে যাও, যিনি পৃথিবীবাসীদরে জন্য প্রেরতি নবীগণের মধ্যে প্রথম নবী। তারপর তারা নূহ্ (আ.)-এর কাছে এলে তিনি তাদরেকে বলবেন, আমি তোমাদের এ কাজের জন্য নই। আর তিনি না জেনে তাঁর রবের কাছে প্রার্থনার ভুলের কথাটি উল্লেখ করবেন এবং বলবেন বরং তোমরা রাহমানের একনষ্ঠি বন্ধু ইবরাহীমের কাছে যাও।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন : অত:পর তারা ইবরাহীম (আ.)-এর কাছে আসবে। তখন ইবরাহীম (আ.) বলবেন, আমি তোমাদের এ কাজের জন্য নই। আর তিনি এমন তিনটি কথা উল্লেখ করবেন যেগুলো আসল ব্যাপারের উল্টো ছিল। পরে বলবেন, তোমরা বরং মূসা (আ.)-এর কাছে যাও তিনি আল্লাহর এমন এক বান্দা যাঁকে আল্লাহ্ তাওরাত দিয়েছিলেন, তাঁর সঙ্গে কথা বলেছিলেন এবং গোপন কথার্বাতার মাধ্যমে তাঁকে নৈকট্য দান করেন।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন : সবাই তখন মূসা (আ.)-এর কাছে আসবে। তিনি ও বলবেন, আমি তোমাদের এ কাজের জন্য নই। এবং তিনি হত্যার ভুলের কথা উল্লেখ করবেন। তিনি বলবেন, তোমরা বরং ‘ঈসা (আ.)-এর কাছে যাও। যিনি আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল এবং তাঁর রূহ ও বাণী।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলনে : তারা সবাই তখন ‘ঈসা (লা)-এর কাছে আসবে। ‘ঈসা (আ.) বলবেন, আমি তোমাদের এ কাজের জন্য নই। তিনি বলবেন, তোমরা বরং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর কাছে যাও। তিনি আল্লাহর এমন এক বান্দা যাঁর আগের ও পরের ভুল তিনি ক্ষমা করে দিয়েছেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন : তখন তারা আমার কাছে আসবে। আমি তখন আমার রবের কাছে তাঁর নিকট হাযির হবার অনুমতি চাইব। আমাকে তাঁর কাছে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হবে। তাঁর র্দশন লাভের সঙ্গে সঙ্গে আমি সিজদায় পড়ে যাবো। তিনি আমাকে সে হালতে যতক্ষণ চাইবেন রাখবেন।
অত : পর আল্লাহ্ বলবেন, মুহাম্মাদ! মাথা ওঠান; বলুন, আপনার কথা শোনা হবে, শাফায়াত করুন, কবূল করা হবে, চান, আপনাকে দেয়া হবে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন : তখন আমি আমার মাথা ওঠাবো। তারপর আমি আমার প্রতিপালকের এমন স্তব ও স্তুতি করবো যা তিনি আমাকে শিখিয়ে দেবেন। অত : পর আমি সুপারশি করবো, তবে আমার জন্য একটা সীমা নির্দিষ্ট করে দয়ো হবে। ‘আমি বের হয়ে তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করাবো।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন