‘ইকোসাইড’ কিংবা জীববৈচিত্র্যের বিনাশকে মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে তুলনা করেছেন হাইকোর্ট। বিচারের জন্য এ ধরণের অপরাধকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে অন্তর্ভুক্তকরণেরও সুপারিশ করেছেন আদালত। বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল এবং বিচারপতি রাজিক আল জলিলের ডিভিশন বেঞ্চ ‘বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) বনাম সরকার ও অন্যান্য’ মামলার পূর্ণাঙ্গ রায়ে এ সুপারিশ করেছেন। সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে সম্প্রতি এ রায় প্রকাশিত হয়।
রায়ে বলা হয়, পরিবেশের ধ্বংস মূলত বেশি সংঘটিত হয় মানুষ মানুষে হানাহানির কারণে। আধুনিক উদাহরণ ইরাক, সিরিয়া ও আফগানিস্তানের যুদ্ধ। প্রতিটি যুদ্ধই মানুষ হত্যার সঙ্গে সঙ্গে গাছপালা, প্রাণি ও জীববৈচিত্র্য পরিবেশ-প্রতিবেশ ধ্বংস করে। একটি সম্প্রদায়কে, একটি জাতিকে, একটি গোষ্ঠীকে, একটি সংখ্যালঘু ধর্মীয় মতাবলম্বীকে অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী পক্ষ বা গোষ্ঠী কর্তৃক নির্মূল বা ধ্বংস বা হত্যা করা জেনোসাইড। তেমনি ইকোসাইড হলো জীববৈচিত্র্য, প্রাণিজগৎ, পাখি, গাছপালাসহ যেকোনো প্রাণকে হত্যা করা। সেজন্য ইকোসাইডকে ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস ট্রাইব্যুনাল অ্যাক্টে অন্তর্ভুক্তকরণের কথা বলেছেন আদালত। এছাড়া বাংলাদেশকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্নের পরিবেশবান্ধব উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে ১৪ দফা সুপারিশ করেছেন হাইকোর্ট। এসব সুপারিশ দ্রুত বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নিতেও সরকারকে বলা হয়েছে। রায়ে বলা হয়েছে, পরিবেশের অপর নাম শান্তি। পরিবেশসম্মত শাসনব্যবস্থা তথা পরিবেশকে সুরক্ষাকারী শাসন ব্যবস্থা যেমন বিবাদ ও বিরোধ কমিয়ে আনে তেমনি স্থানীয় ও বৈশ্বিক নিরাপত্তাও নিশ্চিত করে। তাই সব উন্নয়ন পরিকল্পনায় ইকোসেন্ট্রিক (প্রকৃতিকেন্দ্রিক) পন্থা গ্রহণ করা দরকার।
১৪ দফা সুপারিশে বলা হয়, পরিবেশবান্ধব দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে জার্মানির নীতি অনুসরণপূর্বক শতভাগ নবায়নযোগ্য জ্বালানি নির্ভর রাষ্ট্রে পরিণত করার মহাপরিকল্পনা গ্রহণ, নেদারল্যান্ডের মতো বাইসাইকেলের দেশ হিসেবে তৈরি, প্লাস্টিক ব্যাগ সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করে ১ হাজার ২০০ বছরের পুরনো জাপানের ঐতিহ্যবাহী ফুরসকি কাপড়ের ব্যাগ তথা বাজার করার ব্যাগ তথা মোড়ানো কাপড়ের ব্যাগ ব্যবহারের প্রচলন করা, সব জাতীয় পার্ক ও উদ্যানকে আমেরিকার জাতীয় উদ্যানের আদলে বিশেষ করে ইয়োসমেটিক ন্যাশনাল পার্কের আদলে তৈরি, সুন্দরবন রক্ষায় আলাদা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করেছেন হাইকোর্ট। এছাড়া নবায়নযোগ্য জ্বালানি আইন প্রণয়ন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা, জাতীয় নবায়নযোগ্য জ্বালানি কমিশন গঠনের কথাও বলা হয় রায়ে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন