দেশের উত্তরাঞ্চলের কৃষকরা বেকায়দায় পড়ে গেছে। পানির অভাবে আমন ধানের চারা রোপণ করতে পারছেন না। কেউ কেউ মেশিন দিয়ে পানি তুলে জমি রোপণের জন্য প্রস্তুত করছেন। রংপুরের পীরগাছার কৃষক মো. মামুন বলেন, মেশিনের পানি দিয়ে জমিতে চারা রোপণ করলে অনেক খরচ পড়ে যায়। সে কারণে কৃষকদের অনেকেই চারা রোপণ করছেন না। তবে কেউ কেউ বাধ্য হয়েই শ্যালোমেশিনের পানি তুলে চারা রোপণ করছেন।
রংপুরের পীরগাছা, কাউনিয়া, গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ, নিলফামারীর সৈয়দপুর, ডোমাল, লালমনির হাটের আজিতমারি, পাঠগ্রাম জেলায় বিভিন্ন এলাকাল কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য পাওয়া গেছে। কৃষকরা বলছেন, এমনিতেই করোনার কারণে পণ্যের মূল্য কম। সবজি ঢাকায় পাঠানো যাচ্ছে না। তারপর বৃষ্টি না থাকায় আমন ধানের চারা রোপণ করতে পারছে না।
এদিকে আবহাওয়াবিদরা বলছেন, গত জুলাই মাস থেকে বৃষ্টিপাত কমে গেছে। গত মাসে দেশে স্বাভাবিকের চেয়ে ৫ দশমিক ১ শতাংশ কম বৃষ্টিপাত হয়েছে। ৪৯৬ মিলিমিটার বর্ষণ স্বাভাবিক হিসেবে ধরা হলেও বৃষ্টিপাত হয়েছে ৪৭১ মিলিমিটার। ঢাকার আবহাওয়া অফিস জুলাই মাসে আবহাওয়া পর্যালোচনা করে এ তথ্য জানিয়েছে। সবচেয়ে বেশি অর্থাৎ স্বাভাবিকের চেয়ে ৩৩ শতাংশ বর্ষণ বেশি হয়েছে খুলনায়। আর সবচেয়ে কম অর্থাৎ স্বাভাবিকের চেয়ে ২৯ দশমিক ১ শতাংশ কম বৃষ্টিপাত হয়েছে রাজশাহীতে।
আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, জুলাই মাসে খুলনা ও বরিশাল বিভাগে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি এবং ঢাকা, ময়মনসিংহ, সিলেট, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টিপাত হয়েছে।
সক্রিয় মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে ১ ও ২ জুলাই সারাদেশে মাঝারি ধরনের ভারি থেকে ভারিবর্ষণ হয়। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশ উপক‚লীয় এলাকায় সৃষ্ট নিম্নচাপ ও সক্রিয় মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে ২৭ থেকে ৩০ জুলাই সময়ে চট্টগ্রাম, বরিশাল ও খুলনা বিভাগের অনেক স্থানে ভারি থেকে অতি ভারিবর্ষণ হয়েছে। এ সময় মাসের দৈনিক সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত ৩২৮ মিমি টেকনাফে (২৭ জুলাই) রেকর্ড করা হয়। অতি ভারি বর্ষণজনিত কারণে চট্টগ্রাম অঞ্চলের কোথাও কোথাও ভূমিধস হয়।
গত ১১ জুলাই সকাল ৬টায় পশ্চিম-মধ্যবঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন উত্তরপশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছিল, যা পরবর্তীতে উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর ও দুর্বল হয়ে ১৩ জুলাই মৌসুমী অক্ষের সঙ্গে মিলিত হয়।
২২ জুলাই সকাল ৬টায় উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও বাংলাদেশ উপক‚লীয় এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়; যা ২৩ জুলাই লঘুচাপে পরিণত হয়। এটি পরবর্তীতে উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসরও দুর্বল হয়ে ২৪ জুলাই ভারতের মধ্যপ্রদেশ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় প্রথমে লঘুচাপে পরিণত হয় এবং আরাও দুর্বল হয়ে মৌসুমী অক্ষের সঙ্গে মিলিত হয়।
২৭ জুলাই উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশ উপকূলীয় এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়। যা ২৮ জুলাই বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাংশ ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়। এটি আরও ঘণীভূত হয়ে ২৯ জুলাই খুলনা-সাতক্ষীরা অঞ্চলের পার্শ্ববর্তী এলাকায় নিম্নচাপে পরিণত হয়। এরপর এটি উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর ও দুর্বল হয়ে সুস্পষ্ট লঘুচাপ আকারে ৩০ জুলাই ভারতের বিহার ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থাান নেয় এবং আরও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে সুস্পষ্ট লঘুচাপ আকারে ৩১ জুলাই ভারতের উত্তর প্রদেশ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করে।
এ মাসে দেশের সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা স্বাভাবিক অপেক্ষা যথাক্রমে ১ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং শূন্য দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল। এছাড়া বৃষ্টিপাত, নিম্নচাপ, কৃষি আবহাওয়া এবং দেশের নদ-নদীর অবস্থা জুলাই মাসের পূর্বাভাসের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ ছিল। মাঝে দু’দিনে কমে গিয়ে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা ফের বেড়েছে। খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগে ভারি বর্ষণের আভাস রয়েছে।
উত্তরাঞ্চলের কৃষকরা জানান, প্রায়ই আকাশ মেঘলা দেখা যায়। কিন্তু বৃষ্টি হয় না। বাধ্য হয়েই মেশিন দিয়ে পানি তুলে ধানের চারা রোপণের জন্য জমি প্রস্তুত করতে হচ্ছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন