রফিকুল ইসলাম সেলিম : ঢাকায় অনুষ্ঠেয় দলের জাতীয় সম্মেলনকে ঘিরে দারুণ উজ্জীবিত চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। আর নিজেদের ঘর গোছাতে ব্যস্ত দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকা মাঠের বিরোধী দল বিএনপি। চাটগাঁর মাঠের রাজনীতিতে কোন উত্তাপ না থাকলেও সাংগঠনিক কর্মকা-ে ব্যস্ত বড় দুই দল।
জাতীয় সম্মেলন ও কাউন্সিলকে ঘিরে আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে চাঙ্গা ভাব দেখা দিয়েছে। দলের জেলা ও মহানগরীর নেতারাও তাদের নিজেদের পক্ষে টানার চেষ্টা করছেন। বিএনপির জাতীয় কাউন্সিল শেষে মহানগর ও জেলা পর্যায়ে সংগঠনকে ঢেলে সাজানোর কাজ চলছে। এই প্রক্রিয়ায় শরিক হয়ে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা এখন সক্রিয়।
আগামী ২২ ও ২৩ অক্টোবর রাজধানী ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন ও কাউন্সিলকে ঘিরে এই অঞ্চলের নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য বিরাজ করছে। কেন্দ্রে পদপ্রত্যাশী নেতাদের তৎপরতা বেড়ে গেছে। সম্মেলনে ডেলিগেট কিংবা কাউন্সিলর হিসেবে যোগদিতেও শুরু হয়েছে তোড়জোড় ।
কেন্দ্রে ভাল পদ চান এমন নেতাদের বেশিরভাগ এখন ব্যস্ত নানা লবিং-তদবিরে। তৃণমূলের নেতাকর্মীরা দলের ঐতিহাসিক এ আয়োজনে শরিক হতে ঢাকায় যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। কেন্দ্রে যারা গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হতে চান তারাও নিজেদের পছন্দের নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে নিজের সমর্থনের পাল্লা ভারি করার আয়োজন করছেন।
জানা যায়, আওয়ামী লীগের ২০তম ওই জাতীয় কাউন্সিলে যোগ দেবেন চট্টগ্রাম অঞ্চলের কয়েক হাজার নেতাকর্মী। চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা কমিটির নেতাদের পাশাপাশি থানা, উপজেলা, পৌরসভা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতারা ডেলিগেট হিসেবে সম্মেলনে যোগ দেবেন। কারা ডেলিগেট হিসেবে সম্মেলনে যোগ দিতে পারবেন তাদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। এর বাইরেও বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী সম্মেলনে যাবেন। দলের এ বিশাল আয়োজনে শরিক হতে চান দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। তারাও কিভাবে সম্মেলনে যাওয়া যায় তার উপায় খুঁজছেন।
কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদপ্রত্যাশী নেতাদের তোড়জোড় থেমে নেই। তারা ভাল পদ পেতে নানা চেষ্টা তদ্বির অব্যাহত রেখেছেন। অনেকে আগেভাগেই ঢাকায় অবস্থান করে দলের নীতি-নির্ধারকদের নজর কাড়ার চেষ্টায় ব্যস্ত। গত কাউন্সিলের পর যারা কেন্দ্রে স্থান পেয়েছেন তারা আরও উপরে উঠতে চান। ভালপদ ভাগিয়ে নিতে তাদের চেষ্টার কমতি নেই। যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের পাশাপাশি দলের প্রবীণ নেতাদের পুত্র-কন্যারাও কেন্দ্রে ঠাঁই পেতে আগ্রহী, তাদের তৎপরতাও বেড়ে গেছে।
দলের সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী ফোরাম সভাপতিম-লীর সদস্য, উপদেষ্টা পরিষদ ও উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক এবং কেন্দ্রীয় কমিটির বিভিন্ন পদ পেতে কয়েক ডজন নেতা জোর তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। কমিটিতে থাকা বর্তমান নেতাদের কেউ কেউ পদোন্নতি পেয়ে কেন্দ্রীয় কমিটিতে বহাল থাকতে চান। তারাও ভালপদে যেতে নানা তৎপরতা অব্যাহত রেখেছেন।
বিগত ২০১২ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত ১৯তম জাতীয় সম্মেলন ও কাউন্সিলে চট্টগ্রামের বেশ কয়েকজন নেতা কেন্দ্রে পদ পান। দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য হন উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হন সাবেক এমপি ইসহাক মিয়া, ড. অনুপম সেন ও ড. প্রণব কুমার বড়ুয়া। প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক নির্বাচিত হন ড. হাছান মাহমুদ। সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ পান বীর বাহাদুর এবং সদস্য পদে ঠাঁই হয় আমিনুল ইসলাম আমিনের। এবারের কাউন্সিলে বর্তমান পদে থাকা কয়েকজন পদোন্নতি পেতে পারেন, আবার কয়েকজন বাদও পড়তে পারেন বলে মনে করেন দলের নেতারা। প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীকে দেখতে চান দলের অনেকে। তবে এ বিষয়ে তার নিজের কোন আগ্রহ নেই বলেও জানা গেছে। দলের উপদেষ্টা পরিষদেও এবার নতুন মুখ আসতে পারে।
গত নির্বাচনে চট্টগ্রাম থেকে নির্বাচিত এমপিদের কেউ কেউ এবার কেন্দ্রে ভাল পদ পেতে পারেন। বিশেষ করে পিতার মৃত্যুর পর রাজনীতিতে আসা ভূমিপ্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ দলের গুরুত্বপূর্ণ পদ পাবেন বলে মনে করেন তার অনুসারীরা। যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সাবেক ও বর্তমান কয়েকজন শীর্ষ নেতাও দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদ পেতে জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এবারের কাউন্সিলে দলের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তরুণদের অগ্রাধিকার দিয়ে দলকে সাজাবেন এমন প্রত্যাশা তাদের। বিএনপির কাউন্সিলের পর যে ডাউস কমিটি গঠন করা হয় তাতে চট্টগ্রামের বিপুলসংখ্যক নেতার ঠাঁই হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদেরও প্রত্যাশা বিএনপির মতো এতো বেশি না হলেও কেন্দ্রে চট্টগ্রামের উল্লেখযোগ্য নেতা পদ পাবেন।
এদিকে জাতীয় কাউন্সিলের পর দল গোছানোতে মনোনিবেশ করেছে বিএনপি। কেন্দ্র থেকে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির তিন সদস্যদের কমিটি ঘোষণা করে দেয়ার পর মহানগরীর পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের তাগিদ দেয়া হয়। এর মধ্যে মহানগর বিএনপিকে ঢেলে সাজানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এর অংশ হিসেবে মহানগরীর ৩৯টি ওয়ার্ড শাখা মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে তার মধ্যে ৩২টিতে বিএনপির শাখা কমিটির আহ্বায়কের নাম ঘোষণা করা হয়েছে।
নগরীর ৪১টি ওয়ার্ড কমিটির মধ্যে শুধু ৯ নম্বর উত্তর পাহাড়তলি এবং ১০ নম্বর কাট্টলী ওয়ার্ড কমিটিরই মেয়াদ আছে। বাকি কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ায় এসব কমিটি বাতিল করে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। ওয়ার্ড শাখা আহ্বায়ক কমিটিতে সর্বনিম্ন ৩১ সদস্য ও সর্বোচ্চ ৫১ সদস্য রাখা যাবে। মহানগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ডিসেম্বরের আগে প্রতি ওয়ার্ডে সম্মেলন করতে হবে। এরপর থানা কমিটি এবং মহানগর কমিটি গঠন করা হবে। এদিকে আজ পহেলা অক্টোবর থেকে মাসব্যাপী সদস্য সংগ্রহ ও ডাটাবেজ তৈরির কাজ শুরু করছে মহানগর বিএনপি।
মহানগর বিএনপির সভাপতি বলেন, তৃণমূল থেকে নেতৃত্ব তৈরির লক্ষ্যে ওয়ার্ড পর্যায়ে সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি গঠন করা হবে। তার ধারাবাহিকতায় মহানগর কমিটি চূড়ান্ত হবে। মহানগরীর মতো চট্টগ্রাম উত্তর ও দক্ষিণ জেলার কমিটি গঠন প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। আগামী নভেম্বরের মধ্যে এসব কমিটি চূড়ান্ত করতে কেন্দ্র থেকে তাগিদ দেয়া হয়েছে বলে জানান দলের নেতারা। মামলা, হুলিয়া ও হামলায় বিপর্যস্ত বিএনপিকে ফের ঘুরে দাঁড়াবার শক্তি অর্জন করতে হলে সংগঠনকে শক্ত ভিত দিতে হবে বলে মনে করেন দলের নেতারা আর সেই লক্ষ্যে তারা কাজ করছেন।
বিএনপির নতুন কমিটিতে চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিপুলসংখ্যক নেতা পদ পেয়েছেন। তারাও নিজ নিজ এলাকায় সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। আগামী দিনের আন্দোলন ও নির্বাচনকে সামনে রেখে দলকে সংগঠিত করার কাজ করছেন তারা। দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের সাথেও যোগাযোগ রাখছেন কেন্দ্রের এসব নেতারা। দলের নেতারা মনে করেন আগামী দিনে আন্দোলন আর নির্বাচন-দুটোতে সফল হতে হলে তাদের জনগণের কাছেই যেতে হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন