বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

মডেলিংয়ের আড়ালে বহুমুখী ব্যবসা

## অনৈতিক কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত বিত্তশালী ব্যবসায়ী পরিবারের সন্তান, কতিপয় রাজনৈতিক নেতা ও প্রশাসনের কতিপয় কর্মকর্তাদের তালিকা গোয়েন্দাদের হাতে ## পিয়াসা ও মৌ আবারো রিমান্ডে ## পরীমণি

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৭ আগস্ট, ২০২১, ১২:০০ এএম

চাকচিক্যময় জগতের আড়ালে একে একে বেরিয়ে আসছে বিতর্কিত মডেল-তারকাদের ভিন্ন রূপ। যারা রাজধানীর অভিজাত এলাকায় নিয়মিত পার্টির নামে মাদকের আসর জমাতেন। শুধু মাদকের আড্ডাতেই সীমাবদ্ধ ছিল না তাদের কর্মকান্ড। অবৈধ অস্ত্র, চোরাচালান এবং মাফিয়া চক্রের অনেকের সাথেই যোগাযোগ ছিল এদের। ঢাকার প্রথম সারির বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী পরিবারের সন্তানদের নিয়মিত বিতর্কিত মডেল-তারকাদের মাদক আড্ডায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় কাটানোর তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দারা। এ সব আড্ডায় সুন্দরীদের সাথে সময় কাটানো, মাদক সেবন এবং দেশের বাইরে ভ্রমণে গিয়ে ফ‚র্তি করার ছবি ও ভিডিও রয়েছে। আর এ সব আলামত প্রধানমন্ত্রীর কাছেও পৌঁছে গেছে গোয়েন্দাদের মাধ্যমে। বছরের পর বছর ধরে অনৈতিক কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত বিত্তশালী ব্যবসায়ী পরিবারের সন্তান, কতিপয় রাজনৈতিক নেতা ও প্রশাসনের কতিপয় কর্মকর্তাদের তালিকাও গোয়েন্দাদের হাতে রয়েছে। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে ওই তালিকাভুক্তদের নজরদারি করছে একটি গোয়েন্দা সংস্থা। বিতর্কিত মডেল-তারকাদের উত্থানের নেপথ্যে বিত্তশালী পরিবারের সন্তানদের সম্পৃক্ত থাকার প্রমাণও এখন গোয়েন্দাদের হাতে। একাধিক দায়িত্বশীল সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
অন্যদিকে বহুল আলোচিত গ্রেফতার চলচ্চিত্র নায়িকা পরীমণি, প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজ, আলোচিত মডেল ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা ও মরিয়ম আক্তার মৌয়ের মামলার তদন্তভার পেয়েছে সিআইডি। গতকাল শুক্রবার পুলিশ সদর দফতরের এক নির্দেশনায় মামলাগুলো সিআইডিতে হস্তান্তর করা হয়। চিত্রনায়িকা পরীমণি ও প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজসহ চারজনকে রিমান্ডে নিয়ে গোয়েন্দা কার্যালয়ে রিমান্ডে মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এছাড়া পৃথক তিনটি মাদক মামলায় কথিত মডেল ফারিয়া মাহবুব পিয়াসাকে ৮ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দিয়েছেন আদালত। আর মরিয়ম আক্তার মৌকে একটি মাদক মামলায় ৪ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দিয়েছেন আদালত। পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত গতকাল শুক্রবার এ আদেশ দেন।
গত বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলির সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, তথাকথিত কিছু সেলিব্রেটি সমাজে অপসংস্কৃতি ছড়াচ্ছে। তাদের মুখোশ উন্মোচনে কঠোর অভিযান চলছে। আশা করছি অন্যরাও সাবধান হবে। বিতর্কিত কর্মকান্ড দিয়ে তরুণ সমাজ ও জাতিকে যারা বিভ্রান্ত করছে, তাদের ছাড় দেয়া হবে না।
একটি গোয়েন্দা সংস্থার একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে গতকাল শুক্রবার দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, পিয়াসা-মৌ-পরীমণিদের আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতা কারা তার তথ্য আমাদের কাছে রয়েছে। গত কয়েক দিনের জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা তাদের কাছে নিয়মিত যাতায়াতকারী এবং অনৈতিক কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত ব্যবসায়ী পরিবারের সন্তান, কতিপয় রাজনৈতিক নেতা ও প্রশাসনের কতিপয় কর্মকর্তাদের তালিকা করা হয়েছে। প্রাথমিক তদন্ত শেষে এদের অনৈতিক কর্মকান্ডের ছবি ও ভিডিওসহ গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সরকারের উচ্চ পর্যায়ে পাঠানো হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, বিতর্কিত মডেল-তারকা, বিত্তশালী পরিবারের সন্তান ও প্রশাসনের কতিপয় কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে একটি বিশেষ সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। ওই সিন্ডিকেট মাদক ব্যবসা, অবৈধ অস্ত্র ও সোনা চোরাচালের সাথে সম্পৃক্ত থাকার মতো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। এসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এসব অপরাধের সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনা হবে।
একটি গোয়েন্দা সংস্থার একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, গত বুধবার পরীমণির বনানীর বাসায় যখন র‌্যাব অভিযান চালায় সে সময় দীর্ঘ এক ঘণ্টারও বেশি সময় তিনি দরজা খুলেননি। এ সময় ফেসবুক লাইফে এসে তিনি (পরীমণি) বলে হারুন ভাইয়ের সাথে কথা বললে তিনি (ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ) আমাকে দরজা খুলতে নিষেদ করেছেন। বিষয়টি আমাদের নজরে রয়েছে। পুলিশ কর্মকর্তাদের সাথে বিতর্কিত নায়িকা পরীমণির সম্পর্কের বিষয়টি তদন্ত করা দেখা হচ্ছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
সূত্র জানায়, পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে পরীমণি জানান, তুহিন সিদ্দিকী অমির সঙ্গে গত এপ্রিলে দুবাই যান তিনি। সেখানে বু ওয়াটার আইল্যান্ড নামে একটি কৃত্রিম দ্বীপে অমির ফ্ল্যাটে থাকেন ১৭ দিন। সেখানেই দু’জনের সখ্যতা গাঢ় হয়। দেশে ফিরে অমি পরীমণিকে সাভারের বোট ক্লাবে নিয়ে গিয়েছিলেন। পরবর্তীতে পরীমণির শ্লীলতাহানির চেষ্টার মামলার আসামিও হন।
দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, শ্লীলতাহানির চেষ্টার অভিযোগে পরীমণির করা মামলায় গ্রেফতার তার ‘বন্ধু’ অমির ফ্ল্যাট রয়েছে দুবাইয়ের বু ওয়াটার আইল্যান্ড নামে একটি কৃত্রিম দ্বীপে। দ্বীপটি দুবাইয়ের সবচেয়ে দামি জায়গা। সাধারণত সেখানে কোনো বাংলাদেশি ফ্ল্যাট কেনেন না। সেখানে ৪৫ লাখ ইউএই দিরহাম (বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১১ কোটি টাকা) দিয়ে ফ্ল্যাট কিনেছিলেন অমি।
মামলা তদন্তের সাথে জড়িত ডিবির একজন কর্মকর্তা জানায়, দুবাইয়ে সেই ফ্ল্যাটে বাংলাদেশে বেশ কয়েকজন চিত্রনায়িকা ও মডেলকে নিয়েছেন অমি। এছাড়া বাংলাদেশ থেকে দুবাইয়ে পাচার করা মেয়েদের ওই ফ্ল্যাটেই রাখেন তিনি। তবে সেখানে সবচেয়ে বেশি থেকেছেন মডেল রথী। দুবাইয়ে রথী নিজেকে অমির স্ত্রী পরিচয় দেন। এছাড়া এই চক্রের সঙ্গে যুক্ত আরেক মডেল হচ্ছেন শিরিন শিলা। শিরিন শিলা ক্যাসিনোকান্ডে গ্রেফতার ইসমাঈল চৌধুরী সম্রাটের সহযোগী আরমানের গার্লফ্রেন্ড ছিলেন। পাশাপাশি শিরিন সবসময় নিজেকে পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বান্ধবী হিসেবে পরিচয় দেন। এই দু’জন মূলত মাসিক ভিত্তিতে বড় বড় ব্যবসায়ী ও স্বনামধন্য ব্যক্তিদের সঙ্গে লিভ টুগেদার করেন। এজন্য তারা ‘মডেল’ পরিচয় ব্যবহার করেন। শিরিন শিলা অমির টাকায় মিরপুরে একটি ফ্ল্যাটও নিয়েছেন। অমির সঙ্গে এসব উঠতি মডেলদের পরিচয় করিয়ে দেন মিডিয়ার একজন পরিচিত ছেলে মডেল।
ডিবির যুগ্ম কমিশনার হারুন অর রশীদ বলেন, পরীমণির অন্ধকার জগতে পা রাখার পেছনে যারা পৃষ্ঠপোষক হিসেবে ছিলেন তাদেরও আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পরীমণিসহ চারজনকে রিমান্ডে আনা হয়েছে। তাদের আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করছি। তাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগে মামলা হয়েছে, সে বিষয়ে তদন্ত করছি। এছাড়া, অন্যান্য বিষয় নিয়েও কথা বলছি। তারা যে অন্ধকার জগতে পা রাখলেন, এর পেছনে কারা পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন- খতিয়ে দেখছি। এর মধ্যে একজন নারীর নামও পাওয়া গেছে, এছাড়া কস্টিউম ডিজাইনার জিমি রয়েছেন। ওদের বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছি। এছাড়া আরো যারা পেট্রোনাইজ করেছেন তাদের বিষয়েও খোঁজখবর নিচ্ছি। আশা করছি, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পারব।
গ্র্রেফতার রাজের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, রাজ বিভিন্ন জনকে তথাকথিত মডেলদের সরবরাহ করে মনোরঞ্জনের ব্যবস্থা করতেন। তার কোনো লেখাপড়া নেই। তার এ অবস্থায় আসার পেছনে সমাজের খারাপ কিছু মানুষ দায়ী, যাদের নাম সে বলেছে। আমরা জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছি মাত্র, পরে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে। কিছু বড়লোক বা তাদের সন্তানদের নাম এসেছে, আমরা সবার নামই নোট করছি, এ বিষয়ে পরে জানা যাবে।
তিনি বলেন, এ সমাজে যারা অবৈধভাবে টাকা ইনকাম করে বিত্তশালী হয়েছেন তাদের সন্তানরা এইসব রাতের অবৈধ পার্টিতে যাচ্ছেন এবং অনৈতিক কর্মকান্ডে লিপ্ত হচ্ছেন। সমাজের তথাকথিত যারা বিত্তশালী রয়েছেন যারা মাদক ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, তাদের সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে।
প্রযোজক রাজের বিরুদ্ধে এবার পর্নোগ্রাফি আইনে মামলা : মাদক ও অবৈধ সরঞ্জামসহ র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজের বিরুদ্ধে আরো একটি মামলা হয়েছে। মাদক আইনে মামলার পর এবার তার বিরুদ্ধে পর্নোগ্রাফি আইনে একটি মামলা হয়েছে। ডিএমপির বনানী থানায় র‌্যাব বাদী হয়ে মামলাটি করে। মামলায় রাজের সহযোগী সবুজ আলীকে দুই নম্বর আসামি করা হয়েছে। পর্নোগ্রাফি আইনে মামলার আগে র‌্যাব বাদী হয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে রাজের বিরুদ্ধে আরো একটি মামলা করে। সেই মামলায়ও রাজের সহযোগীকে আসামি করা হয়।
আবার রিমান্ডে পিয়াসা-মৌ : মডেল ফারিয়া মাহবুব পিয়াসার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া পৃথক তিন মামলায় আবারো আট দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গুলশান থানার মামলায় দুই দিন, ভাটারা থানার মামলায় তিন দিন এবং খিলক্ষেত থানার মামলায় তিন দিন রিমান্ড মঞ্জুর হয় পিয়াসার। গতকাল শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টায় তিন দিনের রিমান্ড শেষে তাকে আদালতে হাজির করে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ। পরে গুলশান থানার মামলায় সাত দিন, ভাটারা থানার মামলায় ১০ দিন এবং খিলক্ষেত থানার মামলায় সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়।
এ সময় আসামিপক্ষের আইনজীবী জামিল সিদ্দিকি বাপ্পি রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিনের আবেদন করেন। অপরদিকে, রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু রিমান্ডের জোর দাবি জানান। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রাজেশ চৌধুরী রিমান্ডের এ আদেশ দেন। এছাড়াও মডেল মরিয়ম আক্তার মৌয়ের মাদক মামলায় ফের ৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সতব্রত সিকদার শুনানি শেষে রিমান্ডের এই আদেশ দেন। এদিন দুপুর সাড়ে ১২টায় তিন দিনের রিমান্ড শেষে আদালতে হাজির করা হয় মডেল মরিয়ম আক্তার মৌকে। এ সময় ফের ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ। আসামিপক্ষের আইনজীবী রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিনের আবেদন করলে রাষ্ট্রপক্ষ এর বিরোধিতা করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক রিমান্ডের এই আদেশ দেন।
পরীমণি-পিয়াসা-মৌ-রাজের মামলা সিআইডিতে : বহুল আলোচিত গ্রেফতার চলচ্চিত্র নায়িকা পরীমণি, প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজ, আলোচিত মডেল ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা ও মরিয়ম আক্তার মৌয়ের মামলার তদন্তভার পেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গতকাল শুক্রবার পুলিশ সদর দপ্তরের এক নির্দেশনায় মামলাগুলো সিআইডিতে হস্তান্তর করা হয়।
সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আজাদ রহমান দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, চিত্রনায়িকা পরীমণি, প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজ, মডেল ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা ও মরিয়ম আক্তার মৌয়ের মামলাগুলো সিআইডিতে হস্তান্তর করা হয়েছে। এর ফলে মামলাগুলো এখন থেকে তদন্ত করবে সিআইডি। আসামিদেরও সিআইডি কার্যালয় নিয়ে আসা হবে। সা¤প্রতিক সময়ে গ্রেফতার হওয়ার পর আলোচিত চারজনই ভিন্ন ভিন্ন মামলায় ডিবি হেফাজতে রিমান্ডে রয়েছেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন