চট্টগ্রাম ব্যুরো : চট্টগ্রাম মেট্রোপলিন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনারের সঙ্গে বৈঠকের পর প্রাইম মুভার-ট্রেইলর ধর্মঘট ৪ অক্টোবর পর্যন্ত স্থগিত করেছে প্রাইম মুভার মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। গতকাল (শুক্রবার) তাদের এই ঘোষণার ফলে চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য পরিবহনে জটিলতার আপাত অবসান হলো। দুপুরের পর থেকে আমদানি-রফতানি পণ্যবাহী কন্টেইনার পরিবহন শুরু হয়েছে। টানা প্রায় ৫ দিনের অচলাবস্থা শেষে ফের সচল হয়েছে কন্টেইনারে পণ্যপরিবহন।
নির্ধারিত পরিমাণের অতিরিক্ত ওজন বহনে জরিমানার নিয়ম বাতিলসহ সাত দফা দাবিতে গত সোমবার প্রাইম মুভার-ট্রেইলর মালিক-শ্রমিকরা ধর্মঘটে যাওয়ার পর চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেনারের পাহাড় জমে। চট্টগ্রাম বন্দরের ইতিহাসে সর্বোচ্চ সংখ্যক কন্টেইনারের স্তূপ জমে বন্দরের জেটি ও ইয়ার্ডে। আটকা পড়ে তিন হাজার কোটি টাকার রফতানি পণ্য যার বেশির ভাগ তৈরী পোশাক। রফতানি পণ্যবোঝাই কন্টেইনার ছাড়াই গত কয়েকদিনে বেশ কয়েকটি জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দর ছেড়ে যায়। এতে ক্ষতির মুখে পড়ে রফতানিকারকরা।
পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে দফায় দফায় বৈঠক হয়। তবে কোন দাবি মেনে নেওয়ার আগে ধর্মঘট প্রত্যাহার না করার বিষয়ে অনঢ় থাকে আন্দোলনকারীরা। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসকের সাথে বৈঠকে কোন সিদ্ধান্ত না হওয়ায় তাদের দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে চট্টগ্রাম জেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপ এবং বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন রোববার থেকে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধের ঘোষণা দেয়।
এই পরিস্থিতিতে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য সচলের লক্ষ্যে ধর্মঘট আহ্বানকারীদের সঙ্গে গতকাল সকালে বৈঠকে বসেন সিএমপির কমিশনার ইকবাল বাহার। তিনি তাদের দাবি দাওয়া মেনে নেয়ার আশ্বাস দেন। বৈঠকে বসেই পুলিশ কমিশনার সরাসরি সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সাথে কথা বলেন। তিনিও ওই ৭ দফা দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাস দেন বলে জানা গেছে। বৈঠক শেষে প্রাইম মুভারগুলোতে সাড়ে ৪২ টন পর্যন্ত ওজন বহনের অনুমতি মেলার আশ্বাসে ধর্মঘট স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানান ঐক্য পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক গোলাম মাওলা।
মহাসড়কে পণ্যবাহী গাড়ির অতিরিক্ত চাপ কমাতে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ গত ১৬ আগস্ট গাড়ি ভেদে পণ্য পরিবহনের ওজন নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। তাতে ১৪ চাকার প্রাইম মুভারকে সর্বোচ্চ ৩৩ টন পর্যন্ত মালামাল বহনের সীমা বেঁধে দেয়া হয়। প্রাইম মুভার-ট্রেইলর মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের অভিযোগ, আকস্মিক এই সিদ্ধান্তের কারণে দাউদকান্দি মেঘনা-গোমতী সেতুতে তাদের যান আটকে জরিমানা করা হচ্ছিল। সেখানে তাদের মারধরও করা হয়।
তারা বলছেন, কন্টেইনারের ওজনের বিষয়ে তাদের কিছু করার না থাকলেও প্রাইম মুভারে ৩৩ টনের পর প্রতি টনের জন্য তাদের দুই হাজার টাকা করে জরিমানা গুণতে হচ্ছে। পুলিশ কমিশনার ৪২ টন পর্যন্ত ওজন বহনের অনুমতি পাওয়া ছাড়াও তার চেয়ে বেশি ওজন বহনের জরিমানা কন্টেইনার মালিকদের কাছ থেকে আদায়ের ব্যবস্থা করার আশ্বাস দিয়েছেন বলে গোলাম মাওলা জানান।
চট্টগ্রাম প্রাইম মুভার-ট্রেইলর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির বলেন, আমাদের দাবি-দাওয়া নিয়ে ৪ অক্টোবর আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে সিদ্ধান্ত হবে। সেই পর্যন্ত কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে। আন্তঃমন্ত্রণালয় সভার সিদ্ধান্ত দেখে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে জানান মালিক-শ্রমিক নেতারা।
পুলিশ কমিশনার ইকবাল বাহার বলেন, একটি কন্টেইনার আন্তর্জাতিকভাবে কত ওজন নিয়ে কিভাবে চলাচল কর এটি নির্ধারিত। এবিষয়টি খেয়াল রেখে আইনটি যাতে যথাযথ হয় সে জন্য আগামী ৪ তারিখের মিটিং। সেখানে এবিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত হবে জানিয়ে তিনি বলেন, আশাকরি এর ফলে আর এমন সংকট হবে না। ধর্মঘট আহ্বানকারীরা ৪ অক্টোবর পর্যন্ত তাদের কর্মসূচি স্থগিত করেছেন বলেও জানান তিনি।
এদিকে এই ধর্মঘটের ফলে বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দরে ২০ ফুট দৈর্ঘ্যে ৪০ হাজার ২৫৯টি কন্টেইনার জমে গিয়েছিল। চট্টগ্রাম বন্দরে মোট কন্টেইনার ধারণ ক্ষমতা ৩৬ হাজার ৩৫৭ টিইইউএস, ফলে অতিরিক্ত কন্টেইনার নিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছিল বন্দর কর্তৃপক্ষকে। এই পরিস্থিতি উদ্বেগ জানিয়ে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য স্বাভাবিক করতে ধর্মঘট অবসানে পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছিল চট্টগ্রাম চেম্বার, মেট্রোপলিটন চেম্বার ও ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন