তৈরি পোশাক ব্যবসায়ী পরিচয় দিয়ে প্রতারণার ফাঁদে ফেলা একটি চক্রের প্রধান আব্দুল কাইয়ুম ছোটন ওরফে ইশতিয়াক ওরফে মেহেদী নামে একজনকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি। এ কে ফ্যাশনস নামে একটি প্রতিষ্ঠান খুলে কারখানা পরিদর্শনের নামে গাড়ি ভাড়া করে তা বিক্রি করে দিত চক্রটি। তিন মাসে ২২টি গাড়ি এভাবে বিক্রি করেছেন এ চক্রের সদস্যরা। গাড়ি ভাড়া নিয়ে তা মালিককে না জানিয়ে বিক্রি করে চারমাসের মধ্যে কয়েক কোটি টাকার মালিক হয়েছে মেহেদী। প্রতারক এই ব্যক্তিকে তার সহযোগীকেও গ্রেফতার করেছে সিআইডি। উদ্ধার করা হয়েছে তার বিক্রি করা গাড়িও। গতকাল সোমবার সিআইডি সদর দফতরে বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তা ধর এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, মেহেদীর গ্রামের বাড়ি কক্সবাজারের চকরিয়া এলাকায়। তিনি কক্সবাজারে প্রত্যাশা নামে একটি এনজিওতে কাজ করতেন। প্রতারণার জন্য সেখান থেকে চাকরিচ্যুত হন। এরপর ঢাকায় এসে গাজীপুর বোর্ডবাজার এলাকার শহীদ সিদ্দিক লেনের ৫৮৫ নম্বর চার তাল বাড়ির দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলা ভাড়া নিয়ে ‘একে ফ্যাশন’ নামে একটি পোশাক কারখানা চালু করেন। কারখানার মেশিন সব ভাড়া নেন। ২০২০ সালের ২৯ ডিসেম্বর তিনি ২১০ জন শ্রমিক নিয়ে পোশাক কারখানাটি চালু করেন। কারখানায় টি-শার্ট, পোলো শার্ট, প্যান্ট ও জ্যাকেট তৈরি হতো। এর তিন-চার মাসের মাথায় ছোটন ফেসবুকের বিভিন্ন ‘রেন্ট-এ কার’ পেজে গাড়ি ভাড়া নেবেন বলে বিজ্ঞাপন দেন। এরমধ্যে রেন্ট-এ কার বিডি, রেন্ট-এ কার গাজীপুর ও রেন্ট-এ কার ঢাকা পেজে বেশি বিজ্ঞাপন দেন। বায়ারদের জন্য ভাড়া করা এসব গাড়ি নেয়া হবে বলেও বিজ্ঞাপনে উল্লেখ করেন ছোটন। গাড়ির মালিকদের তিনি তার গাজীপুরের পোশাক কারখানায় যেতে বলেন। গাড়ির মালিকরা সেখানে গেলে তাদের সঙ্গে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়। বিলাসবহুল দামি গাড়ি মাসিক ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকায় ভাড়া নেন ছোটন। তবে তিনি গাড়ির মালিকদের শর্ত দেন, বায়ারদের নিয়ে যেহেতু রাতে চলাচল করতে হবে, তাই গাড়িতে তার নিজের চালক থাকতে হবে। এ ছাড়া গাড়ির মালিকের দেয়া চালক তিনি নেবেন না। ট্রাফিক পুলিশ গাড়ি ধরলে আসল কাগজপত্র দেখাতে হবে, তাই গাড়ির সকল আসল কাগজপত্রও রেখে দেন ছোটন। তার কথায় গাড়ির মালিকরা সব শর্তে রাজি হন।
বিশেষ পুলিশ সুপার জানান, গাড়ি ভাড়া নেয়ার পর প্রথম মাস মালিকদের ভাড়া ঠিকমতোই দিতেন ছোটন। পরের মাস থেকে নয়-ছয় শুরু করেন কথিত এই গার্মেন্টস ব্যবসায়ী। এমনকি মালিককে না জানিয়ে গাড়িও বিক্রি করে দেন। গত ফেব্রæয়ারি- মে, এই চার মাসে আমরা জিজ্ঞাসাবাদে জেনেছি; তিনি ২০ থেকে ৩০টি গাড়ি ভাড়া নিয়েছেন। গাড়ির কন্ডিশন দেখে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকায় ভাড়া নেন। সেগুলো পরবর্তীতে নকল কাগজপত্র তৈরি করে কম দামে বিক্রি করে দিয়েছেন। করোনা পরিস্থিতিতে বিআরটিএ অফিস বন্ধ থাকায় ক্রেতারা এসব কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করতে পারেননি।
তিনি আরও বলেন, আলমগীর নামে ছোটনের একজন সহযোগী রয়েছে। তিনি এসব গাড়ি বিক্রি করতে সহযোগিতা করতেন। এ ছাড়াও তুরাগ থানার ‘নাজমুল অটোপাস সেন্টার’ এই গাড়ি বিক্রির সঙ্গে জড়িত। ১৯ লাখের গাড়ি ১৩ থেকে ১৪ লাখ টাকা বিক্রি করা হতো। এই প্রতারণা তারা মার্চ ও এপ্রিল মাসে বেশি করেন। গাড়ির বিক্রির সময় ছোটন ক্রেতাদের বলতেন, পোশাক কারখানার শ্রমিকদের বেতন দিতে হবে, তাই গাড়ি বিক্রি করে দেবেন। এভাবে চার মাসে তিনি ২৫ থেকে ৩০টি গাড়ি বিক্রি করেছেন। পরবর্তী সময়ে গাড়ির বিক্রির ৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা নিয়ে আত্মগোপনে চলে যান তিনি। এসব ঘটনায় গাজীপুর ও ঢাকায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা মামলা করেন। সিআইডি তদন্তে নেমে চক্রের পুরো সিন্ডিকেটকে গ্রেফতার করেছে বলেও জানান মুক্তা ধর।
ওই কর্মকর্তা জানান, ছোটনের সহযোগী আব্দুল হাই, আলমগীর, নাজমুল ও সানীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ছাড়াও চোরাই গাড়ি যারা ক্রয় করেছে তাদের মধ্যে রানা ও শামীম নামে দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে মোট সাতটি গাড়ি। এর মধ্যে অনেক ক্রেতা যখন জানতে পেরেছেন তারা চোরাই গাড়ি কিনেছেন, তখন নিজেরাই থানায় জিডি করে এর মালিককে পুনরায় গাড়ি ফেরত দিয়েছেন বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানান বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তা ধর।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন