চিত্রনায়িকা পরীমণিসহ গ্রেফতার কথিত মডেলদের সঙ্গে ‘সম্পর্ক’ ফাঁসের হুমকি দিয়ে চাঁদা দাবির ঘটনায় অনেকে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে বাসা-বাড়িতে থাকা বন্ধ করে দিয়েছেন। পরীমণিকে জড়িয়ে গোয়েন্দা পুলিশের এডিসি গোলাম সাকলায়েনের ঘটনায় পুরো পুলিশ বাহিনী বিব্রত। সাকল ায়েনকে ডিবি থেকে বদলি করা হয়েছে। তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
গতকাল মঙ্গলবার ডিএমপি সদর দফতরে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে পুলিশ কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম ওই কথা বলেন। মডেলদের সঙ্গে সম্পর্ক ফাঁসের হুমকি দিয়ে একটি চক্র সমাজের বিশিষ্টজনদের কাছে ফোন করে চাঁদা দাবি করছে। এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অনেকেই এ ভয়ে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে বাড়িতে থাকা বন্ধ করে দিয়েছেন। পুলিশের কাছে তারা জানতে চাচ্ছেন-আমরা কী বাড়িতে থাকব? আমি বললাম কেন? তারা বলছেন, আমাকে তো ওমুক মিডিয়া থেকে ফোন করে বলেছে পরীমণি নাকি রিমান্ডে আমার নাম বলেছে! অথবা পিয়াসা আমার নাম বলেছে! আমি তাকে বলেছি, ভাই আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগটা কী? কোনো মামলা হয়েছে? তখন সে বলেন-কখন কে-কি করে তাতো জানি না।
কমিশনার আরো বলেন, একাধিক ব্যক্তি আমাদের কাছে এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে জানিয়েছেন, মডেল ইস্যুতে তাদের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে এমন ব্যক্তিদের তালিকার কথা বলে তাদের কাছে চাঁদা চাওয়া হচ্ছে। তাদের বলা হচ্ছে, আপনি যদি এই পরিমাণ অর্থ না দেন, তাহলে আমাদের কাছে যে তথ্য আছে তা দিয়ে নিউজ করে দেব। এসব নিউজ করে হয়তো তাদের সামাজিকভাবে হেনস্তা করা যাবে কিন্তু আইনগতভাবে তারা কোনো অপরাধ করেছেন বলে আমি মনে করি না।
যাদের ফোন দিয়ে চাঁদা চাওয়া হচ্ছে তারা মামলা করছেন না কেন? এমন প্রশ্নে কমিশনার বলেন, তারা সামাজিক মর্যাদার জায়গায় আছেন বলেই মামলা করতে চাচ্ছেন না। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যদি পরীমণি বলে আমাকে সিনেমার নায়িকা বানানোর জন্য ওমুক ব্যক্তি আমার সঙ্গে খারাপ আচরণ করেছে। সেটি একটি মামলার বিষয় হতে পারে। সেই ক্ষেত্রে ব্যবসায়ী আসামি হতে পারে অথবা ওই ব্যবসায়ী যদি বলে পরীমণি ফাঁদে ফেলে আমার কাছ থেকে দুই কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এমন কোনো অভিযোগ কী পরীমণির পক্ষ থেকে করা হয়েছে? অথবা ব্যবসায়ীর পক্ষ থেকে পুলিশের কাছে কি অভিযোগ করা হয়েছে? কোনোটিই করা হয়নি। তো পুলিশ কেন তালিকা করবে? পুলিশের পক্ষ থেকে এমন কোনো তালিকা তৈরি হচ্ছে না।
সিআইডি থেকে সাংবাদিকদের বলা হচ্ছে, বø্যাকমেইলের বিষয়ে তারা (সিআইডি) বেশকিছু অভিযোগ পেয়েছে। এমন প্রশ্নে ডিএমপি কমিশনার বলেন, তারা যদি অভিযোগ পেয়ে থাকে তাহলে তাদের অনুরোধ করব থানায় মামলা করার। মামলা তো সিআইডিতে হবে না, মামলা থানায় অথবা আদালতে হবে। মামলা হওয়ার পরে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেন, মামলাটি সিআইডি তদন্ত করছে। আমি নিজেও সিআইডি প্রধানের সঙ্গে কথা বলেছি। সিআইডি প্রধান বলেছেন, এ ধরনের তালিকা তৈরি করা অথবা কাউকে আটক করার আইনগত কোনো ভিত্তি নেই এবং এ ধরনের কোনো কাজ পুলিশের কোনো সংস্থা করছে না।
তিনি আরো বলেন, পরীমণির বাসায় যে মাদক পাওয়া গেছে এক্ষেত্রে পরীমণি বলেছেন তার কাছে লাইসেন্স আছে। লাইসেন্স থাকলেও তার কাছে কতটুকু মদ ছিল, লাইসেন্স অনুযায়ী সে কতটুকু মদ নিতে পারেন, এসবের বৈধতা আছে কি-না এগুলো তদন্ত করে ওই মামলায় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মামলার তদন্ত করতে গিয়ে চিত্রনায়িকা পরীমনির সঙ্গে ডিএমপির গুলশান জোনের এডিসি গোলাম সাকলায়েন শিথিলের প্রেমের ঘটনা নিয়ে পুলিশ বিব্রত বলে জানিয়েছেন কমিশনার শফিকুল ইসলাম। এ নিয়ে পুলিশ বিব্রত জানিয়ে ডিএমপি কমিশনার বলেন, বোট ক্লাবের ঘটনায় পরীমণির মামলাটি হয়েছে ঢাকা জেলায়। এই মামলার সঙ্গে সাকলায়েনের কোনো সম্পর্ক নেই। একজন বিসিএস ক্যাডার অফিসার এমন অনৈতিক কাজে জড়াবে এটা মানা যায় না।
তিনি বলেন, সাকলায়েনের ঘটনাটি অপরাধ নয়। এটি আইনের চোখে ছোট অপরাধ। তবে চাকরিবিধি ও শৃঙ্খলা ভঙ্গ হয়েছে। চাকরি বিধি আর আইন আলাদা। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। ডিএমপি কমিশনার আরও বলেন, পরীমণির ঘটনার পরে আন্ডার ওয়ার্ল্ড নিয়ে পুলিশ একটু নড়েচড়ে বসেছে। আন্ডার ওয়ার্ল্ড আমাদের সামনে এসেছে। তদন্ত করে আমরা দেখলাম অনেক অনৈতিক কাজ হচ্ছে। তখন আমরা একটি অভিযানে গেলাম। এ ধরনের কার্যকলাপ যদি চলে তাহলে অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান চালানো হবে। ধর্মীয় দৃষ্টিতে এটা বড় ধরনের অপরাধ হলেও বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী এটা খুব ছোট একটি অপরাধ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন