নাছিম উল আলম : দেশের উপকূল রক্ষীবাহিনী ‘বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের জন্য খুলনা শিপইয়ার্ডে ৩টি ‘ইনশোর পেট্রোল ভেসেল-আইপভি’র নির্মাণ কাজের আনুষ্ঠানিক আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালÑ এমপি।
২০১৫ থেকে ’৩০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের জন্য স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সম্পূর্ণ দেশীয় ২৭০ কোটি টাকার তহবিলের মাধ্যমে এসব আইপিভি নির্মিত হচ্ছে। শনিবার ৩টি আইপিভি’র ‘কিল লেয়িং’ সম্পন্ন হবার মধ্য দিয়ে খুলনা শিপইয়ার্ড দেশের নৌ-নির্মাণ শিল্পে এক নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করতে যাচ্ছে। পাশাপাশি বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডও তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে আধুনিক প্রযুক্তির নৌযান সংগ্রহের নতুন পথে যাত্রা করবে। আগামী ৩০ মাসের মধ্যে খুলনা শিপইয়ার্ড এসব নৌযান কোস্টগার্ডের কাছে হস্তান্তর করবে।
৫০.৪০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৭.৫০ মিটার প্রস্থ এসব নৌযানের গভীরতা ৪.১০ মিটার। ২ হাজার ১শ’ অশ্বশক্তির ২টি করে মূল ইঞ্জিন সমৃদ্ধ এসব নৌযান ঘণ্টায় ২৩ নটিক্যাল মাইল বা ৪২.৫৫ কিলোমিটার বেগে দেশের অভ্যন্তরীণ ও উপকূলীয় নৌপথ অতিক্রম করতে পারবে। নৌযানগুলোতে ১শ’ কিলোওয়াটের ২টি করে জেনারেটরও স্থাপন করা হবে। ৩শ’ টন ডিসপ্লেসমেন্ট ক্ষমতার এসব নৌযানে ৪৬ জন কোস্টগার্ড সদস্য থাকবে।
কেস্টগার্ডের জন্য নির্মিতব্য এসব আইপিপিভি’র নকশা প্রণয়নসহ পুরো নির্মাণ কাজের তদারকি করছে অন্তর্জাতিক নৌ জরিপ ও তদারকি প্রতিষ্ঠান ‘চায়না ক্লাসিফেকেশন সোসাইটি’। প্রতিটি ইনশোর পেট্রোল ভেসেলে ২টি করে ৩০ মিলিমিটার সেমি অটোমেটিক গান ছাড়াও ২টি করে ১৪.৫ মিলিমিটার সেমি অটোমেটিক গান ও দুটি করে এলএমজি থাকছে। অত্যাধুনিক প্রযুক্তির এসব আইপিভি’তে ২টি করে নেভিগেশনাল রাডার, দুটি করে কমিউনিকেশন হাই ফ্রিকোয়েন্সি ওয়ারেলস ছাড়াও ১টি করে ভিএইচএফ ওয়ারলেস সেট সংযোজন করা হবে।
দেশের বিশাল সমুদ্র সীমা ও উপকূলীয় এলাকা রক্ষায় বাংলাদেশ কোস্টগার্ড অতন্দ্রপ্রহরীর ভূমিকা পালন করছে। দেশের অপার মৎস্য সম্পদ রক্ষাসহ সমুদ্র উপকূলীয় পথে চোরাচালান প্রতিরোধেও বিশাল ভূমিকার বিষয়টি বিবেচনা করে সরকার কোস্টগার্ডের জন্য অত্যন্ত দ্রুতগতি ও আধুনিক প্রযুক্তি সমৃদ্ধ এসব নৌযান তৈরি করার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে বলে জানা গেছে।
অতীতে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জন্য যুদ্ধ জাহাজ নির্মাণে খুলনা শিপই্য়ার্ড তার দক্ষতা ও গুণগত মানের স্বাক্ষর রেখেছে। প্রতিষ্ঠানটি গত ৬০ বছরের কর্মকা-ে নানাভাবেই দক্ষতার পরিচয় বহন করছে। বিশেষ করে ১৯৯৯ সালের অক্টোবরে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর কাছে হস্তান্তরের পরে রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে খুলনা শিপইয়ার্ড। এ নৌনির্মাণ প্রতিষ্ঠানটি গত অর্থ-বছরে সর্বকালের সর্বোচ্চ প্রায় ৬৫ কোটি টাকা মুনাফা অর্জনে সক্ষম হয়। খুলনা শিপইয়ার্ড বিগত দিনে ৭১৯টি নতুন নৌযান নির্মাণ ছাড়াও আরো ২ হাজার ২শ’ ১৯টি মাঝারি ও বড় মাপের নৌযানের মেরামত সাফল্যজনকভাবে সম্পন্ন করেছে।
খুলনা শিপইয়ার্ড ইতোপূর্বে বাংলাদেশ নৌ-বাহিনীর জন্য মাঝারি মাপের ৫টি যুদ্ধ জাহাজ তৈরি ও হস্তান্তর শেষে এখন বড় মাপের দুটি যুদ্ধ জাহাজ নির্মাণ করছে। এছাড়াও প্রতিষ্ঠানটি দেশে সর্বপ্রথম কন্টেইনার জাহাজ নির্মাণের গৌরব অর্জন করেছে। নৌ ফাউন্ডশনের জন্য নির্মিত ওইসব কন্টেইনার জাহাজ হস্তান্তরের পরে বর্তমানে রাষ্ট্রীয় জাহাজ চলাচল প্রতিষ্ঠান-বিআইডব্লিউটিসি’র জন্যও অনুরূপ ২টি কন্টেইনার জাহাজ তৈরি করছে শিপইয়ার্ডটি। নৌবাহিনীর নিয়ন্ত্রণাধীন খুলনা শিপইয়ার্ড দেশে প্রথমবারের মতো দুটি সাবমেরিন টাগও তৈরি করছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন