ইনকিলাব ডেস্ক : জম্মু ও কাশ্মীর সীমান্তে দুই প্রতিবেশী ভারত ও পাকিস্তানের সেনাদের মধ্যে গোলাগুলি অব্যাহত রয়েছে বলে খবর দিয়েছে রয়টার্স। উভয় দেশের সেনা কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, শনিবার সকালে জম্মু ও কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ রেখায় গোলাগুলি হয়েছে। তবে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত গোলাগুলিতে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় উভয় পক্ষ গোলাগুলি শুরুর জন্য পরস্পরকে দায়ী করছে বলেও জানিয়েছে রয়টার্স। দুই দিন আগে ভারতীয় সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলওসি) অতিক্রম করে কাশ্মীরের পাকিস্তান অংশে সন্দেহভাজন জঙ্গি ঘাঁটিতে অভিযান চালানোর কথা জানায়। অবশ্য পাকিস্তান বলছে, ভারতের দাবি অতিরঞ্জিত। সীমান্তে দুই পক্ষের গোলাগুলিতে দুই পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়েছে। পরে পাক সেনাবাহিনী এক ভারতীয় সেনাকে অস্ত্রসহ পাকড়াও এবং গোলাগুলিতে অন্তত ৮ ভারতীয় সেনা নিহত হওয়ার খবর দেয়।
ভারত তাদের এক সেনা ধরা পড়ার খবর স্বীকার করে বলে, অসাবধানতাবশত ভারতীয় ওই সেনা নিয়ন্ত্রণ রেখা অতিক্রম করে ফেলেছে। তবে আট সেনা নিহত হওয়ার খবর ভুয়া বলে তারা উড়িয়ে দেয়। গত ১৮ সেপ্টেম্বর লাইন অব কন্ট্রোলের কাছে ভারতীয় সেনা ঘাঁটিতে চার ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’র হামলায় ১৮ সেনা নিহত হওয়ার পর থেকে প্রতিবেশী দেশ দুইটির মধ্যে উত্তেজনা চলছে। ভারতের দাবি, পাকিস্তান ভিত্তিক সন্ত্রাসীরা এ হামলা চালিয়েছে। গতকাল শনিবার ভারতীয় সেনাবাহিনীর শীর্ষ এক কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, পাকিস্তানি সেনারা আজ জম্মুর আঁখনূর এলাকার পাল্লানওয়ালা সেক্টরে যুদ্ধবিরতি আইন লঙ্ঘন করেছে। তিনি বলেন, “তারা ছোট অস্ত্র নিয়ে আমাদের পাঁচটি পোস্টে হামলা চালিয়েছে। জবাবে আমরাও গুলি চালিয়েছি। যদিও গোলাগুলিতে (আমাদের) কেউ হতাহত হয়নি।” অন্যদিকে পাকিস্তানের একজন সেনাকর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, বিনা উসকানিতে ভারতীয় সেনাবাহিনীর গুলির যোগ্য জবাব দিয়েছে পাকিস্তানের সেনারা।
রাহিল শরিফ কি প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে উঠবেন?
পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল রাহিল শরিফ ভারতকে ইঙ্গিত করে বলেছেন, শত্রুপক্ষের সব রকম আঘাতের যথাযথ প্রত্যুত্তর দেবে পাকিস্তান। কোনও বিদ্বেষমূলক প্রচারণা চালিয়ে পাকিস্তানকে দমিয়ে রাখা যাবে না। খবর টাইমস অব ইন্ডিয়ার। ভারত আশংকা করছে, জেনারেল শরিফ প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে উঠবেন। তার অন্যতম কারণ ভারতের সঙ্গে ১৯৬৫ সালের যুদ্ধে জেনারেল শরিফের চাচার মৃত্যু হয়। আর ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে নিহত হন তার ভাই। এ জন্যই জেনারেল শরিফের মধ্যে তীব্র ভারতবিরোধী মনোভাব বিদ্যমান। পাকিস্তানের সেনাপ্রধান এ বছরের নভেম্বরেই অবসরে যাচ্ছেন। তবে অবসরে যাওয়ার আগে তিনি ভারতের বিরুদ্ধে কঠিন প্রতিশোধ নিতে চান বলেই ধারণা করছে ভারত। তার কার্যক্রমে প্রতিবেশী দেশের ভাবনার প্রতিফলনও দেখা গেছে। ভারতের সঙ্গে নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর পাকিস্তানী সেনাদের কড়া নজরদারি নিয়ে শুক্রবার তিনি সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন।
ভারতের দাবি করা সার্জিক্যাল স্ট্রাইককে কেন্দ্র করে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে পারস্পরিক যে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে ওই পরিস্থিতিতে জেনারেল শরিফের এ মন্তব্যকে রক্তাক্ত প্রতিশোধের সম্ভাবনা বলেই বিবেচনা করছে ভারত। সাবেক ভারতীয় রাষ্ট্রদূত গোপালাস্বামী পার্থসারথি বলেন, জেনারেল রাহিল শরিফ ও প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের মধ্যে সুসম্পর্ক নেই। ফলে জেনারেল শরিফ নিজেই ভারতের সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের বিপরীতে কোনও অবস্থান নির্ধারণ করে ফেলতে পারেন। বিবিসি, টাইমস অব ইন্ডিয়া।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন