রোববার, ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

প্রভুদের তুষ্ট রেখে টিকে থাকার স্বার্থে রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র হচ্ছে

খুলনায় সেমিনারে মির্জা ফখরুল

প্রকাশের সময় : ২ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

খুলনা ব্যুরো : সুন্দরবনের কোন বিকল্প নেই দাবি করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রশ্ন রেখেছেন, পরিবেশ-প্রতিবেশ ও জীবন-জীবিকা ধ্বংসকারী এই প্রকল্পটি কেন বনের সন্নিকটে রামপালেই করতে হবে? তিনি অভিযোগ করেন, এই সরকার দেশের ১৬ কোটি মানুষের প্রতিনিধিত্ব করে না।
তারা জনগণের দ্বারা নির্বাচিত সাংবিধানিক সরকার নয়। বিদেশি প্রভুদের স্বার্থ রক্ষায় গৃহীত এই প্রকল্পের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, জনগণের দল বিএনপি এ সংগ্রামে আপনাদের পাশে রয়েছে। গতকাল (শনিবার) খুলনার হোটেল টাইগার গার্ডেনের এসকেএস মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ‘দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়ন ভাবনা ও সুন্দরবন’ শীর্ষক এক জাতীয় সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতীয়তাবাদীপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন ন্যাশনালিস্ট টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন (এনটিএ) এ সেমিনারের আয়োজন করে। বেলা ১১টায় সেমিনার শুরু হয়ে প্রায় দুপুর দেড়টা পর্যন্ত চলে।
সরকার আর এটি বশংবদ নির্বাচন কমিশন তৈরির পথে হাঁটছে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, তাদের তৈরি সার্চ কমিটির মাধ্যমে আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন তৈরি করে আর একটি একতরফা নির্বাচন করতে চায়। এরা সকল গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করেছে। সরকার জনগণের স্বার্থ চিন্তা করছে না। পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে বলছেন, রামপালে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ হলে এর ফলাফল শুভ হবে না। জীব-বৈচিত্র্য, প্রাকৃতিক ভারসাম্য ও মানুষের জীবন-জীবিকা ধ্বংস হবে। কিন্তু সরকার যে কোনভাবে এখানেই বিদ্যুৎ কেন্দ্র করতে চায়।
তিনি ইউনেস্কোর সাম্প্রতিক একটি রিপোর্ট উল্লেখ করে বলেন, তারাও চাচ্ছে না বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের কাছে কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র হোক। ইউনেস্কোর রিপোর্টে বলা হয়েছে, রামপালে বিদ্যুৎ কেন্দ্র হলে সুন্দরবন ধ্বংস হয়ে যাবে। বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞরাও এ প্রকল্প বন্ধের জন্য দাবি জানিয়েছে। তারপরও প্রভুদের খুশি করার জন্য এ বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যাপারে বিএনপি চেয়ারপার্সন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া সংবাদ সম্মেলন করে বিকল্প স্থানে এটি তৈরির কথা বলেছেন। আমরা বিদ্যুৎ কেন্দ্র চাই, কিন্ত সেই কেন্দ্র যদি পরিবেশ ও প্রকৃতি ধ্বংস করে তবে সেই উন্নয়ন দিয়ে কি হবে?
সরকার পাওয়ার প্লান্টের নামে সারা দেশে লুটপাট করেছে। সে লুটের যেন কোন বিচার না হয় সে জন্য ইনডেমনিটি আইন করেছে বলে অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সরকার সকল সংবাদ মাধ্যমকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে বলে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ৭৫-এ একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েমের পর চারটি রেখে বাকি সকল সংবাদপত্র বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। এখনও সেই পরিস্থিতি ফিরে এসেছে।
ন্যাশনালিস্ট টিচার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি প্রফেসর ড. মোঃ রেজাউল করিমের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মোঃ খসরুল আলমের পরিচালনায় সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যাশনালিস্ট টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন (এনটিএ)’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক শেখ মাহমুদুল হাসান।
আলোচনায় অংশ নেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাড. নিতাই রায় চৌধুরী, আইইবির সাবেক সভাপতি প্রফেসর আ ন হ আখতার হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি প্রফেসর ড. এ বি এম ওবায়েদুল ইসলাম, বিএনপির কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক রাজশাহীর মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, পাওয়ার প্লান্ট বিশেষজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ার খালেদ হোসেন চৌধুরী, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার শেখ মোঃ জাকির হোসেন, সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম, সাংবাদিক নেতা শেখ দিদারুল আলম, খুলনা বারের সাবেক সভাপতি অ্যাড. গাজী আব্দুল বারী, চর্ম ও যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. সেখ মো. আখতার উজ জামান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন খুবির পরিবেশ বিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের শিক্ষক প্রফেসর ড. নাজমুস সাদাত।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী বলেন, রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের মাধ্যমে বাংলাদেশকে ভয়ংকর পরিণতির দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে।
প্রফেসর আ ন হ আখতার হোসেন বলেন, রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ হলে পরিবেশগত বিপত্তি, কারিগরি বিপত্তি ও অর্থনৈতিক বিপত্তি দেখা দেবে। ক্ষতির দায়ভার সব বাংলাদেশের আর লাভের অর্ধেক ভারতীয় কোম্পানীর।
অধ্যাপক ড. এ বি এম ওবায়েদুল ইসলাম বলেন, রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র করতে গিয়ে সরকার এক রাষ্ট্রবিরোধী অসম চুক্তি করেছে। এর মাধ্যমে দ্বিতীয় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীকে আনা হচ্ছে। ভারতে যে প্রযুক্তিতে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করতে পারেনি, সেই কেন্দ্র আমার বাংলাদেশে তৈরি করতে দিতে পারি না।
ড. ফরিদুল ইসলাম বলেন, সরকার এই প্রকল্পটি নিয়ে পুরো জাতির সাথে প্রতারণা করছে। সত্যকে জানতে না দিয়ে মিথ্যা তথ্য-উপাত্ত সরবরাহ করা হচ্ছে।
এদিকে পূর্ণাঙ্গ মহাসচিব হওয়ার পর মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের খুলনায় প্রথম আগমন উপলক্ষে দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়। সেমিনার স্থল ও আশেপাশে তাদের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি ছিল লক্ষ্যণীয়। বিমানযোগে ঢাকা থেকে যশোর পৌঁছে সেখান থেকে সড়ক পথে খুলনায় আসেন তিনি। সেমিনার শেষ করে বিকেল সাড়ে ৩টায় খুলনা ত্যাগ করেন। সে সময় পর্যন্ত বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী রাস্তার দু’পাশে দাঁড়িয়ে শান্তিপূর্ণভাবে তাকে বিদায় জানান।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন