৬ ভরি স্বর্ণালঙ্কারও নিয়ে গেছে পুলিশ : দাবি পরিবারের
স্টাফ রিপোর্টার, সাভার থেকে : ঢাকার সাভারে পুলিশের সাথে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ যুবদল নেতা নিহত হয়েছে। শুক্রবার দিবাগত গভীর রাতে সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়নের কৃষিবিদ নার্সারির পাশে এঘটনা ঘটে। এদিকে তাকে ছেড়ে দেয়ার কথা বলে পরিবারের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার নেয়ার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে।
নিহত শাহ-আলম নয়ন (৪২) সাভার পৌর এলাকার মালঞ্চ আবাসিক এলাকার শহিদুল ইসলামের পুত্র। তিনি সাভার পৌর যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক।
নিহতের ছোট ভাই মাসুদ আলম লিটন জানায়, শুক্রবার ভোরে নয়নকে মোহাম্মদপুরের বিহারী কলোনীর ভাড়া বাসা থেকে গ্রেফতার করে নিয়ে আসে সাভার মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) তন্ময় কুমার বিশ্বাস ও এএসআই আহসান হাবিব।
লিটন বিরুদ্ধে বিএনপির হরতার অবরোধে গাড়ি-ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় সাভার মডেল থানায় কয়েকটি মামলা রয়েছে।
তিনি আরো জানান, গ্রেফতার করে আনার পর শাহ আলম থানাতেই ছিলেন। রাত ৯টার দিকে চোখ বেধে মাইক্রোবাসে করে থানা থেকে তাকে নিয়ে যেতে দেখেছেন তার মা।
সকালে পরিবারের সদস্যরা খবর পায় বিরুলিয়ার ইউনিয়নের কৃষিবিদ নার্সারির পাশে পুলিশের সাথে কথিত বন্দুকযুদ্ধে তিনি মারা গেছে।
ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ একটি শুটার গান, দুই রাউন্ড গুলি, ২টা বড় ছোরা, ২টা ছোট ছোরা, ২টি রাম দা উদ্ধার করা হয়েছে বলে সাভার মডেল থানার ডিউটি অফিসার জানিয়েছেন। ময়না তদন্তের জন্য তার লাশ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
নিহত নয়নের শ্যালক সম্রাট আহম্মেদ পারভেজ দাবি করেন, বৃহস্পতিবার তার বোন জামাই সাভার থেকে মোহাম্মদপুরের বাসায় আসে। পরদিন শুক্রবার ভোরে সাভার মডেল থানার এসআই তন্ময় কুমার বিশ্বাস, এএসআই আহসান হাবিব ও কনস্টেবল মামুন তাদের বাসায় অভিযান চালিয়ে নয়নকে আটক করে। এসময় এসআই তন্ময় মদ্যপ অবস্থায় ছিলেন। তিনি বাসায় থাকা নগদ ৬ লাখ টাকা ও আনুমানিক ৬ ভরি স্বার্ণালঙ্কার হাতিয়ে নেয়।
এছাড়া তিনি আরও দাবি করেন, শুক্রবার সকালে তন্ময় কুমার বিশ্বাস তার বাবাকে ফোন করে আরও আড়াই লাখ টাকা দাবি করেন। টাকা পেলে তিনি তার মেয়ের জামাইকে (নয়ন) ছেড়ে দেবেন। শ্যালকের দাবি এসআই তন্ময়ের কথা অনুযায়ী আড়াই লাখ টাকা দেওয়া হলেও পুলিশ তাকে না ছেড়ে আরও দশ লাখ টাকা দাবি করে। অন্যথায় ক্রসফায়ারে মেরে ফেলার হুমকি দেন তন্ময়। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, পুলিশের দাবীকৃত আরো ১০ লাখ টাকা দিলে হয়তো বেঁচে যেতেন তার বোন জামাই (নয়ন)।
নিহত যুবদল নেতার মা রোকেয়া বেগম অভিযোগ করে বলেন, শুক্রবার রাত আনুমানিক ৯টার দিকে সাভার মডেল থানায় তিনি তার ছেলের সাথে দেখা করতে চাইলে পুলিশ নয়নের সাথে দেখা করতে দেয়নি। তবে এর কিছু সময় পরই নয়নের মুখে কালো কাপড় দিয়ে বেধে মাইক্রোবাসে তুলে থানা থেকে বের করে নিয়ে ছেলেকে হত্যা করা হয় বলে অভিযোগ তার।
এ প্রসঙ্গে সাভার মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এসএম কামরুজ্জামান বলেন, নয়ন সাভারের শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী ও সন্ত্রাসী। তার বিরুদ্ধে সাভার থানায় গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও মানুষ পুড়িয়ে হত্যা এবং পুলিশের উপর হামলার ঘটনা, অস্ত্র মামলা, মাদক ব্যবসা, অপহরন ও হত্যাসহ বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে।
তিনি বলেন, তাকে নিয়ে রাত পৌনে তিনটার দিকে অস্ত্র উদ্ধার অভিযাগে যাওয়ার পর তার সহযোগীরা তাকে ছিনিয়ে নিতে পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়ে, পরে আত্মরক্ষার্থে পুলিশও পাল্টা গুলি ছুড়লে নয়ন মারা যায়। ঘটনাস্থল থেকে বিভিন্ন অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
এদিকে সাভার মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) তন্ময় কুমার বিশ্বাস বলেন, ঘটনার সময় তিনিও আহত হয়েছেন। তার হাতে আঘাত লেগেছে। তবে টাকা নেয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করতেই ওই পুলিশ কর্মকর্তা ওসব (টাকার বিষয়) কিছুই জানেনা বলেই ফোনের লাইনটি কেটে দেন। এছাড়া অপর এএসআই আহসান হাবিরের মুঠফোনে অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ফোনটি রিসিভ করেননি।
পুলিশের টাকা নেয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে ঢাকা জেলার সহকারী পুলশ সুপার (এএসপি) মাহবুবুর রহমান বলেন, এধরনের কোন অভিযোগ কেউ করেনি, এমনকি আমি কিছু শুনিনি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন