শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

সতর্ক বাংলাদেশ

বিশ্বে খাদ্য সঙ্কটের শঙ্কা খাদ্য মজুদ বাড়াতে শুল্ক কমিয়ে দ্রুত আমদানির সিদ্ধান্ত সরকারের উৎপাদন বৃদ্ধিতে প্রণোদনার পাশাপাশি বাড়ানো হচ্ছে প্রযুক্তির ব্যবহার খাদ্য মজুদের বিষয়ে সরক

রফিক মুহাম্মদ | প্রকাশের সময় : ১৪ আগস্ট, ২০২১, ১২:০০ এএম

করোনা মহামারিতে সারা বিশ্ব আজ বিপর্যস্ত। দেশে দেশে চলছে লকডাউন। অনেক দেশের সীমান্তও বন্ধ রয়েছে। ফলে বিশ্বজুড়ে পণ্য সরবরাহে ব্যাপক সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ ব্যবস্থায় ওষুধ ও জরুরি খাদ্যসামগ্রী সরবরাহ চালু থাকলেও তা যথেষ্ট নয়। এ অবস্থা কতদিন চলবে সে সময়সীমাও নিশ্চিত নয়। তাই এক অজানা আতঙ্কে বিভিন্ন দেশের বড় বড় ব্যবসায়ী ও বিত্তবানরা প্রয়োজনের চেয়ে অনেক বেশি খাদ্যসামগ্রী মজুদ করে রাখছেন। এতে জাতিসংঘ বিশ্বজুড়ে খাদ্য সঙ্কটের আশঙ্কা করছে। করোনা পরিস্থিতি নিয়ে ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রামের একটি রিপোর্টে এ তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, আপাতত গোটা বিশ্বের কোনো প্রান্তে খাদ্য জোগানের কোনো অভাব নেই। কিন্তু লকডাউন পর্ব যদি বাড়ানো হয়, আর বিত্তশালী ও খাদ্য সরবরাহকারীরা যদি আতঙ্কে অতিরিক্ত খাদ্য মজুদ করতে শুরু করেন, তা হলে অদূর ভবিষ্যতে খাবার পাবেন না দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী মানুষ। বিশেষকরে এশিয়া ও আফ্রিকার গরিব দেশগুলো এতে প্রবল সমস্যায় পড়বে। এই পরিস্থিতি যাতে না তৈরি হয়, সেজন্য সব দেশের সরকারকে খাদ্যসামগ্রী মজুদ ও সরবরাহে কড়া নজরদারি রাখার বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে। খাবার নিয়ে যাতে কোনো ধরনের কালোবাজারি না হয় সে দিকেও নজর দিতে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে সতর্ক রয়েছে বাংলাদেশ সরকার। খাদ্য উৎপাদনে সয়ংসম্পূর্ণ থাকার পরও মজুদ বাড়াতে এবং অভ্যন্তরীণ বাজারের সরবরাহ বাড়াতে দ্রুত চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। করোনা মহামারিতে কর্মহীন শ্রমজীবী মানুষের সহায়তার ওএমএসসহ নানা কর্মসূচি চালুর ফলে কমছে সরকারের খাদ্যশস্যের মজুদ। অন্যদিকে অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী বোরো সংগ্রহ হচ্ছে না। এ পরিস্থিতিতে দ্রুত চাল আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এজন্য চাল আমাদিনতে ২৫ শতাংশ হতে ১০ শতাংশ শুল্ক কমানো হয়েছে। পাশাপাশি সমুদয় রেগুলেটরি ডিউটি প্রত্যাহার করা হয়েছে। আগামী ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত চাল আমদানিতে এ সুবিধা বহাল থাকবে।

খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, সরকারের খাদ্যশস্যের মজুত কমলে এক শ্রেণির অসৎ ব্যবসায়ী এর সুযোগ নেয়। ইতোমধ্যে অভ্যন্তরীণ চালের খুচরা বাজারে কিছুটা অস্থিরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। মোটা চালের কেজি ৫০ টাকা ছাড়িয়ে গেছে। এই দাম গত কয়েক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। তাই সরকার চাচ্ছে দ্রæত চাল আমদানি করে বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে।

চলতি বছর দেশে ভালো ফলন হলেও অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে বোরো সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে সরকারের খাদ্যশস্যের মজুদ পরিস্থিতির ওপর। বোরো মৌসুমে এবার ৬ লাখ ৫০ হাজার টন ধান এবং ১০ লাখ টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত ২৮ এপ্রিল থেকে ধান ও ৭ এপ্রিল থেকে চাল সংগ্রহ অভিযান শুরু হলেও গত ৩০ জুলাই পর্যন্ত ৩ লাখ ৩০ হাজার ১৬৮ টন ধান, ৭ লাখ ৯৫ হাজার ১৮৫ টন সেদ্ধ চাল ও ৬৩ হাজার ৬৫৫ টন আতপ চাল সংগ্রহ করা হয়েছে। এখনো ৩ লাখ ১৯ হাজার ৮৩২ টন ধান ও ১ লাখ ৪১ হাজার ১৮৭ টন চাল সংগ্রহ হয়নি। অথচ চলতি আগস্টেই বোরো সংগ্রহ অভিযান শেষ হচ্ছে।

সরকার ধান-চালের যে সংগ্রহ মূল্য নির্ধারণ করেছে বাজারে তারচেয়ে ধান-চালের দাম বেশি। তাই, কৃষক ও মিলাররা সরকারের গুদামে ধান-চাল সরবরাহে আগ্রহী নয়। এ অবস্থায় ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে না। বর্তমানে সরকারের গুদামে সাড়ে ১২ লাখ টন চাল মজুদ আছে। দ্রুত চাল আমদানি করা হলে কোনো ধরনের সঙ্কট তৈরি হবে না। গত অর্থবছরে চাল আমদানি করা হয়েছিল ১৩ লাখ ৪৯ হাজার টন।

শুধু আমদানি নয়, ভবিষ্যৎ খাদ্য সঙ্কটের বিষয়টি মাথায় রেখে সরকার ধানের উৎপাদন বৃদ্ধির বিষয়েও বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। দেশের এক ইঞ্চি জমিও যাতে অনাবাদি না থাকে তার নির্দেশ ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিয়েছেন। সে লক্ষ্যে কৃষি মন্ত্রণালয়ও কাজ করে যাচ্ছে। বিদ্যমান করোনা মহামারি পরিস্থিতিতেও গত বছর আউশ ও বোরো ধানের ফলন ভালো হয়েছে। সরকারের বিশেষ প্রণোদনা ও সার্বিক তত্ত্বাবধানের ফলে বন্যা খরা এসব পাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করেও আশানরূপ ফলন সম্ভব হয়েছে। খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধিতে সরকার প্রযুক্তি নির্ভর কৃষির দিকে বিশেষ নজর দিচ্ছে। কৃষিতে বাড়াছে যন্ত্রের ব্যবহার। পুরনো ধারণা থেকে বের হয়ে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে বদলে দিচ্ছে কৃষকের জীবন। এতে, খরচ যেমন কমে আসছে তেমনি বাড়ছে উৎপাদন ক্ষমতা। বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকারের নীতি সহায়তা কৃষিখাতের পরিস্থিতি আমূল বদলে দিচ্ছে। উন্নত বীজ, সার, প্রযুক্তিসহ নানান অত্যাধুনিক উপকরণের স্পর্শে কৃষি এখন অনেকটাই পরিণত। এর ফলে উৎপাদন যেমন বেড়েছে কয়েকগুণ তেমনি উৎপাদনশীলতায় পেয়েছে ভিন্নমাত্রা। সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে যন্ত্রের সাথে কৃষির মেলবন্ধন আরো সুদৃঢ় হবে আগামীতে এমনই প্রত্যাশা খাতসংশ্লিষ্টদের। এদিকে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি অব্যাহত রাখতে প্রণোদনা বিতরণসহ সার্বিক কৃষি কার্যক্রম সমন্বয় ও তদারকির জন্য কৃষি মন্ত্রণালয়ের ৭ জন অতিরিক্ত সচিবকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক এ বিষয়ে বলেন, দেশে খাদ্য মজুদ সন্তোষজনক। খাদ্য ঘাটতির কোনো আশঙ্কা নেই। দেশে একটি লোকও যেন অনাহারে না থাকে আমাদের সরকার সে বিষয়ে সর্বক্ষণ সচেষ্ট। করোনা মহামারিতে অনেকে কাজ হারিয়ে বেকার, অনেকের আয় কমে গেছে। এসব বিষয় মাথায় রেখে আমরা ওএমএস’র মাধ্যমে স্বল্পমূল্যে চাল দিচ্ছি। ওএমএসসহ বিভিন্ন কর্মসূচিতে বছরে ১৫ থেকে ২০ লাখ টন চাল প্রয়োজন হয়। এসব বিষয় বিবেচনায় রেখে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি আমদানির মাধ্যমেও আমাদের মজুদ বৃদ্ধি করা হচ্ছে।

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. মোস্তাফিজুর রহমান ইনকিলাবকে বলেন, আমাদের দেশে খাদ্য উৎপাদনের যে পরিসংখ্যানের কথা বলা হয় তা নিয়ে অনেকের মনে প্রশ্ন রয়েছে। প্রতিবারই বাম্পার ফলনের কথা বলা হয়েছে, লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি উৎপাদনের কথা বলা হচ্ছে। যদি তাই হয় তাহলে বোরোর ভরা মৌসুমেও চালের দাম বৃদ্ধি পায় কেন। করোনা মহামারির ফলে বিশ্বব্যাপী খাদ্য বাজার অস্থিতিশীল। এ অবস্থায় খাদ্য মজুদের বিষয়ে সরকারকে আরো বেশি নজর দেয়া উচিত। বর্তমানে সরকারের গুদামে সাড়ে ১২ লাখ টন চাল মজুদ আছে। এ মজুদ ১৫ লাখ টনে উন্নীত করা প্রয়োজন। সরকারের মজুদ কম থাকলে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা চালের বাজারে সঙ্কট তৈরি করে দাম বাড়িয়ে সুবিধা নিতে পারে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (9)
Harun Ar Rashid ১৪ আগস্ট, ২০২১, ১২:৩২ এএম says : 0
· সর্বশক্তিমান আল্লাহ সকলের রিজিকের সুব্যবস্থা করে দেক।
Total Reply(0)
আদিব আহমদ ১৪ আগস্ট, ২০২১, ১২:৩২ এএম says : 0
কিছুদিন আগের কথা আমরা না সিঙ্গাপুর সুইজারল্যান্ড এর থেকে উন্নত হয়ে গেছিলাম!
Total Reply(0)
Tahmina Tahmina ১৪ আগস্ট, ২০২১, ১২:৩৩ এএম says : 0
যাক আমাদের কোনো খাদ্য সংকট নেই, আমাদের দেশে কোনো গরিব মানুষ ও নেই। প্রায় প্রতি জেলায় প্রবেশ পথে লেখা আছে ভিক্ষুক মুক্ত শহর।
Total Reply(0)
Abdul Khalek ১৪ আগস্ট, ২০২১, ১২:৩৩ এএম says : 0
ওবায়দুল কাদের সাহেব ও হাসান মাহমুদ সাহেব ও তোফায়েল আহমেদ সাহেব আমির হোসেন আমু সাহেব তাদের মুখ থেকে কিছু শুনতে চাই এমুহূর্তে আসলে কি খাদ্য সংকটে আছে বাংলাদেশ না ইউরোপ সিংগাপুরের কাতারে আছে
Total Reply(0)
Md Mamun ১৪ আগস্ট, ২০২১, ১২:৩৩ এএম says : 0
সরকারের উচিত যর্থাযথ ব্যাবস্হা নিয়ে রোহিঙ্গাদের খুব দ্রুত মায়ানমারে পাঠিয়ে দেওয়া,এমনিতেই আমাদের দেশের আয়তনের তুলনায় বিশাল জনগোষ্ঠী, তার উপর আবার অতিরিক্ত কয়েক লক্ষ শরণার্থী, কিছু দিন বাদে তা কোটি সংখ্যায় রুপান্তরিত হবে।
Total Reply(0)
Mahmudul Islam ১৪ আগস্ট, ২০২১, ১২:৩৪ এএম says : 0
বাংলাদেশের মানুষ কেন খাদ্য সংকটে থাকবে। মাথাপিছু ২০০০ ডলার কোথায়?
Total Reply(0)
Md Masudur Rahman ১৪ আগস্ট, ২০২১, ১২:৩৪ এএম says : 0
আমাদের সরকার বলছে দেশে খাদ্যসঙ্কট নেই সুতরাং এটাই সত্য কথা। আর কোন কথা হবে না।
Total Reply(0)
Mosharraf Hossain ১৪ আগস্ট, ২০২১, ১২:৩৪ এএম says : 0
পুজিঁবাদী অর্থনীতির যাতাকলে পিষ্ঠ বর্তমান পৃথীবি । ধনী আর গরিবের ব্যাবধান পাহাড়সম । সম্পদের সুষ্টবন্টন প্রান্তীক জনগোষ্ঠির জন্য রাষ্ট্র সমূহ পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিদা তৈরী করতে ব্যার্থ হয়েছে বলে মানুষ তার মৌলিক অধীকার পূরন করতে পারছে না ।
Total Reply(0)
Md Abu Bakkar ১৪ আগস্ট, ২০২১, ১২:৩৫ এএম says : 0
আমাদের দেশে খাদ্য সংকট! আমি বিশ্বাস করি না,আমরা তো ইউরোপ আমেরিকার চাইতেও উন্নত পন্থায় চাষাবাদ করি! আমরা বরং অন্য দেশকে খাদ্য সহায়তা দিবো!
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন