শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

অন্তহীন দুর্ভোগে যাত্রীরা

বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌরুট ফেরিঘাট সরানোর দাবি দক্ষিণাঞ্চলবাসীর

আবুল হাসান সোহেল, মাদারীপুর থেকে | প্রকাশের সময় : ১৬ আগস্ট, ২০২১, ১২:০১ এএম

মাদারীপুরসহ দক্ষিণাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ নৌপথ বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌরুট। এই রুটে ফেরি চলাচলে দুর্ভোগ কমেনি কয়েক দিনে। তীব্র স্রোতের কারণে এই রুটের ১৮টি ফেরির মধ্যে চলাচল করছে মাত্র ৪টি। ফলে নদীর উভয় পাড়েই পারাপারের অপেক্ষায় আটকা পড়েছে যানবাহন। এদিকে গত দুইদিন থেকে রাতের বেলায় ফেরি চলাচল বন্ধ রাখছে কর্তৃপক্ষ। ফলে ওই সব অঞ্চল থেকে রাজধানীমুখী মানুষের যাতায়াতে দুর্ভোগ অন্তহীন। অপরদিকে সম্প্রতি পদ্মাসেতুর পিলারের সাথে ৪ দফায় ফেরির ধাক্কা লাগার কারণে বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌপথটি ব্যবহারের সচল রাখা বা না রাখার বিষয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। পদ্মাসেতুর পিলারের সাথে ৪ দফায় ফেরির ধাক্কা লাগার ঘটনা রোধে, যাত্রীদের দুর্ভোগ কমাতে পদ্মাসেতু চালু না হওয়া পর্যন্ত ফেরিঘাটটি সরিয়ে নেয়ার দাবি দক্ষিণাঞ্চলবাসীদের।

স্থানীয়রা বলছেন, মাদারীপুরের বাংলাবাজার থেকে ফেরিঘাটটি শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার মাঝিরকান্দি অথবা নাওডোবাতে সরিয়ে নিলে সবচেয়ে নিরাপদ থাকবে পদ্মাসেতু। পাশাপাশি নৌপথের দূরত্ব কমে গিয়ে যাত্রীদের দুর্ভোগ কমে যাওয়ার পাশাপাশি ফেরির তেল খরচও অর্ধেকে নেমে আসবে। এতে সরকারের বেঁচে যাবে কোটি কোটি টাকা।

জানা গেছে, গত বছর মাদারীপুরের শিবচরের কাঁঠালবাড়ি থেকে ফেরিঘাটটি আরো এক কিলোমিটার পথ পেছনে এনে বাংলাবাজারে স্থাপন করা হয়। এতে আগের চেয়ে এই নৌপথটির দৈর্ঘ্য বেড়ে যায়। কিন্তু গত এক মাসে পদ্মা সেতুর পিলারের সাথে ৪ দফায় বিভিন্ন ফেরির ধাক্কা লাগার কারণে এই নৌপথটি নতুন করে আলোচনায় আসে। তাই পদ্মা সেতুকে নিরাপদ রাখার জন্য ঘাটটি অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার জন্য সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ও নৌপ্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীসহ সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা সম্ভাব্য নতুন নৌপথ পরিদর্শন করেন। প্রাথমিকভাবে মাদারীপুরের বাংলাবাজার থেকে ঘাটটি সরিয়ে শরীয়তপুরেরর জাজিরা উপজেলার মাঝিরকান্দিতে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

বিআইডব্লিউটিসি সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে নৌরুটের ১৮টি ফেরি সচল থাকলেও চলাচল করছে মাত্র ৪টি। মূলত পদ্মা নদীর তীব্র স্রোতের বিপরীতে চলতে না পারায় ১৪টি ফেরি ঘাটে বেঁধে রাখা হয়েছে। গত দুই মাসে ৪ বার পদ্মা সেতুর পিলারে ফেরির ধাক্কা লাগে।

এদিকে, পদ্মা সেতুর পিলারে ধাক্কা লাগা রোধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য গতকাল দুপুরে বিআইডব্লিউটিসির চেয়ারম্যান সৈয়দ মো. তাজুল ইসলামসহ বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তারা ঘাট পরিদর্শন করেছেন। এছাড়াও সংশ্লিষ্টদের নিয়ে মতবিনিময় সভারও আয়োজন করা হয়েছে। বিআইডব্লিউটিএ মাওয়া রেস্টহাউজে এই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। বিষয়টি জানান বিআইডব্লিউটিএর অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. ছাইদুর রহমান। তিনি জানান, সভায় সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানের প্রেক্ষিতে বিভিন্নজনের মতামত গ্রহণ করা হয়। পদ্মা নদীতে চলমান বর্ষা মৌসুমে উজান থেকে নেমে আসা পানির চাপ বৃদ্ধির কারণে মাওয়া অঞ্চলে তীব্র স্রোতের সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাবাজার থেকে শিমুলিয়াগামী ফেরিসমূহকে পদ্মা সেতু থেকে মাত্র ১.৩ কিলোমিটার দূরত্বে হাজরা চ্যানেল দিয়ে বের হতে হয়। হাজরা চ্যানেল দিয়ে আনুমানিক ৩৪০ ডিগ্রি কোর্সে হেড রেখে বের হয়ে পদ্মা সেতুর পিলারসমূহকে ৯০ ডিগ্রি কোর্সে অতিক্রম করতে হয়। বের হয়েই তাকে তীব্র স্রোতের সম্মুখীন হতে হয়। তীব্র স্রোতের মধ্যে ৩৪০ ডিগ্রি থেকে ৯০ কোর্সে যাওয়ার জন্য তাকে ১১০ ডিগ্রি হেড ঘুরানোর প্রয়োজন হয়। সেতু থেকে ১.৩ কিলোমিটার দূরত্বে থেকে বিষয়টি অনেকটা দুরুহ কাজ। যার ফলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে প্রায় সময়ই ফেরিসমূহ পিলারে ধাক্কা খাচ্ছে। সমস্যা থেকে পরিত্রাণের জন্য একটি লাইটেড বয়া স্থাপনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ফেরিসমূহ হাজরা চ্যানেল থেকে বের হয়ে স্থাপিত বয়াকে টার্গেট করে বয়ার কাছাকাছি পৌছে সেতু অতিক্রম করার নির্দেশ দেয়া হয়। এছাড়াও রাতের বেলায় আপাতত ফেরি চলাচল বন্ধ রাখা সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

শিমুলিয়া থেকে বাংলাবাজারগামী ফেরিসমূহ স্রোতের প্রতিক‚লে যাবে বিধায় সেগুলো নিয়ন্ত্রণহীন হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকবে তাই তারা ৬-৭ নম্বর স্প্যান ব্যবহার করবেন। তবে পরিস্থিতি অনুযায়ী দুইপাশের দুইটি স্প্যানও ব্যবহার করা যাবে বলেও নির্দেশ দেয়া হয়। সভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ১২-১৩ স্প্যান হতে ৩ কিলোমিটার পশ্চিমে গতকাল দুপুরে একটি লাল লাইটেড বয়া স্থাপন করা হয়েছে।

এসময় উপস্থিত ছিলেন বিআইডব্লিউটিসির চেয়ারম্যান সৈয়দ মো. তাজুল ইসলাম, বিআইডব্লিউটিসির পরিচালক এস এম আশিকুজ্জামান, বিআইডব্লিউটিএ পরিচালক (নৌ-সওপ) মো. শাহজাহান, বিআইডব্লিউটিএ অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. ছাইদুর রহমান, বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. হুমায়ুন কবির ও প্রকৌশলী দেওয়ান মো. আব্দুল কাদির প্রমুখ।

বিআইডব্লিউটিসির বাংলাবাজার ফেরিঘাটের ব্যবস্থাপক সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, ঘাট সরিয়ে নেওয়ার এখনো অফিসিয়ালি কোন সিদ্ধান্ত পাইনি। তবে পদ্মা সেতু নিরাপদ রাখতে ঘাট সরিয়ে ফেলার আলোচনা চলছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যেখানে ভালো মনে করবে, সেখানেই ঘাট হবে। আমরা সেখান থেকেই ফেরি চলাচল করাবো।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন