অর্থনৈতিক রিপোর্টার : বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় সিঙ্গাপুর গেছে তদন্তকারী সংস্থা সিআইডির প্রতিনিধি দল। আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের আয়োজনে আগামী ৪ অক্টোবর থেকে ৬ অক্টোবর সিঙ্গাপুরে এ কো-অর্ডিনেশন মিটিং অনুষ্ঠিত হবে। মিটিংয়ে অংশ নিবেন সিআইডির অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক মো. শাহ আলম ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিনিয়র এএসপি রায়হান উদ্দিন খান এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের দুইজন কর্মকর্তা। তারা গতকাল রাতে সিঙ্গাপুরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি মো. শাহ আলম বলেন, ইন্টারপোলের আয়োজনে সিঙ্গাপুরে এ বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে ফিলিপাইন, বাংলাদেশ, জাপান, চীন, শ্রীলঙ্কা, যুক্তরাষ্ট্র, মিসর, পাকিস্তানসহ ১২টি দেশের প্রতিনিধি দলের অংশগ্রহণের কথা রয়েছে। সভায় এসব দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে রিজার্ভ চুরির ঘটনায় অগ্রগতি, গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান এবং কোন কোন দেশের কারা কারা জড়িত এসব বিষয়ে আলোচনাসাপেক্ষে করণীয় নির্ধারণ করা হবে। তিনি আরো বলেন, বৈঠকটি বাংলাদেশেই হওয়ার কথা ছিল। আমরাও যথেষ্ট আগ্রহী ছিলাম। কিন্তু সামগ্রিক দিক বিবেচনা করে ইন্টারপোল পরামর্শ দিয়ে বললো যে, বৈঠকটি সিঙ্গাপুরে করলে ভালো হবে। তাই আমরা আপত্তি করিনি। এছাড়া রিজার্ভ চুরির ঘটনার তদন্তে সন্দেহভাজন অনেকেই সিঙ্গাপুরে যাওয়া-আসার প্রমাণ আমরা পেয়েছি। তাই এ বৈঠকটি আমাদের জন্য যথেষ্ট সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। এ বিষয়ে সিঙ্গাপুর সরকারও আমাদের সহযোগিতা করবে। তিনি বলেন, বৈঠকে অংশ নেয়া অন্য দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আমাদের ‘ফেস টু ফেস’ কথা হবে। এটি আমাদের তদন্তে সহায়ক হবে। সিআইডির এ কর্মকর্তা আরও বলেন, এর আগেও তদন্তের স্বার্থে আমরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির সঙ্গে মিটিং করেছি। রিজার্ভ চুরির ঘটনার তদন্তের স্বার্থেই এটি একটি ফলোআপ সভা।
এর আগে চলতি বছরের গত ৩০ মে থেকে ২ জুন ম্যানিলাতে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ইন্টারপোল ওই বৈঠকের আয়োজন করে। এছাড়া সিআইডির ডিআইজি সাইফুল আলমের নেতৃত্বে দুইটি টিম ফিলিপাইন ও শ্রীলঙ্কাও সফর করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা দেবপ্রসাদ দেবনাথ বলেন, ইন্টারপোলের ওই মিটিংয়ে বাংলাদেশ ফিনান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্স ইউনিটের দু’কর্মকর্তা অংশ নিচ্ছেন। তবে তিনি তাদের নাম ও পদবি জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
চলতি বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক, নিউইয়র্ক পরিচালিত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ লেনদেনকারী হিসাব থেকে ৭০টি ভুয়া পেমেন্ট ইনস্ট্রাকশনের (পিআই) মাধ্যমে ১৯২ কোটি ৬০ লাখ ডলার অবৈধভাবে স্থানান্তরের চেষ্টা চালানো হয়। এর মধ্যে ৪টি পিআই’র বিপরীতে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার ফিলিপাইনের একটি ব্যাংকের চারজন গ্রাহকের হিসাবে পাঠানো হয়। ফিলিপাইনে পাঠানো ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার রিজেল কমার্শিয়াল ব্যাংক করপোরেশনের (আরসিবিসি) ৪টি হিসাবে জমা হয় এবং সমপরিমাণ অর্থ ব্যাংকের একই শাখায় পরিচালিত অপর একজন গ্রাহকের হিসাবে জমা হয়। যা পরবর্তীতে একটি মানি রেমিটেন্স কোম্পানি হয়ে ফিলিপাইনে পরিচালিত ক্যাসিনোতে চলে যায় এবং পরবর্তীতে তা একজন ফিলিপিনো-চাইনিজ ব্যবসায়ী তুলে নেয়। এই ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার আরসিবিসির জুপিটার স্ট্রিট, মাকাতি সিটি শাখায় পরিচালিত ভুয়া সুবিধাভোগীদের হিসাবে স্থানান্তর হয়। পরে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সহযোগিতা চাওয়া হয়। ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের বাণিজ্যিক ব্যাংক আরসিবিসির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে তদন্তের ভার তাদের অ্যান্টি মানিলন্ডারিং কাউন্সিলের (এএমএলসি) ওপর অর্পণ করে। এএমএলসি আনুষ্ঠানিক তদন্তের জন্য গত ২৯ ফেব্রুয়ারি আদালতে আবেদন করে এবং ফিলিপাইনের আদালত থেকে ১ মার্চ ওই বার্তাগুলোর মাধ্যমে পাঠানো অর্থের চূড়ান্ত সুবিধাভোগীদের হিসাবগুলো আরসিবিসি’র সংশ্লিষ্ট শাখাসহ তিনটি ব্যাংকের সম্পৃক্ত হিসাবগুলো স্থগিত করাসহ (ফ্রিজ) আনুষ্ঠানিক তদন্তের নির্দেশ জারি করে। এরপর ফিলিপিনো-চাইনিজ ব্যবসায়ী কিম অং ১ কোটি ৫০ লাখ ডলার ফেরত দেয়। এই ব্যবসায়ীর ফেরত দেয়া ওই অর্থ বাংলাদেশকে ফিরিয়ে দিতে এন্টি মানিলন্ডারিং কাউন্সিল ও কিম অং আদালতে একটি যৌথ প্রস্তাব (জয়েন্ট মোশন) দাখিল করে এবং আদালত থেকে গত ১ জুলাই আংশিক বাজেয়াপ্তকরণ আদেশ (পার্শিয়াল ফরফেইটার অর্ডার) জারি করা হয়। তারপর ফিলিপাইনের স্থানীয় আইন অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক এফিডেভিটের মাধ্যমে আদালতে এ অর্থ ফেরত পাওয়ার জন্য আবেদন করে। এরই প্রেক্ষিতে গত ১৯ সেপ্টেম্বর ফিলিপাইনের রিজিওনাল ট্রায়াল কোর্ট বাংলাদেশের অনুকূলে ৪৬ লাখ ৩০ হাজার ডলার এবং ৪৮ কোটি ৮২ লাখ ৮০ হাজার পেসো (বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় ১১৯ কোটি টাকা) অবমুক্ত করার আদেশ কারি করেছে। যা দেশে আনার প্রক্রিয়া ইতিমধ্যে শুরু করা হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন