ইনকিলাব ডেস্ক : রাশিয়া গত বছরটি সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের সৈন্যদের পাশে প্রকাশ্যে লড়াই করে কাটিয়েছে। এটি ছিল এক ঝুঁকিপূর্ণ সিদ্ধান্ত। পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা গৃহযুদ্ধে রাশিয়া সিরিয়া সরকারকে সমর্থন দিচ্ছে, বিশেষ করে ২০১৫ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে বিমান হামলা শুরুর পর বহু বিশ^ নেতাই প্রশ্ন করেছেন যে, দেশটি কেন সিরিয়া সরকারকে সমর্থন অব্যাহত রেখেছে। এ নিয়ে নানা তত্ত্ব রয়েছে, কিন্তু সেগুলোর কোনোটিই আসলে রাশিয়ার এই ব্যাপক সম্পৃক্ততা এবং আর্থিক, সামরিক ও কূটনৈতিক ক্ষতিকে ব্যাখ্যা করেনি।
একটি তত্ত্ব হচ্ছে প্রেসিডেন্ট পুতিন ভূমধ্যসাগরে রাশিয়ার একমাত্র সরাসরি প্রবেশের জন্য সিরিয়ার তারতুস বন্দরকে হাতে রাখতে চান। আরেকটি তত্ত্ব হলো পুতিন দেখাতে চান যে, তিনি সকল নাগরিক সমাজের বিক্ষোভ ও বিদ্রোহ দমন করতে চান ও আসাদকে সমর্থনের মাধ্যমে রাশিয়ার বিরোধী আন্দোলনের প্রতি ইঙ্গিত পাঠাচ্ছেন। অথবা হয়তো উগ্রপন্থীদের রাশিয়া অথবা প্রতিবেশী দেশগুলোতে ছড়িয়ে পড়া প্রতিহত করতে পুতিন মধ্যপ্রাচ্যে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে চান। প্রধান তত্ত্ব হচ্ছে যে, পুতিন প্রমাণ করতে চান যে, যুক্তরাষ্ট্রের মতোই রাশিয়া একটি পরাশক্তি। লন্ডনভিত্তিক সংবাদপত্র আল আরাবি আল জাদিদ-এ রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও প্রবন্ধ লেখক সালাম কিলা লিখেছেন, রাশিয়া সিরিয়াকে একটি প্রতীক হিসেবে চায় যার বাস্তব কোনো অস্তিত্ব নেই। তিনি বলেন, বিশেষ করে সিরিয়াকে একটি দেশ হিসেবে রক্ষার রুশ কর্মকর্তাদের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের আর কোনো অর্থ নেই। কিলা প্রশ্ন করেন, একটি শক্তিশালী ও স্থিতিশীল সিরীয় রাষ্ট্র কি আছে যা ভবিষ্যতে টিকে থাকার আশা করতে পারে? তিনি নিশ্চিত যে, তা নেই।
সকল নিষ্ঠুরতা
এক বছর আগে রাশিয়া সিরিয়ায় বিমান হামলা শুরু করে। রাশিয়া ও সিরিয়া যাকে সন্ত্রাসী বলে চিহ্নিত করেছে তাদের প্রত্যেকের ওপর হামলা হয়েছে। বাশার সরকার অবশ্যই এর আওতায় সিরিয়ার বিরোধীদের অন্তর্ভুক্ত করেছে এবং পুতিন তা অনুমোদন করেছেন বলে মনে হয়। সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটসের রিপোর্টে বলা হয়েছে, রুশ বিমান হামলায় সাড়ে ৯ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। তাদের মধ্যে কমপক্ষে ৩৮০০ বেসামরিক লোক যাদের মধ্যে ৯০০ শিশু।
সিরিয়ার যুদ্ধে রাশিয়ার খোলাখুলি অংশগ্রহণ যুক্তরাষ্ট্র এবং জার্মানিসহ ইইউ নেতাদের কঠোর সমালোচনার শিকার হয়। জার্মান গ্রীন দলের নেতা ওমিদ নুরিপুরি ডয়েশল্যান্ডফাংককে বলেন, সে যেই হোক, সে যদি আবাসিক ভবনে বাংকার-বিস্ফোরক বোমা ফেলে সে যুদ্ধাপরাধের দোষে দোষী।
নুরিপুরি আলেপ্পোর পূর্বাংশের লড়াইয়ে রাশিয়া ও আসাদ সরকারকে নিষ্ঠুরতার জন্য অভিযুক্ত করেন। তিনি বলেন, এই শহরের উপরস্থ আকাশ এ দু’য়ের বিমানের দখলে। তারা আবাসিক এলাকায় বোমা ফেলছে। তারা এখন এমনভাবে তা করছে যা গত সাড়ে ৫ বছরে দেখা যায়নি।
মার্কিন ব্যাখ্যা অস্পষ্ট
রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সারগেই ল্যাভরভ বিবিসির রাশিয়া ডেস্কের সাথে এক সাক্ষাৎকারে ব্যর্থ যুদ্ধবিরতির পর বিদ্রোহীদের অবস্থানে হামলার পক্ষে সাফাই গান। তিনি বলেন, রাশিয়া তা করতে বাধ্য হয়েছে কেননা মার্কিন সৈন্যরা যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ করেছে এবং তারা উদার ও উগ্রপন্থী বিদ্রোহীদের পার্থক্য করেনি। ল্যাভরভ বলেন, বহু যুদ্ধবিরতি হয়েছে। নুসরা ফ্রন্টে সব যুদ্ধবিরতিকে বাইরে থেকে আরো যোদ্ধা, গোলাবারুদ ও অস্ত্র সংগ্রহের জন্য ব্যবহার করেছে।
ল্যাভরভ যুক্তরাষ্ট্রকে ভুল নীতির জন্য সমালোচনা করেন। তার বিশ্বাস যে, মার্কিন কর্মকর্তারা ঘটনার নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছেন। বিবিসি নিজে বলেছে, রাশিয়ানদের সাথে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি যেভাবে কাজ করছেন যুক্তরাষ্ট্রের তার কোনো প্রকৃত বিকল্প নেই। এখানে কোনো বিশ^াসযোগ্য প্ল্যান ‘বি’ নেই।
রাশিয়ার পদক্ষেপের প্রেক্ষিতে কি হবে তা স্পষ্ট। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনস-এ বিশ্লেষক ফিলিপ গর্ডন লিখেছেন, যদি বাশার আলেপ্পো পুনর্দখল করেনও, পাঁচ বছর যুদ্ধ করে ও ১ লাখ সৈন্য হারিয়ে সারা দেশ শাসন করার ক্ষমতা তার নেই। তিনি আরো বলেন, রাশিয়া প্রতিশোধ গ্রহণ থেকে নিরাপদ নয়।
রাশিয়ার সিরিয়া নীতি ঝুঁকিপূর্ণ। যদি পরিকল্পনা মতো তা না চলে তাহলে এমনকি একটি প্রতীকী বিজয়ও তাদের নাও অর্জিত হতে পারে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন