স্টাফ রিপোর্টার : দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা প্রত্যাহারের দাবিতে ঢাকার বিভিন্ন থানায় বিক্ষোভ মিছিল করেছে ঢাকা মহানগর বিএনপি। গতকাল রোববার দিনের বিভিন্ন সময়ে মহানগর নেতাকর্মীরা এই কর্মসূচি পালন করেন। আজ সারাদেশে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হবে। এই কর্মসূচি পূর্বঘোষিত।
মতিঝিল থানা : হারুনর রশিদ হারুন, আলমগীর হোসেন, আলাই ও বকুলের নেতৃত্বে একটি মিছিল হয়। বেলা ২টায় কমলাপুর আইসিডি হতে বিভিন্ন গার্মেন্টসে গিয়ে মিছিলটি শেষ হয়।
সবুজবাগ থানা : আশরাফুর রহিম, মনির হোসেন, জাহিদ, সিরাজুল ইসলাম সিরাজ, হারুন, মাকসুদ, লিটনের নেতৃত্বে সকাল ১১টায় একটি বিক্ষোভ মিছিল হয়। মাদারটেক চৌরাস্তা থেকে নন্দীপাড়া ব্রিজে গিয়ে মিছিলটি শেষ হয়।
যাত্রাবাড়ী থানা : তানভীর আহমেদ রবিন, আলমগীর হোসেন, মিজান ভান্ডারীর নেতৃত্বে বেলা ১টায় যাত্রাবাড়ীর শহীদ ফারুক রোডে একটি বিক্ষোভ মিছিল হয়।
কদমতলী থানা : তানভীর আহমেদ রবিনের নেতৃত্বে বেলা আড়াইটায় জুরাইন রেলগেট হতে দোলাইরপাড় পর্যন্ত আরেকটি মিছিল হয়।
ডেমরা থানা : জয়নাল আবেদীন রতন, মোফাজ্জল হোসেন, আবুল হাশেম, আকবর হোসেন নান্টুর নেতৃত্বে দুপুরে মেইন রোডে একটি বিক্ষোভ মিছিল হয়।
বাড্ডা থানা : এ জি এম শামসুল হক শামসুর নেতৃত্বে বেলা দেড়টায় বাড্ডা লিংক রোডে একটি বিক্ষোভ মিছিল হয়। মিছিল থেকে শাহবুদ্দিন নামে এক বিএনপি কর্মীকে পুলিশ গ্রেফতার করে।
মুগদা থানা : শামসুল হুদা, শেখ মো: আলী চায়না, শামসুল হুদা কাজল, নুরুল হুদা, জিয়াউল হাসান রতনের নেতৃত্বে বেলা দেড়টায় একটি বিক্ষোভ মিছিল হয়।
পল্টন থানা : আনভির আদিল বাবু, লোকমান হোসেন, হাসিবুর রহমান সাকিল, সেলিম ও ফিরোজ আলমের নেতৃত্বে দুপুরে একটি বিক্ষোভ মিছিল হয়।
শাহবাগ থানা : আবুল আহসান ননী তালুকদার, জাহিদ হোসেন, স্বপন, আবু সুফিয়ান, মিন্টুর নেতৃত্বে বিকেলে একটি বিক্ষোভ মিছিল হয়।
খিলগাঁও থানা : ইউনুস মৃধা, অ্যাডভোকেট ফারুকুল ইসলাম, এম জামান, মামুনুর রশিদ মামুন, হুমায়ন কবির, দীপু সরকারের নেতৃত্বে দুপুরে একটি বিক্ষোভ মিছিল হয়। ফরিদ কমিউনিটি সেন্টার হতে শুরু হয়ে পল্লীমা সংসদ পর্যন্ত বিক্ষোভ মিছিল হয়।
শাহজাহানপুর থানা : ফজলে রুবাইয়াত পাপ্পু, নুরু মোল্লার নেতৃত্বে শাহজাহানপুর বাগিচা এলাকায় একটি বিক্ষোভ মিছিল হয়।
কাফরুল থানা : মোয়াজ্জেম হোসেন মতি, আশরাফুর জাহানের নেতৃত্বে বিকেলে একটি বিক্ষোভ মিছিল হয়। পাকার মাথা হতে শেওড়াপাড়া গিয়ে মিছিলটি শেষ হয়।
চকবাজার থানা : আনোয়ার পারভেজ বাদল, খতিবুর রহমান খোকন, আবু মোতালেব, হাজী নাসির, হাজী সালেম ও হুমায়ুনের নেতৃত্বে একটি মিছিল হয়। মিছিলটি বকশিবাজার হতে ঢাকেশ্বরী মন্দির পর্যন্ত যায়।
লালবাগ থানা : বদিউর আলম সুইটের নেতৃত্বে আজিমপুর কবরস্থান হতে আজিমপুর বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত একটি বিক্ষোভ মিছিল হয়।
কলাবাগান থানা : সিরাজুল ইসলাম সিরাজের নেতৃত্বে বিকেলে সোনারগাঁও রোডে একটি বিক্ষোভ মিছিল হয়।
ওয়ারী থানা : কাজী আবুল বাশার এবং তারিক হোসেন ও মাহফুজুর রহমান মনার নেতৃত্বে বেলা ১২টায় নবাবপুর হতে জয়কালী মন্দির পর্যন্ত একটি বিক্ষোভ মিছিল হয়।
এছাড়া শ্যামপুর, মোহাম্মদপুর, বংশাল, ভাষানটেক, তেজগাঁও, পল্লবী, কামরাঙ্গীরচর, সূত্রাপুর, কোতোয়ালি, দক্ষিণখান, রমনা, রূপনগর থানায় বিক্ষোভ মিছিল করেছে ঢাকা মহানগর বিএনপি।
‘অনির্বাচিত সরকার গায়ের জোরে লাঠিয়াল বাহিনীর মতো দেশ চালাচ্ছে’
নির্বাচন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে কোনো ‘ইতিবাচক’ সাড়া না পেলেও আশা হারায়নি বিএনপি। গতকাল রোববার বিকালে প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনের পর এক প্রতিক্রিয়ায় দলের মুখপাত্রের দায়িত্বে থাকা ভাইস-চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু এরকম মন্তব্য করেন। একই সঙ্গে তিনি বলেন, একটি অনির্বাচিত সরকার গায়ের জোরে লাঠিয়াল বাহিনীর মতো ন্যূনতম গণতান্ত্রিক অধিকার ভোগ করতে দেবে না- এভাবে দেশ চলতে পারে না।
রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে পূর্বানুমতি থাকার পরও পুলিশ সমাবেশ করতে না দেয়ার বিষয়টি জানাতে নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়।
শামসুজ্জামান দুদু বলেন, আমরা গণতন্ত্রের সপক্ষের মানুষ তো। আমরা আশা হারাইনি। আমরা অব্যাহতভাবে প্রত্যাশা করবো তার কাছ থেকে তিনি (প্রধানমন্ত্রী) আলোচনায় আসবেন। কারণ, তার (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) পিতা পাকিস্তানের শেষ জামানায় বৃহৎ রাজনৈতিক দলের একক নেতা হওয়ার পরও সেই তৎকালীন পাকিস্তানিদের সঙ্গে বার বার আলোচনার মধ্য দিয়ে মীমাংসা করার চেষ্টা করেছেন। যদিও সেটা হয়নি। আমরা আমাদের সেই জাতীয় নেতার কথা আমি আজকের প্রধানমন্ত্রীকে স্মরণ করিয়ে দেবো। আলোচনার টেবিল হচ্ছে সমস্যা সমাধানে সর্বোৎকৃষ্ট জায়গা। সেজন্য প্রধানমন্ত্রী হয়তো তাৎক্ষণিকভাবে প্রত্যাখ্যান করলেও আমি আশাবাদী তিনি শান্তভাবে একটু চিন্তা করলে আমাদের কথায় সাড়া দেবেন।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, গেন্ডারিয়া থানা বিএনপির উদ্যোগে রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা দলের ভাইস চেয়ারম্যান জনপ্রিয় নেতা সাদেক হোসেন খোকার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে আজকে ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তন সমাবেশ পুলিশ করতে দেয়নি। আমরা আগে পুলিশ অনুমতি নিয়েছিলাম, আমরা ভাড়াও নিয়েছিলাম। কিন্তু আজকে পুলিশ মিলনায়তন তালা লাগিয়ে দেয়। তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, অনুমতি বাতিল করা হয়েছে।
আজকে মত প্রকাশের স্বাধীনতা নাই, সংগঠন কিংবা সভা-সমাবেশ করার স্বাধীনতা দেশে নাই। এর হাতে নাতে প্রমাণিত আজকের (রোববার) ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে সমাবেশ করতে না দেয়া। আমরা এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ করছি।
তিনি বলেন, নিউ ইয়র্ক সফরের সময়ে প্রধানমন্ত্রী ভয়েস অব আমেরিকায় এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন- তিনি কথা কেড়ে নেন না। কথা বলার সুযোগ আছে। তিনি বলেছিলেন দেশে গণতন্ত্র আছে।
দলের সিনিয়র ভাইস-চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির প্রতিবাদে মহানগর বিএনপির উদ্যোগে পূর্বঘোষিত রাজধানীর থানায় থানায় বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচিতে পুলিশি বাধা প্রদানের নিন্দা জানিয়ে দুদু বলেন, শাহবাগ, কদমতলী, ডেমরা, সূত্রাপুরসহ বিভিন্ন থানা পুলিশ মিছিলে বাধা দিয়েছে, করতে দেয়নি। মিছিল থেকে নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করা হয়েছে।
আমরা প্রধানমন্ত্রীর কথাটা বিশ্বাস করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু পরিতাপের সঙ্গে এটা আজকে বলতে হচ্ছে- দেশে আজকে সমাবেশ করতে দেয়া হলো না। মত প্রকাশের স্বাধীনতা আপাতত দেশে নাই। একটি অনির্বাচিত সরকার গায়ের জোরে লাঠিয়াল বাহিনীর মতো ন্যূনতম গণতান্ত্রিক অধিকার ভোগ করতে দেবে নাÑ এভাবে দেশ চলতে পারে না।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আব্দুস সালাম, হাবিবুর রহমান হাবিব, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, মহানগর নেতা কাজী আবুল বাশার, আনোয়ারুজ্জামান, মকবুল ইসলাম টিপু, আবদুল কাদির, লিয়াকত আলী, সাব্বির আহমেদ আরিফ, কাজী রওনাকুল ইসলাম টিপু, মো. মোহন, এম শাহেদ মন্টু, নজরুল ইসলাম কিরন, মনিরুল ইসলাম খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে সকালের সংবাদ সম্মেলনে দুদু বলেন, আইন-আদালত এখন শাসকগোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে। বর্তমান বিনা ভোটের সরকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদেরকে কথিত বন্দুকযুদ্ধের নামে অব্যাহতভাবে হত্যা করছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
তিনি বলেন, দেশে এখন গণতন্ত্র এবং আইনের শাসনের লেশমাত্র চিহ্ন নেই। মৌলিক ও মানবাধিকার আগেই ভূলণ্ঠিত হয়েছে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও মানুষের স্বাধীনভাবে কথা বলার অধিকার খর্ব করা হয়েছে। আইন-আদালতও এখন শাসকগোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে। বর্তমান শাসকগোষ্ঠী দেশে এক শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থার সৃষ্টি করেছে। রাজনৈতিক কর্মী-নেতারা ছাড়াও দেশের কোনো মানুষই এখন নিজেদের নিরাপদ বোধ করছেন না।
তিনি বলেন, হিংসাশ্রয়ী রাজনীতির চর্চা করে সরকার দেশের সকল বিরুদ্ধমতকে দমনে আজ বেপরোয়া। তারা শুধু বিএনপিই নয়, সরকারের সমালোচনা করার জন্য নাগরিক সমাজসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান-যেমন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এবং বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার বিরুদ্ধেও ক্ষুব্ধ। এমনকি সরকারি রোষানলের বাইরে গণমাধ্যমও নয়।
দুদু বলেন, যারাই সরকারের অপশাসন, দুঃশাসন, দুর্নীতির সমালোচনা করছে- সরকার প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে তাদেরকে নাজেহাল করছে। এ ধরনের অসহিষ্ণু মনোভাবের কারণে তারা ইতিমধ্যেই আরো বেশি করে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে, যা সরকার মোটেই উপলব্ধি করতে পারছেন না।
বিএনপি নেতা বলেন, গত নয় মাসে দেশে ১৭৮ জনকে বন্দুকযুদ্ধের নামে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আসক উল্লেখ করেছে। এ ধরনের বন্দুকযুদ্ধে বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদেরকে পৈশাচিকভাবে হত্যা দেশে যেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এক ধরনের নেশা ও রেওয়াজে পরিণত হয়েছে।
তিনি বলেন, দমন-নিপীড়ন, হামলা মামলা এবং নির্বিচারে মানুষ হত্যার মতো অমানবিক পথ থেকে সরকার সরে না আসলে তারা আরো জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বেন। সরকার যেভাবে দেশের মানুষকে, গণতন্ত্রকে অবরুদ্ধ করে ফেলেছেন তাতে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে জলাঞ্জলী দেয়া হয়েছে।
শামসুজ্জামান দুদু বলেন, যে কারণে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর শাসনকে এদেশের মানুষ প্রত্যাখ্যান করে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছিল-বাংলাদেশের বর্তমান শাসকগোষ্ঠীর কাঁধে সেই স্বৈরাচারের ভূত চেপেছে এবং তারা ফ্যাসিবাদের ছায়ায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছেন।
তিনি বলেন, শনিবার নেত্রকোনা জেলা বিএনপির কার্যালয়ে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা সশস্ত্র হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করেছে। বর্তমান সরকারের সন্ত্রাসবাদী রাজত্বে এটি একটি ধারাবাহিক ও নিরবচ্ছিন্ন ঘটনা। আমি আমার দলের পক্ষ থেকে এ ধরনের সন্ত্রাসী ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা জ্ঞাপন করছি এবং নেত্রকোনা জেলা বিএনপির কার্যালয় ভাঙচুরের ঘটনায় দোষীদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানাচ্ছি। পাশাপাশি গত শনিবার ভোর রাতে কথিত বন্দুকযুদ্ধের নামে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক সাভার পৌর যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহ আলম নয়নকে নৃশংসভাবে হত্যা সেই নেশা ও রেওয়াজেরই বহিঃপ্রকাশ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন