উজানে ভারত থেকে অব্যাতভাবে নামছে ঢল। পদ্মা এবং তিস্তা নদী আবারও বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তাছাড়া দেশের বেশিরভাগ নদ-নদীর পানিবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ভারতের আবহাওয়া বিভাগ জানায়, উত্তর-পূর্ব ভারতের বিশেষ করে আসাম, অরুণাচল, মেঘালয়, হিমালয় পাদদেশীয় ও গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ, সিকিম অঞ্চলের অনেক স্থানে গতকাল মঙ্গলবার মাঝারি, ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাত হয়। মৌসুমী বায়ু এবং লঘুচাপের সক্রিয় প্রভাবে আরও চার দিন ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণের পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে।
তাছাড়া মধ্য-ভারত, নেপাল, তিব্বতসহ চীনে ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। বৃষ্টির ধারক পশ্চিমা লঘুচাপের সাথে এখন বর্ষার মৌসুমী বায়ু যোগ হয়েছে। বঙ্গোপসাগর থেকে প্রচুর জলীয়বাষ্প ও মেঘমালা আসছে উত্তর-পূর্ব ভারত এবং বাংলাদেশের উপক‚লভাগের দিকে। এরফলে এ অঞ্চলে বৃষ্টি-বাদলের ঘনঘটা তৈরি হয়েছে।
প্রধান নদ-নদীসমূহের উজানে পার্বত্য অববাহিকায় উৎসস্থলে অতি বর্ষণের ফলে ভাটিতে বাংলাদেশের দিকে ঢলের পানি গড়াচ্ছে। ভারত নিজেদের বন্যামুক্ত রাখতে গঙ্গায় ফারাক্কা বাঁধ, তিস্তায় গজলডোবাসহ উজানে সবখানে বাঁধ-ব্যারেজ খুলে পানি ছেড়ে দিয়েছে। হু হু করে নামছে বানের পানি। উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও ভারতের ওডিশা সংলগ্ন এলাকায় বিরাজমান লঘুচাপের প্রভাবে দেশের অভ্যন্তরেও মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণের পূর্বাভাস রয়েছে। সমুদ্র উপক‚ল উত্তাল ও পানির চাপ সৃষ্টি হয়েছে।
উজানের ঢলের তোড়ে প্রধান নদ-নদী, শাখানদী, উপনদীসমূহ ক্রমেই উত্তাল হয়ে উঠেছে। এর সাথে উত্তরাঞ্চল, উত্তর-মধ্যাঞ্চল থেকে ভাটি, মোহনা এলাকাগুলোতে নদীভাঙন প্রকট হচ্ছে। অব্যাহত নদীভাঙন কবলিত ও ভাঙনের ঝুঁকিপূর্ণ গ্রাম-জনপদ এবং বন্যায় প্লাবিত চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলের মানুষের কষ্ট-দুর্ভোগ বেড়েই চলেছে। পানিতে বিনষ্ট হয়ে ফল-ফসল, সবজি, খামারের ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে ব্যাপক। গবাদি পশুর খাদ্যসঙ্কট দেখা দিয়েছে বিভিন্ন স্থানে।
পাউবোর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, প্রধান নদ-নদীসমূহের ১০৯টি পানির সমতল পর্যবেক্ষণ স্টেশনের মধ্যে গতকাল ৬৬টি পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি, ৩৮টিতে হ্রাস এবং দু’টি স্থানে অপরিবর্তিত রয়েছে। তিনটি পয়েন্টে পদ্মা ও তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সোমবার নদ-নদীর ৬৮টি পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি, ৩৭টিতে হ্রাস এবং ৩টি স্থানে অপরিবর্তিত ছিল। তিস্তা নদী একটি পয়েন্টে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। রোববার ৭১টি পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি, ৩৩টিতে হ্রাস, ৩টি স্থানে অপরিবর্তিত এবং দু’টি পয়েন্টে তিস্তা ও সুরমা বিপদসীমার ঊর্ধ্বে ছিল।
নদ-নদী পরিস্থিতি ও পূর্বাভাস
প্রধান নদ-নদীসমূহের প্রবাহ পরিস্থিতি ও পূর্বাভাসে গতকাল পাউবো জানায়, আপার মেঘনা অববাহিকার উত্ত-পূর্বের নদীগুলো ব্যতীত দেশের প্রধান সব নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। যা আগামী ৪৮ ঘণ্টায়ও অব্যাহত থাকতে পারে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় তিস্তা অববাহিকায় অঞ্চলসমূহের বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকতে পারে। ইতোমধ্যে পদ্মা বিপদসীমা অতিক্রম করার ফলে আগামী ২৪ ঘণ্টায় পদ্মা নদী সংলগ্ন রাজবাড়ী ও ফরিদপুর জেলার নিম্নাঞ্চলসমূহে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে।
বাংলাদেশ ও ভারতের আবহাওয়া বিভাগের পূর্বাভাস উল্লেখ করে পাউবো জানায়, আগামী ৪৮ ঘণ্টায় দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চলীয় উপকূলীয় এলাকাগুলোতে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এরফলে এ সময়ে কক্সবাজার জেলা ও দক্ষিণাঞ্চলীয় উপকূলীয় অঞ্চলের নদীসমূহের পানি দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে।
নদ-নদী প্রবাহ পরিস্থিতি
পাউবোর নদ-নদী প্রবাহের তথ্য-উপাত্ত অনুযায়ী, অতিবৃষ্টিতে ভারতের উজানের ঢলে উজান-ভাটিতে গঙ্গা-পদ্মা নদীর সবক’টি পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। পদ্মা নদীতে পাউবোর ৮টি পানির সমতল পর্যবেক্ষণ স্টেশনের মধ্যে গতকাল বিকাল পর্যন্ত রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দে বিপদসীমার ৪ সেন্টিমিটার এবং শরীয়তপুর জেলার সুরেশ^র পয়েন্টে এক সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
পদ্মার উজানভাগে পাংখায় পানি আরও বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৪১, রাজশাহীতে ৮৭, হার্ডিঞ্জ ব্রিজে ৪৪, ভাগ্যকুলে ৩৮, মাওয়ায় ৪০ সে.মি. নীচে অবস্থান করছে। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে মহানন্দা নদীর পানি আরও বেড়ে গিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৫৩ সে.মি. নিচে অবস্থান করছে।
পানি বৃদ্ধির সঙ্গে রাজবাড়ী, শরীয়তপুর জেলাসহ পদ্মাপাড়ের বিভিন্ন গ্রাম-গঞ্জ-জনপদে ভাঙন বেড়েই চলেছে। ভাঙন বিস্তৃত হচ্ছে ভাটি ও মোহনার বিভিন্ন স্থানে। নদীপাড়ের বাসিন্দারা অসহায় অবস্থায় দিনগুজরান করছে।
উত্তর জনপদে তিস্তা নদীর পানি ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার দুই সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কাউনিয়ায় ৩৯ সে.মি. নিচে রয়েছে। ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদের অববাহিকায় সবক’টি পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। তবে বিপদসীমার নিচে রয়েছে। গতকাল বিকাল পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্র নদের পানি আরও বেড়ে চিলমারী পয়েন্টে বিপদসীমার ৯২ সে.মি. নিচে প্রবাহিত হচ্ছে। যমুনা নদে সবক’টি পয়েন্টে বাড়ছে পানি। এরমধ্যে সিরাজগঞ্জে ৯০, আরিচায় ৩৮ সে.মি. নিচে অবস্থান করছে।
পাহাড়ি এলাকায় অব্যাহত মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে পার্বত্য অববাহিকায় বৃহত্তর চট্টগ্রাম-কক্সবাজার-ফেনী অঞ্চলে ঢলে অধিকাংশ নদ-নদী, খালে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে এখনও বিপদসীমার যথেষ্ট নিচে রয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন