করোনার কারণে ভ্রমণ কর আদায়ে ভয়াবহ ধস নেমেছে। অনেকটা আকাশ থেকে পাতালে পড়ার মতো অবস্থা। সূত্র মতে, বিদায়ী ২০২০-২১ অর্থবছরে ভ্রমণ কর আদায়ের লক্ষ্য ছিল এক হাজার ৫০ কোটি টাকা। আদায় হয়েছে মাত্র ৩৩৬ কোটি টাকা। তাতে লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৩২ শতাংশ অর্জিত হয়েছে। আরেকটি উদাহরণ হলো, ২০১৯-২০ অর্থবছরের তুলনায় গত অর্থবছরে ভ্রমণ কর আদায়ে ৬৪ শতাংশ নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৯৩১ কোটি টাকার ভ্রমণ কর আদায় হয়েছিল। এনবিআর থেকে এ তথ্য জানা গেছে। স্থল ও আকাশপথে ভ্রমণের সময় কর দিতে হয়। স্থলপথের যাত্রীদের জন্য ৫০০ টাকা এবং আকাশপথে সার্কভুক্ত দেশগুলোতে তা ৮০০ টাকা। অন্য দেশে যাতায়াতে এক হাজার ৮০০ টাকা ভ্রমণ কর হিসেবে দিতে হয়। বিমানের টিকিটের সঙ্গে এই কর কেটে রাখা হয়। পাঁচ থেকে ১২ বছর বয়সী যাত্রীদের ক্ষেত্রে এই ভ্রমণ কর অর্ধেক। এ ছাড়া জলপথে যাত্রীপ্রতি ভ্রমণ কর ৮০০ টাকা। তবে পাঁচ বছরের কম বয়সী যাত্রী, ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগী, অন্ধ ব্যক্তি, বাংলাদেশি ও বিদেশি ক‚টনীতিক এবং তাঁদের পরিবার, বিমানের পাইলট ও ক্রুদের ভ্রমণ কর দিতে হয় না। স্থলপথে বাংলাদেশ থেকে বেশি পর্যটক ভারতে যান। কিন্তু করোনা শুরু হওয়ার পর থেকে ভারত পর্যটক ভিসা বন্ধ রেখেছে। ফলে পর্যটকদের কাছ থেকে তেমন একটা ভ্রমণ পাওয়া যায়নি।
স্থলপথে বাংলাদেশ থেকে বেশি পর্যটক ভারতে যান। কিন্তু করোনা শুরু হওয়ার পর থেকে ভারত পর্যটক ভিসা বন্ধ রেখেছে। এখন সীমিত পরিসরে চিকিৎসা ও অফিশিয়াল ভিসা চালু আছে। ফলে স্থলপথে পর্যটকদের কাছ থেকে তেমন একটা ভ্রমণ পাওয়া যায়নি। করোনার কারণে অনেক দেশ ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞাও দিয়েছে। মাঝে বেশ কয়েক মাস মধ্যপ্রাচ্যের বিমান সংস্থাগুলো শুধু বিদেশ থেকে যাত্রী আনত, যাওয়ার সময় খালি যেত। এসব কারণে আকাশপথেও ভ্রমণ কর তলানিতে ঠেকেছে। অন্যদিকে গত অর্থবছরজুড়েই বাংলাদেশ থেকে খুব কম আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালিত হয়েছে। এ খাতের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় ৭৫ শতাংশ আন্তর্জাতিক যাত্রী কমেছে। করোনার কারণে অনেক দেশ ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞাও দিয়েছে। মাঝে বেশ কয়েক মাস মধ্যপ্রাচ্যের বিমান সংস্থাগুলো শুধু বিদেশ থেকে যাত্রী আনত, যাওয়ার সময় খালি যেত। এসব কারণে আকাশপথেও ভ্রমণ কর তলানিতে ঠেকেছে। এনবিআরের তথ্যানুসারে, ২০২০-২১ অর্থবছর শেষে তিন লাখ এক হাজার কোটি টাকার সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে চূড়ান্ত হিসাবে আদায় হয়েছে দুই লাখ ৫৯ হাজার ৮৮১ কোটি ৮০ লাখ টাকা। সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ঘাটতি প্রায় ৪১ হাজার ১১৮ কোটি ২০ লাখ টাকা। গত ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের রাজস্ব আদায় হয়েছিল দুই লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকা। আর তিন লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার মূল লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় পিছিয়ে ৭০ হাজার ১১৮ কোটি টাকা।
এনবিআরের হিসাব অনুযায়ী, ২০২০-২১ অর্থবছরের ১২ মাসে (জুলাই-জুন) আয়কর, ভ্যাট ও শুল্ক খাতে প্রতিষ্ঠানটির আদায় যথাক্রমে ৮৫ হাজার ২২৪ কোটি ১৭ লাখ, ৯৭ হাজার ৫০৭ কোটি ২২ লাখ এবং ৭৭ হাজার ১৫০ কোটি ৪১ লাখ টাকা। যেখানে সদ্য সমাপ্ত সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা অনুসারে আয়কর, ভ্যাট ও শুল্ক খাতে এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯৭ হাজার কোটি, ভ্যাট থেকে এক লাখ ১০ হাজার এবং শুল্ক খাত থেকে ৯৪ হাজার কোটি টাকা। প্রবৃদ্ধি সন্তোষজনক হলেও করোনার প্রভাবে সৃষ্ট প্রতিক‚ল পরিবেশে রাজস্ব আহরণে বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। চলতি ২০২১-২২ বাজেট ঘোষণার আগে এনবিআর ২৯ হাজার কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রা কমানোর জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে সুপারিশ করেছিল, যা অনুমোদিত হয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন