শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

বঙ্গোপসাগরে কার্তিকের ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কা

প্রকাশের সময় : ৪ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

শফিউল আলম : আশ্বিন মাসের এখন তৃতীয় সপ্তাহ চলছে। অর্থাৎ শরৎ ঋতুর অর্ধেকেরও বেশি সময় শেষ। কিন্তু বর্ষার মেঘের ধারক-বাহক মৌসুমি বায়ুমালা এখন পর্যন্ত সক্রিয় রয়েছে। এ অবস্থায় দেশের বিভিন্ন স্থানে আকাশ মেঘলা থেকে মেঘাচ্ছন্ন থাকছে। সেই সাথে বজ্রপাতের আধিক্য নিয়েই থেমে থেমে বৃষ্টি আর ভ্যাপসা গরম, সমুদ্র উপকূলীয় এলাকায় অনেকটা গুমোট আবহাওয়া মিলে বিরাজ করছে খেয়ালী এলোমেলো আবহাওয়া। প্রাক-বর্ষার (এপ্রিল-মে মাস) মতোই ঘন ঘন প্রচ- ও ভয়াল বজ্রপাতে বর্ষাত্তোর এখনকার সময়েও পথে-প্রান্তরে মানুষের মৃত্যুর ঘটনা অতীতের চেয়ে ক্রমাগতভাবে বেড়ে যাচ্ছে। বজ্রপাতের আধিক্যকে আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রতিফলন হিসেবেও দেখছেন। বর্তমানে শরৎ মওসুমে যেমনটি হওয়ার চিরাচরিত আবহাওয়ার বৈশিষ্ট্য তা বিবর্তিত হয়ে দিন ও রাতের তাপমাত্রা এখন অস্বাভাবিক বেশি। এরফলে গতকাল (সোমবার) সর্বোচ্চ পারদ উঠে রংপুরের রাজারহাটে ৩৭ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। প্রায় সারাদেশে দিনের সর্বোচ্চের সাথে রাতের সর্বনি¤œ তাপমাত্রাও স্বাভাবিকের চেয়ে এখন বেশি রয়েছে। এতে করে বৃষ্টির পরও অনেক জায়গায় গা-জ্বলা ভ্যাপসা উটকো গরম অনুভূত হচ্ছে। একই সঙ্গে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বাতাসের আর্দ্রতার মাত্রা বেশি (দিনে রাতে গড়ে ৭০ থেকে ৯০ শতাংশ পর্যন্ত) থাকার কারণে মানুষজন ঘরে-বাইরে গরমকালের মতো ঘামাচ্ছে। এ অবস্থায় সর্দি-কাশি জ্বর, হাঁপানি, পেটের পীড়ার মতো বিভিন্ন রোগ-ব্যাধিও পিছু ছাড়ছে না।
আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আবহাওয়া-জলবায়ুর নেতিবাচক ধারায় পরিববর্তনের কারণে সামগ্রিকভাবে মওসুমের বিপরীতধর্মী আচরণ করছে। ভরা বর্ষার ঋতুতে টানা ও ভারী বর্ষণ হয়েছে এবারও কম। অথচ প্রাক-বর্ষায় এবং বর্ষা পরবর্তী সময়ে বৃষ্টিপাত হচ্ছে থেমে থেমে। বৃষ্টিপাত দীর্ঘায়িত হওয়ার ফলে মাটি ভেজা থাকছে, পানির উৎসগুলো অনেকটা ভরে আছে এবং ফল-ফসলের আবাদ ও ফলনের জন্য তা উপকার বয়ে আনছে। যদিও তা মোট হিসাবে স্বাভাবিক হার ও পরিমাণের চেয়ে বৃষ্টিপাত হয়েছে কম। গেল সেপ্টেম্বর মাসেও সারাদেশে সার্বিকভাবে স্বাভাবিকের চেয়ে ১৬ শতাংশ কম বৃষ্টিপাত হয়েছে।
এদিকে আবহাওয়া দপ্তর দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে বলছে, চলতি অক্টোবর মাসে দেশে স্বাভাবিক হারেই বৃষ্টিপাত হতে পারে। তবে এ মাসে বঙ্গোপসাগরে ১ থেকে ২টি নি¤œচাপ সৃষ্টি হতে পারে। যার মধ্যে চলতি মাসে (আশ্বিন-কার্তিকে) একটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয়ার আশংকা রয়েছে। আর অতীতেও বিশেষত কার্তিক মাসে নি¤œচাপ ঘনীভূত হয়ে ভয়াবহ সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড় এদেশে আঘাত হানার রেকর্ড রয়েছে। যা ‘অক্টোবর বিপদ’ হিসেবেও পরিচিত। অক্টোবর মাসের প্রথমার্ধের মধ্যে বর্ষারোহী দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু প্রবাহ (বর্ষা) বাংলাদেশ থেকে বিদায় নিতে পারে। এ মাসে গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনা অববাহিকায় স্বাভাবিক প্রবাহ থাকতে পারে।
দীর্ঘমেয়াদী পূর্বাভাস প্রদানের লক্ষ্যে গত ২ অক্টোবর (রোববার) বিকেলে আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্র ঢাকায় অনুষ্ঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটির নিয়মিত বৈঠকে চলতি মাসের উপরোক্ত পূর্বাভাস প্রদান করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের এ বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক ও বিশেষজ্ঞ কমিটির চেয়ারম্যান সামছুদ্দিন আহমেদ। এতে প্রাপ্ত আবহাওয়া-জলবায়ুর তথ্য-উপাত্ত, ঊর্ধ্বাকাশের আবহাওয়া বিন্যাস, বায়ুম-লের বিভিন্ন স্তরের বিশ্লেষিত আবহাওয়া মানচিত্র, জলবায়ুর রিগ্রেশন ও এনালগ মডেল, বৈশ্বিক আবহাওয়া-জলবায়ুর সর্বশেষ গতি-প্রকৃতি, আবহাওয়াম-লের এল-নিনো কিংবা লানিনা অবস্থা ইত্যাদির বিশ্লেষণ করা হয়।
বৈঠকে অক্টোবরের কৃষি আবহাওয়া পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, এ মাসে দেশের দৈনিক গড় বাষ্পীভবন ৩ থেকে ৪ মিলিমিটার এবং দৈনিক গড় সূর্য কিরণকাল ৬ থেকে ৭ ঘণ্টাকাল স্থায়ী থাকতে পারে।
গত সেপ্টেম্বর মাসের আবহাওয়ার পরিস্থিতি পর্যালোচনাকালে বিশেষজ্ঞ কমিটির উক্ত বৈঠকে জানানো হয়েছে, গত মাসে সারাদেশে স্বাভাবিক অপেক্ষা শতকরা ১৬ ভাগ কম বৃষ্টিপাত হয়েছে। ময়মনসিংহ বিভাগে স্বাভাবিক অপেক্ষা বেশি, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে স্বাভাবিক হারে এবং খুলনা, ঢাকা, বরিশাল ও সিলেট বিভাগে স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টিপাত হয়েছে। এ মাসের প্রথমার্ধে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে মৌসুমি বায়ুর বলয়ের উপস্থিতির কারণে ময়মনসিংহ বিভাগে স্বাভাবিক অপেক্ষা বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। এছাড়া সেপ্টেম্বর মাসের অধিকাংশ সময় মৌসুমি বায়ু কম সক্রিয় থাকায় খুলনা, ঢাকা, বরিশাল ও সিলেট বিভাগে স্বাভাবিক অপেক্ষা কম বৃষ্টিপাত হয়। গত ৪ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ-পশ্চিম বঙ্গ উপকূলের অদূরে উত্তর বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপের সৃষ্টি হয়। এটি উত্তর, উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে ৬ সেপ্টেম্বর পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম করে। বৃষ্টিপাত, বৃষ্টিপাতের দিনসংখ্যা, কৃষি আবহাওয়ার পূর্বাভাস এবং নদ-নদীর অবস্থা গেলো সেপ্টেম্বর মাসের পূর্বাভাসের সাথে সংগতিপূর্ণ ছিল বলে জানায় আবহাওয়া বিভাগ।
চলমান অক্টোবর (আশ্বিন-কার্তিক) মাসে দেশের ৮টি বিভাগওয়ারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাব্য দিনসংখ্যা ও পরিমাণের পূর্বাভাস প্রদান করা হয়েছে। এতে জানানো হয়েছে, ঢাকা বিভাগে ৫ থেকে ৭ দিনে ১৪৫ থেকে ১৬৫ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। চট্টগ্রাম বিভাগে ৬-৮ দিনে ১৭৫ থেকে ১৯৫ মি.মি., ময়মনসিংহ বিভাগে ৪-৬ দিনে ১৮০ থেকে ২০০ মি.মি., সিলেট বিভাগে ৬-৮ দিনে ১৭৫ থেকে ১৯৫ মি.মি., রাজশাহী ৫-৭ দিনে ১০৫ থেকে ১১৫ মি.মি., রংপুর বিভাগে ৪-৬ দিনে ১২০ থেকে ১৩৫ মি.মি., খুলনা বিভাগে ৫-৭ দিনে ১১৫ থেকে ১৩০ মি.মি. এবং বরিশাল বিভাগে ৬-৮ দিনে ১৬৫ থেকে ১৮৫ মি.মি. পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
আবহাওয়া বিভাগ জানায়, বর্ষারোহী মৌসুমি বায়ুর বলয় ভারতের উত্তর প্রদেশ, মধ্য প্রদেশ, উড়িষ্যা এবং গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল হয়ে উত্তর-পূর্ব দিকে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এর একটি বর্ধিতাংশ উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে দুর্বল থেকে মাঝারি অবস্থায় রয়েছে।
আবহাওয়া পূর্বাভাসে জানা গেছে, চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগের অনেক জায়গায়, রংপুর ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং খুলনা, রাজশাহী, ময়মনসিংহ ও ঢাকা বিভাগের দুয়েক জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হতে পারে। সেই সাথে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী বর্ষণ হতে পারে। সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
সর্বশেষ আবহাওয়া
গতকাল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় সৈয়দপুরে ৩৬ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় ঢাকায় সর্বোচ্চ ও সর্বনি¤œ তাপমাত্রা যথাক্রমে ৩৪ ও ২৬.৮ ডিগ্রি সে., চট্টগ্রামে ৩৬ ও ২৬.৫ ডিগ্রি সে.। এ সময় দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে চট্টগ্রামে ৮৫ মিলিমিটার।
আবহাওয়া বিভাগ জানায়, মৌসুমি বায়ুর অক্ষ বা বলয় উত্তর প্রদেশ, মধ্য প্রদেশ, উড়িষ্যা, গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল হয়ে উত্তর-পূর্ব দিকে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এর একটির বর্ধিতাংশ উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি অবস্থায় রয়েছে।
আজ (মঙ্গলবার) সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়া পূর্বাভাসে জানা গেছে, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল ও রংপুর বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রাজশাহী, ঢাকা ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হতে পারে। সেই সাথে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে। সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে। পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় আবহাওয়ার সামান্য পরিবর্তন হতে পারে। বর্ধিত ৫ দিনে আবহাওয়ার উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন