ঈদে দ্বিগুণ ভাড়া আদায় ও চাঁদাবাজি
বিশেষ সংবাদদাতা : ঈদে সড়কপথে ঘরমুখো যাত্রীদের কাছ থেকে দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করা হয়েছে। হয়েছে চাঁদাবাজিও। দ্বিগুণ ভাড়া দিয়েও যাত্রীদের সীমাহীন ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। ঈদ কেন্দ্রিক চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ ছিলেন পরিবহন মালিক-শ্রমিক।
দ্বিগুণ ভাড়া আদায় ও চাঁদাবাজির অভিযোগে রাজধানীর সায়েদাবাদ টার্মিনালের ঢাকা-লাকসাম ও লাঙ্গলকোট রুটের তিশা ট্রান্সপোর্ট এক্সক্লুসিভ লিমিটেডের বাস পরিচালনার দায়িত্ব থেকে সিদ্দিকুর রহমান মৃধা ওরফে মুকুল মৃধাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তার সাথে আবু তাহের টিটু নামে আরও একজন আছেন। তিশা ট্রান্সপোর্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কামাল হোসেন খন্দকার বলেন, ঈদে যাত্রীদের ভোগান্তির সুযোগ নিয়ে মুকুল মৃধা দ্বিগুণ ভাড়া আদায়সহ গাড়িপ্রতি চাঁদাবাজি করেছেন। এতে করে আমাদের কোম্পানীর সুনাম ক্ষুণœ হয়েছে। এ বিষয়ে তাকে বার বার মৌখিকভাবে সতর্ক করার পরেও তিনি তা মানেন নি। বাধ্য হয়ে আমরা তাকে অব্যাহতি দিয়ে সংশ্লিষ্ট সবাইকে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছি।
সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে দেশের ১৭টি জেলার দূরপাল্লার বাস চলাচল করে। ঈদ এলে রাজধানীর বাকী তিনটি টার্মিনালের মতো সায়েদাবাদেও যাত্রীদের চাপ বাড়ে। এই সুযোগে কিছু অসাধুচক্র বাসের ভাড়া বাড়িয়ে দেয়। প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় বেড়ে যায় চাঁদার হারও। এবারের ঈদে সায়েদাবাদ টার্মিনালে প্রতিটি রুটের গাড়িপ্রতি চাঁদার হার দ্বিগুণ বাড়ানো হয়েছিল বলে সাধারণ মালিকদের অভিযোগ। জানা গেছে, ঈদে ঢাকা-লাকসাম ও লাঙ্গলকোট রুটের তিশা পরিবহনের ভাড়া এক লাফে দ্বিগুণ হয়ে যায়। যার নেপথ্যে ছিলেন সিদ্দিকুর রহমান মৃধা ওরফে মুকুল মৃধা ও আবু তাহের টিটু। এ দু’জনের মধ্যে মুকুল মৃধার নাম অনেকেরই জানা। বহুদিন ধরেই তিনি প্রভাবশালী এক নেতার নাম ভাঙ্গিয়ে চাঁদাবাজির সাথে জড়িত বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেশ কয়েকজন মালিক বলেছেন। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে গিয়ে মালিক, শ্রমিকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ঢাকা-কুমিল্লা রুট কমিটির সাধারণ সম্পাদক মুকুল মৃধাকে চলতি বছরের ২৫ এপ্রিল তিশা ট্রান্সপোর্ট এক্সক্লুসিভ লিমিটেডের বাস পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া হয়। দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই তিনি চাঁদাবাজিতে মেতে ওঠেন। গত ৩ অক্টোবর তিশার ব্যবস্থাপনা পরিচালক কামাল হোসেন খন্দকার স্বাক্ষরিত মুকুল মৃধা ও টিটুকে অব্যাহতি দেয়া সংক্রান্ত এক চিঠিতে বলা হয়েছে, “কোম্পানীর পক্ষ থেকে আপনাদেরকে বার বার সতর্ক করা সত্ত্বেও আপনারা দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই কোম্পানীর নির্দেশিত নীতিমালা লংঘন করে অন্যায় ও অনৈতিকভাবে দৈনিক গাড়িপ্রতি ১২শ’ টাকা হতে ১৪শ’ টাকা হারে চাঁদা আদায় করে আসছেন।” চিঠির পরের প্যারায় বলা হয়েছে, “পবিত্র ঈদ উল আযহা উপলক্ষে সম্মানিত যাত্রী সাধারণের নিকট হতে তাদের ভোগান্তির সুযোগ নিয়ে কোম্পানীর অজান্তে দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করে আদায়কৃত অতিরিক্ত ভাড়ার অধিকাংশই নিজেরা আত্মসাত করেছেন যা শুধু নীতিবিবর্জিতই নয়, বরং শাস্তিযোগ্য অপরাধও বটে।” এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিশা কোম্পানীর পরিচালক মোতাহার হোসেন বলেন, কোম্পানীর গাড়ি পরিচালনার জন্য মুকুল মৃধাকে আমরা নিয়োগ দিয়েছিলাম। নিয়ম লংঘন করে তিনি চাঁদাবাজি ও দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করেছেন বলে তাকে আমরা বাদ দিয়েছি। জানতে চাইলে কুমিল্লা রুট কমিটির সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান ওরফে মুকুল মৃধা গতকাল টেলিফোনে ইনকিলাবকে বলেন, আমি তো এখনও রুট কমিটির সেক্রেটারি আছি, আমাকে বাদ দেয়ার কথা বলছেন কেন। তিশা পরিবহনের প্রসঙ্গ টানলে তিনি বলেন, এগুলোতো সাংবাদিকদের বিষয় নয়। যাত্রীদের কাছ থেকে দ্বিগুণ ভাড়া আদায়ের লিখিত অভিযোগ এনে আপনাকে তিশা পরিবহনের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছেÑ এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি রেগে গিয়ে লাইন কেটে দেন। ভুক্তভোগিদের মতে, শুধু তিশা পরিবহনের বাস নয়, ঈদে প্রায় প্রতিটি পরিবহনেই একইভাবে দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করা হয়েছে। একই সাথে প্রতিটি গাড়ি থেকে দ্বিগুণ-তিনগুণ চাঁদা তোলা হয়েছে। সায়েদাবাদ টার্মিনালের একজন বাস মালিক বলেন, সাধারণত গাড়িপ্রতি ৮শ’ টাকা চাঁদা দিতে হয়। ঈদে সেটা বেড়ে হয়েছিল ৩ হাজার টাকা। ভুক্তভোগি যাত্রীদের মতে, চাঁদার হার বেড়ে যাওয়ার কারণে মালিক শ্রমিকরা বাধ্য হয়ে ভাড়া বাড়ায়। বাড়তি টাকা গুণতে হয় যাত্রীদের। যুগ যুগ ধরে এই প্রথা চলে আসছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন