জিয়া ও এরশাদ সুবিধা থেকে বাদ এরশাদের ভাতা বহাল রাখার দাবি
স্টাফ রিপোর্টার : অবসরে যাওয়া প্রেসিডেন্টদের ভাতা বৃদ্ধির লক্ষে জাতীয় সংসদে ‘রাষ্ট্রপতির অবসরভাতা, আনুতোষিক ও অন্যান্য সুবিধা আইন-২০১৬’ নামে একটি বিল পাস করা হয়েছে। এই বিলের বিধান অনুযায়ী বর্তমান প্রেসিডেন্ট অবসরে গেলে ৪৫ হাজার ৯০০ টাকা ভাতাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পাবেন। তবে সর্বোচ্চ আদালত ঘোষিত অবৈধ রাষ্ট্রপতিরা এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবেন।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে শুরু হওয়া সংসদ অধিবেশনে বিলটি পাসের প্রস্তাব উত্থাপন করেন কৃষি মন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী। বিলটি পাসের বিরোধিতা করেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সদস্যরা। তারা ‘সর্বোচ্চ আদালত ঘোষিত অবৈধ রাষ্ট্রপতিরা এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবেন’ এই বিধান রাখার বিষয়ে কঠোর আপত্তি জানান। অবশ্য তাদের আপত্তি কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়। পরে সর্বসম্মতিতে বিলটি পাস হয়।
বিলটির উপর আলোচনায় অংশ নিয়ে ফখরুল ইমাম বলেন, আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আসার জন্য জাতীয় পার্টি তিন বার সহযোগিতা করেছে। তাই তারা জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের সুযোগ সুবিধা কেড়ে নিতে পারেন না। কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, একটি মামলার রায়ে সুপ্রীম কোর্ট এরশাদের ১৯৮৬ সাল থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত শাসন আমলের বৈধতা দিয়েছে। ফলে তাকে বঞ্চিত করা ন্যয়সঙ্গত হবে না। বাংলাদেশের প্রেসিডেন্টের তালিকায় খুনী মোস্তাকের নাম থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন রওশন আরা মান্নান।
জবাবে কৃষিমন্ত্রী বলেন, যার মনে যা, লাফ দিয়ে ওঠে তা। এই বিলে কোথাও তাদের প্রেসিডেন্টের কথা হয়নি। তারপরও তারা এই বিষয়টি নিয়ে আসলেন কেন? ওই তাদের দূর্বলতার দিক। বিষয়টি সংসদে না উত্থাপন করলেই পারতেন। তারাই প্রমাণ করলেন তাদের নেতা অবৈধ ভাবে ক্ষমতা দখল করেছিলেন। তিনি আরো বলেন, গণতন্ত্র ও মার্শাল ল’ একসঙ্গে চলতে পারে না। জাতীয় পার্টি এখন তা মেনেই সংসদে এসেছেন। অবৈধ ভাবে ক্ষমতা দখলের পথ চিরতরে বন্ধ করতে তিনি বিলে বিরোধী দলকে সমর্থনের আহ্বান জানান।
পাস হওয়া বিলে প্রেসিডেন্টের পেনশন ভাতা ধরা হয়েছে মূল বেতনের ৭৫ শতাংশ। বর্তমান প্রেসিডেন্টর ৬১ হাজার ২০০ টাকা বেতন হিসেবে অবসর ভাতা হয় ৪৫ হাজার ৯০০ টাকা। আনুতোষিকের পরিমাণ এক বছরের জন্য প্রদেয় অবসরভাতা ততগুণ হবে, যত বছর কোন ব্যক্তি প্রেসিডেন্ট দায়িত্ব পালন করেছেন। আর অন্যান্য সুযোগ সুবিধার ক্ষেত্রে একজন ব্যক্তিগত সহকারী ও একজন অ্যাটন্ড্যান্ট এবং দাপ্তরিক ব্যয় পাবেন। এছাড়া একজন মন্ত্রীর প্রাপ্য চিকিৎসা সুবিধা, সরকারি অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্য বিনামূল্যে যানবাহন ব্যবহার, টেলিফোন সংযোগ, কূটনৈতিক পাসপোর্ট এবং দেশের অভ্যন্তরে সার্কিট হাউস ও রেস্ট হাউস ব্যবহারের সুযোগ পাবেন।
বিলে বলা হয়েছে, কমপক্ষে ৬ মাস প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেছেন এমন ব্যক্তি এই সুযোগ-সুবিধা পাবেন। আর অবসর ভাতা গ্রহণ করে কোন প্রেসিডেন্ট মৃত্যুবরণ করলে তার বিধাব স্ত্রী বা ক্ষেত্র মতে বিপতœীক স্বামী মাসিক অবসর ভাতা দুই-তৃতীয়াংশ হারে আমৃত্যু মাসিক ভাতা পাবেন। তবে নৈতিক স্খলন বা অন্য কোনো অপরাধে আদালতে দ-িত হলে কোনো প্রেসিডেন্ট অবসর ভাতা পাবেন না। এছাড়া সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃক অসাংবিধান পন্থায় অবৈধ উপায়ে প্রেসিডেন্ট পদে অধিষ্ঠিত হয়েছেন বা হয়েছিলেন মর্মে ঘোষিত কোনো ব্যক্তি অবসর ভাতা বা অন্যান্য সুবিধা লাভের অধিকারী হবেন না বলেও প্রস্তাবিত আইনে বিধান রাখা হয়েছে।
উল্লেখ্য, জিয়াউর রহমান ১৯৭৭ সালের ২১ এপ্রিল থেকে ১৯৮১ সালের ৩০ মে পর্যন্ত ও হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ১৯৮৩ সালের ১১ ডিসেম্বর ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেন। এ দুই সাবেক সেনা কর্মকর্তার শাসনামলকে অবৈধ ঘোষণা করেছেন সর্বোচ্চ আদালত। তাই বিলের বিধান অনুযায়ী, সাবেক প্রেসিডেন্ট অবসর ভাতা থেকে বঞ্চিত হবেন। গত বছরের ৯ নভেম্বর বিলটি সংসদে উত্থাপন করা হয়। এরআগে গত ৩ আগস্ট মন্ত্রীসভার বৈঠকে বিলটি অনুমোদন দেওয়া হয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন