কালের বিবর্তনে বরিশাল নগরীর ঐতিহ্যবাহী পাম ও ঝাউ গাছ বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম অবিভক্ত বাংলার গভর্নর শেরে বাংলা একে ফজলুল হকের সঙ্গে প্রথম বরিশালে আসেন ১৯২০ সালে। পরবর্তীতে ১৯৩০ সালের দিকে তিনি নোয়াখালী হয়ে আরেকবার বরিশালে আসেন। বরিশালে এসে নগরীর প্রাকৃতিক শোভায় মোহিত হয়ে তার অমর উপন্যাস ‘মৃত্যু ক্ষুধা’য় বরিশাল শহরের প্রাকৃতিক শোভার সংক্ষিপ্ত বর্ণনাও দিয়েছেন।
জাতীয় কবি লিখেছেন, ‘বরিশাল। বাংলার ভেনিস। আঁকাবাঁকা লাল রাস্তা। শহরটি জড়িয়ে ধরে আছে ভুজ-বন্ধের মত করে। রাস্তার দু-ধারে ঝাউ গাছের সারি। তারই পাশে নদী। টলমল টলমল করছে-বোম্বাই শাড়ী পরা ভরা-যৌবন বধুর পথ-চলার মত করে। যত না চলে, অঙ্গ দোলে তার চেয়ে অনেক বেশী। নদীর ওপারে ধানের ক্ষেত। তারও ওপারে নারকেল-সুপারী কুঞ্জঘেরা সবুজ গ্রাম, শান্ত নিশ্চুপ। সবুজ শাড়ী-পরা বাসর-ঘরের ভয়-পাওয়া ছোট্ট কনে-বৌটির মত। এক আকাশ হতে আর-আকাশে কার অনুনয় সঞ্চারন করে ফিরছে। বৌ কথা কও, বৌ কথা কও।’
এ নগরীর প্রায় সব পাম গাছই বিলুপ্ত হয়েছে। পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়েছে বাঁধ রোডে কীর্র্তনখোলা তীরের ঝাউ বাগান। এমনকি বাঁধ রোডে বঙ্গবন্ধু উদ্যানের পাশে যে কয়টি পাম গাছ তাদের অস্তিত্বের জানান দিচ্ছিল, তাও বছর চারেক আগে কেটে ফেলা হয়েছে নিরাপত্তার অজুহাতে। যদিও বঙ্গবন্ধু উদ্যানের কোল ঘেষে বাঁধ রোডের ধারে কিছু সোনালু গাছের আবাদ হয়েছে। কিন্তু পাম গাছ আর ফিরে আসেনি। সোনালু ফুল এ নগরীর শোভা বর্ধন করলেও ঝাউ গাছের অস্তিত্ব প্রায় বিলুপ্ত হয়েছে। নগরীর ফজলুল হক এভেনিউ ও হাসপাতাল রোডের পাশের প্রায় সব পাম গাছও বিলুপ্ত হয়েছে গত এক দশকে।
এ ব্যাপারে বরিশালের বন সংরক্ষকের সঙ্গে টেলিফোনে আলাপ করা হলে তিনি জানান, ‘আপাতত সামাজিক বনায়নের আওতায় কোন প্রকল্প না থাকায় এ নগরীতে অধিদফতর থেকে বনায়নের কোন পরিকল্পনা নেই। তবে আগামীতে এ ধরনের কোন প্রকল্প হলে নগরীকে যতটা সম্ভব সবুজায়নে চেষ্টা করা হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন