স্টাফ রিপোর্টার : সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের ছাত্রী খাদিজা আক্তার নার্গিসের অবস্থা সঙ্কটাপন্ন। রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে গতকাল নার্গিসের অস্ত্রোপচার হয়। অস্ত্রোপচার শেষে তাকে ৭২ ঘণ্টার পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ৭২ ঘণ্টার আগে কিছুই বলা যাচ্ছে না। অন্যদিকে সিলেটে খাদিজার পরিবারে চলছে শোকের মাতম। তার বাবা মাশুক মিয়া সউদি আরব প্রবাসী। খাদিজার মাতা মনোয়ারা বেগম মেয়ের কথা বলে কাঁদতে কাঁদতে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। সিলেটে গতকাল হামলাকারীর বিচারের দাবিতে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে।
রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতাল সূত্র জানায়, সিলেটে ছাত্রলীগ নেতার হামলার শিকার ছাত্রী খাদিজা বেগম নার্গিসের অবস্থা সঙ্কটাপন্ন। গতকাল বিকেলে অস্ত্রোপচার শেষে তাকে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে ৭২ ঘণ্টার নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। চিকিৎসকেরা বলছেন, খাদিজার শারীরিক অবস্থা নিয়ে এখন বলার মতো কিছু নেই। ৭২ ঘণ্টা পার হলে তবেই বলা যাবে।
গতকাল (মঙ্গলবার) সন্ধ্যা ৬টায় স্কয়ার হাসপাতালে খাদিজার নিউরো সার্জারি অপারেশন শেষে এই তথ্য জানান হাসপাতালের নিউরো সার্জারির সিনিয়র কনসালট্যান্ট এএনএম রেজাউস সাত্তার। তিনি বলেন, মঙ্গলবার ভোর থেকেই আমরা খাদিজা আক্তার নার্গিসের চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছি। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার আগে তার মাথার অস্ত্রোপচার সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। তাকে ৭২ ঘণ্টার পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। পরবর্তীতে চিকিৎসার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
এরকম সিভিআর ইঞ্জুরি থাকলে একটা পেসেন্টের লাইফ সেভ করার চাঞ্জেস সাধারণত ফাইভ টু টেন পার্সেন্টের বেশি থাকে না বলে তিনি উল্লেখ করেন।
কনসালট্যান্ট সাত্তার বলেন, আমরা অ্যাসেস করবো সেভেন্টি টু আওয়ার্স দেখার জন্য, যে ওর নিউরোলিজস স্ট্যাটাসটা কি রকম থাকে। তিনি কনসাস লেবেল সিক্স নিয়ে আমাদের কাছে এসেছেন। ফিফটিন হচ্ছে ম্যাক্সিমাম স্কোর।
এক প্রশ্নের জবাবে ওই চিকিৎসক বলেন, আমি নিউরো সার্জন। আমি অপারেশন শেষ করে বেরিয়ে আসছি। তিনি এখনো ঝুঁকিতে আছে এটা কি বলা যায় এমন প্রশ্নের জবাবে ওই নিউরো সার্জন বলেন, অবশ্যই ঝুঁকিতে আছেন।
যদিও এর আগে খাদিজার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছিলেন চিকিৎসকরা। তারা বলেছিলেন, ‘নিউরো সার্জারি অপারেশনে সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা মাত্র পাঁচ শতাংশ।
প্রসঙ্গত সোমবার বিকেলে সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের ছাত্রী খাদিজা পরীক্ষার হল থেকে বের হওয়ার পথে চাপাতি দিয়ে তাকে কুপিয়ে আহত করেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও ছাত্রলীগ নেতা বদরুল আলম।
গুরুতর আহত খাদিজাকে প্রথমে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে এক দফা অস্ত্রোপচার শেষে গতকাল রাতে তাকে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে আনা হয়।
গত সোমবার বিকেলে সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের ছাত্রী খাদিজার ওপর হামলা চালান শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও ছাত্রলীগ নেতা বদরুল আলম। হামলার পর আহত ছাত্রীকে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। গতকাল দুপুরে তার শরীরে অস্ত্রোপচার করা হয়। বিকেলে স্কয়ার হাসপাতালের নিউরো সার্জারির জ্যেষ্ঠ পরামর্শক রেজাউস সাত্তার সাংবাদিকদের বলেন, খাদিজাকে ৭২ ঘণ্টার পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। এরপর তার অবস্থা সম্পর্কে বলা যাবে।
সিলেটের এমসি কলেজে পরীক্ষা দিতে আসা সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী খাদিজা আক্তারের ওপর হামলার খবর পেয়ে গত সোমবার রাতে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছুটে এসে কান্নায় ভেঙে পড়েন খাদিজার বাবা মাশুক মিয়া। এর আগে মঙ্গলবার বেলা দেড়টার দিকে স্কয়ার হাসপাতালের দায়িত্বরত এক চিকিৎসক জানান, ছাত্রীর অবস্থা আশঙ্কাজনক। ওই চিকিৎসক জানিয়েছেন, আহত ছাত্রীর সারা শরীরে কোপের দাগ। মাথার আঘাত গুরুতর। তার শরীরে অস্ত্রোপচার করা হচ্ছে।
গত সোমবার বিকেলে খাদিজা সিলেট এমসি কলেজের পরীক্ষা হল থেকে বের হওয়ার পথে চাপাতি দিয়ে তাকে কুপিয়ে আহত করেন বদরুল। প্রথমে খাদিজাকে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে একদফা অস্ত্রোপচার শেষে গতকাল রাতে তাকে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে নেয়া হয়। স্কয়ার হাসপাতালের নিউরো সার্জারির জ্যেষ্ঠ পরামর্শক রেজাউস সাত্তারের অধীনে তিনি চিকিৎসাধীন।
ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজন কর্মীকে স্কয়ার হাসপাতালে ঢুকতে দেখা গেছে। বিকেলে সংগঠনের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বদরুল ছাত্রলীগের কেউ নয়।
জানা গেছে, খাদিজাকে কোপানোর পর তার সহপাঠীসহ স্থানীয় জনতা ধাওয়া করে বদরুলকে ধরে পুলিশে দেন। তার বাড়ি সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলায়। তিনি শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন। বর্তমানে বদরুল পুলিশ হেফাজতে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আছেন।
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইনের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজন কর্মীকে স্কয়ার হাসপাতালে প্রবেশ করতে দেখা যায়।
শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের প্রধান সৈয়দ হাসানুজ্জামান শ্যামল জানান, বদরুল এ বিভাগের চতুর্থ বর্ষের দ্বিতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী।
সিলেট মহানগর পুলিশের শাহপরান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহজালাল মুন্সি জানান, হামলা চালানোর কথা স্বীকার করেছেন আটক বদরুল। খাদিজার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে টানাপোড়েন থেকে ক্ষিপ্ত হয়ে তিনি হামলা করেছেন বলে পুলিশকে জানিয়েছেন।
কলেজ ছাত্রী খাদিজার বাড়ি সিলেট শহরে উপকন্ঠে মোগলগাঁও ইউনিয়নের হাওসা গ্রামে। সিলেট সদর জেলার জালালাবাদ থানা এলাকায় তাদের বাসা।
খাদিজার মা মনোয়রা বেগম গতকাল ইনকিলাবকে জানান, বদরুল ৩/৪ বছর আগে তাদের বাড়িতে লজিং থেকে লেখা-পড়া করত। এ সুবাদে তাদের পরিবারের সাথে পরিচয়। মনোয়ারা বেগম আরো জানান, গত ৪/৫ মাস ধরে মোবাইল ফোনে বদরুল খাদিজাকে ডিস্টার্ব করে আসছিল। এ নিয়ে বিভিন্ন সময় খাদিজার আত্মীয়-স্বজনেরা বদরুলের পরিবারের কাছে অভিযোগও করেছেন। তাতেও বদরুল দমেনি। সে বিভিন্নভাবে খাদিজাকে হুমকি দিত। ঘটনার কয়েক দিন আগেও মোবাইল ফোনে বাজে প্রস্তাব দিয়েছিল। তার প্রস্তাবে রাজি না হওয়াতে ওই দিন সে হামলা চালায়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন