দেশের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলোতে র্যাপিড আরটি-পিসিআর মেশিন বসানোর জোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সংযুক্ত আরব আমিরাতগামী যাত্রীদের কথা বিবেচনা করে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো। গত বুধবার আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় বিমানবন্দরে র্যাপিড আরটি-পিসিআর টেস্ট মেশিন বসানোর জন্য দুটি কমিটি করে দেয়া হয়। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব এবং স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকের নেতৃত্বে দুটি কমিটি করা হয়েছে। এই দুটি কমিটি মেশিন স্থাপন এবং এ ব্যাপারে কাদের সক্ষমতা আছে, তা নিয়ে সাত দিনের মধ্যে রিপোর্ট তৈরি করবে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের কমিটি দেখবে- কোন কোন কোম্পানির সক্ষমতা আছে মেশিন স্থাপনের এবং সেটি দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের কমিটি কাজ করবে।
সূত্র জানায়, এই মুহূর্তে দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারিভাবে র্যাপিড আরটি-পিসিআর টেস্ট মেশিন বসানোর সম্ভাবনা নেই। কারণ, এটি একটি দীর্ঘসময়ের প্রক্রিয়া। তাই বেসরকারি কোম্পানিকে সেখানে মেশিন স্থাপন এবং টেস্টের জন্য নিয়োগ দেয়া হবে। বেসরকারিভাবে যারা স্বাস্থ্য অধিদফতরের অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান, তাদের মধ্যে থেকে কাউকে দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে ‘এক্সপ্রেশন অব ইন্টারেস্ট’ আহবান করে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয়া হবে। যারা আবেদন করবেন, তাদের মধ্যে থেকে সক্ষমতা যাচাই করে কাউকে অনুমোদন দেয়া হবে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, প্রাথমিকভাবে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পার্কিং এরিয়ায় জায়গা নির্ধারণ করেছে সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ। দুই- একদিনের মধ্যে জাতীয় পত্রিকায় ‘এক্সপ্রেশন অব ইন্টারেস্ট’ বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে। জানতে চাইলে জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) মহাপরিচালক মো. শহীদুল আলম এনডিসি বলেন, টেস্ট ল্যাব বসানোর বিষয়ে সরকার খুবই তৎপর। যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে তা নিয়ে কাজ চলছে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ জানান, ইতোমধ্যে দুটি কমিটি করা হয়েছে। আশা করছি, খুব দ্রুত সমস্যার সমাধান করা যাবে। এদিকে আরব আমিরাত সরকারের নির্দেশনায় বিপাকে আছেন প্রায় ২০ হাজার প্রবাসী। কারণ, দেশটি নির্দেশনা দিয়েছে- বিমানবন্দরে র্যাপিড পিসিআর টেস্টের ব্যবস্থা না থাকলে, সেদেশে পাঁচ দেশের নাগরিকরা প্রবেশ করতে পারবেন না, এর মধ্যে বাংলাদেশও আছে। আমিরাত এয়ারলাইন্স জানিয়েছে, বাংলাদেশ ছাড়া এই তালিকায় আরও আছে- নাইজেরিয়া, ভিয়েতনাম, জাম্বিয়া এবং ইন্দোনেশিয়া। এসব দেশের যাত্রীদের নিজ বিমানবন্দরে র্যাপিড পিসিআর টেস্টের ব্যবস্থা না থাকায় বর্তমানে আরব আমিরাত ভ্রমণ সম্ভব নয়। দুবাইভিত্তিক এয়ারলাইন্সটির সর্বশেষ ট্রাভেল আপডেটে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। আগে নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা কয়েকটি দেশের নাগরিকদের চলতি সপ্তাহে ভ্রমণ ভিসা, এন্ট্রি পারমিট দেয়া শুরু করেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)। এয়ারলাইন্সটির ওই নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে- আমিরাতের নির্দেশনা অনুযায়ী, এসব দেশ কোভিড-১৯ টেস্টের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করলে তাদের নাগরিকরাও দুবাই ভ্রমণের সুযোগ পাবেন।
কবে নাগাদ বিমানবন্দরে র্যাপিড আরটিপিসিআর মেশিন বসানো হতে পারে, জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) প্রফেসর নাসিমা সুলতানা বলেন, বিমানবন্দরে সাইট সিলেকশন হয়ে গেছে, এখন আর্কিটেকচারাল স্ট্রাকচার বানাতে হবে। সে কাজও চলছে। আর মেশিন আমাদের দেশে নেই। সে মেশিন কোথায় পাওয়া যায়, কীভাবে আনা যায়, সে বিষয়গুলো দেখা হচ্ছে।
প্রফেসর নাসিমা সুলতানা বলেন, ওখানে অনেক স্পেস থাকতে হবে, একসঙ্গে অনেক মানুষের বিষয় রয়েছে। সিটিং অ্যারেঞ্জমেন্ট, ওয়েটিং অ্যারেঞ্জমেন্টসহ অনেক বিষয় জড়িত। তাহলে কবে নাগাদ সবকাজ শেষ হতে পারে প্রশ্নে তিনি বলেন, নির্দিষ্ট করে সময় বা টেনটেটিভ সময় বলা যাচ্ছে না। কারণ, সব হয়ে গেলেও মেশিন আনার বিষয় রয়েছে, সেটাও অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন