অর্থনৈতিক রিপোর্টার : চুক্তিভিত্তিক ব্যবস্থাপনা পরিচালক পরিবর্তনের শঙ্কায় চলতি বছরের মার্চ মাস থেকে বিনিয়োগে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত বৃহৎ তিন বাণিজ্যক ব্যাংকে।
আগস্টে সোনালী, অগ্রণী, রূপালী ব্যাংকে নতুন প্রধান নির্বাহী দেয়া হলেও এখনো গুছিয়ে উঠতে পারেননি তারা। যার ফলে এই তিন ব্যাংকে গত ছয় মাস ধরে প্রায় বিনিয়োগ বন্ধ হয়ে আছে। বিনিয়োগ বন্ধ থাকলেও ঋণ আদায় কার্যক্রম জোরদার করেছেন নতুন প্রধান নির্বাহীরা। রূপালী ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী আতাউর রহমান প্রধান যোগদান করেই শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের জানিয়ে দেন তিনি জানুয়ারি পর্যন্ত ঋণ আদায় কার্যক্রম অব্যাহত রাখবেন। যেহেতেু ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি রয়েছে, তাই বিনিয়োগ আপাতত বন্ধ রাখার নির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানান প্রধান কর্যালয়ের একজন মহাব্যবস্থাপক।
তিনি খেলাপি ও অবলোপনকৃত ঋণ আদায়ের জন্য প্রথমে রংপুরে শাখা ব্যবস্থাপক সম্মেলন করেন। রংপুরের আরকে রোড শাখার শাখা ব্যবস্থাপক মিজানুর রহমান মোল্লা বলেন, ঈদ-পরবর্তী পুনর্মিলনীতে নতুন এমডি রংপুরে আমাদের নিয়ে যে বৈঠক করেছেন তাতে তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, নতুন করে কোনো বিনিয়োগে না গিয়ে খেলাপি ও অবলোপনকৃত ঋণ আদায় করতে হবে। আদায়ের টার্গেট পূরণ হলেই ব্যবস্থাপকরা বিনিয়োগ করতে পারবেন এমন দিকনির্দেশনাই দিয়েছেন বলে জানান রংপুর জোনের আরেক শাখা ব্যবস্থাপক মেজবাহ উদ্দিন।
এরপর রূপালী ব্যাংকের নতুন প্রধান নির্বাহী বরিশাল এবং খুলনাতেও শাখা ব্যবস্থাপক সম্মেলন করেন শুধুমাত্র আদায় কার্যক্রম জোরদারের লক্ষ্যে। সর্বশেষ চলতি সপ্তাহের রোববার ঢাকার শাখা ব্যবস্থাপকদের নিয়ে বসেন তিনি। সেখানেও আদায় ছাড়া বিনিয়োগে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করেন তিনি।
এ বিষয়ে রূপালী ব্যাংকের পরিচালক ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ইনকিলাবকে বলেন, আতাউর রহমান প্রধান নতুন বিনিয়োগের বিরোধিতা করছেন। এমনকি সর্বশেষ বোর্ড সভায় পুনঃঅর্থায়ন স্কিমের আওতায় দু’টি অটোবিক্রস-এর বিনিয়োগও তিনি আটকে দিচ্ছিলেন। তবে আমার সহযোগিতায় তা পাস হয় শর্তসাপেক্ষে।
তিনি বলেন, ব্যাংক একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান যাদের নিজেদের আয়ে প্রতিষ্ঠানের সব খরচ মিটিয়ে সরকারকে লাভ দিতে হবে। যদি বিনিয়োগ না করা হয় তবে লাভ হবে কিভাবে?
এই পরিচালকের মতে, বর্তমানে দেশে বিনিয়োগ উপযোগী সর্বোৎকৃষ্ট পরিবেশ বিরাজ করছে। এসময় আদায়ের পাশাপাশি বিনিয়োগ চলমান না হলে জননেত্রী শেখ হাসিনার ভিশন-২০৪১ পূরণ হবে না।
অগ্রণী ব্যাংকের এমডি এবং সিইও শামস-উল-ইসলাম, অগ্রণী ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা হওয়ায় আদায় কার্যক্রম জোরদারের পাশাপাশি কিছু বিনিয়োগ চালু রেখেছেন। ইতোমধ্যে তিনি সিলেট এবং চট্টগ্রামের শাখা ব্যবস্থাপক ও ব্যবসায়ীদের সাথে ঋণ আদায় নিয়ে বৈঠক করেছেন বলে জানা গেছে।
তবে সোনালী ব্যাংকে গত মার্চ থেকে বিনিয়োগ প্রায় বন্ধই রয়েছে। নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক যোগদান করলেও গতি ফিরে আসেনি কোনো বিনিয়োগে। তবে নতুন প্রধান নির্বাহী ওবায়দুল্লাহ আল মাসুদ বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাথে করা সমঝোতা স্মারক অনুসারে আমাদের বিনিয়োগযোগ্য অনেক অর্থ হাতে রয়েছে। ঠিক তেমনি উল্টোভাবে সবচেয়ে বৃহৎ ব্যাংক হওয়ায় খেলাপি ঋণ আদায়ের টার্গেটও অনেক বেশি। জানুয়ারি থেকে পুরোদমে বিনিয়োগে যাবো বলে তিনটি বিভাগীয় কার্যালয়ে ব্যবস্থাপক সম্মেলনে জানিয়েছি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন