শতবছরের পুরনো আইনকে যুগোপযোগী করতে ‘মহাসড়ক আইন-২০২১’ নামের একটি বিল জাতীয় সংসদে উত্থাপন করা হয়েছে। বিলটি আইনে পরিণত হলে মহাসড়কে যানবাহন চলাচালে বিঘ্ন সৃষ্টিকারী সকল স্থাপনা উচ্ছেদ ও সড়কের জমি উদ্ধার করা হবে। মহাসড়কের পাশে হাট-বাজার বসতে পারবে না। অযান্ত্রিক যানবাহন বন্ধ করা হবে। মহাসড়কে সাইন বোর্ড, বিল বোর্ড এবং তোরণ নির্মাণে শাস্তি পেতে হবে।
গতকাল শনিবার স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে শুরু হওয়া অধিবেশনে বিলটি উত্থাপন করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। পরে বিলটি যাচাই-বাছাইয়ের জন্য সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়। কমিটিকে আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে সংসদে প্রতিবেদন জমাদানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নতুন আইন পাস হলে হাইওয়ে রক্ষণাবেক্ষণ, ব্যবস্থাপনা ও নির্মাণে বিদ্যমান ‘দ্য হাইওয়ে অ্যাক্ট-১৯২৫’ রহিত হবে।
সংসদে উত্থাপিত বিলের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে একটি আধুনিক, উন্নত, কার্যকর মহাসড়ক পরিবহন ব্যবস্থা গড়িয়া তুলিবার লক্ষ্যে অবকাঠামোগত উন্নয়ন, নিরাপদ ও গতিশীল যানবাহন চলাচল, মহাসড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে যুগোপযোগী মহাসড়ক নির্মাণ, উন্নয়ন, পরিচালনা, ব্যবস্থাপনা ও রক্ষণাবেক্ষণ পদ্ধতি তুলিবার জন্য নতুন আইন প্রণয়ন করা সমীচীন ও প্রয়োজনীয়’।
প্রস্তাবিত আইনের ৯ ধারায় সড়ক ও জনপথ বিভাগের অনুমোদন ছাড়া মহাসড়কে যেকোনো অবকাঠামো স্থাপনকে ‘অনুপ্রবেশ’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এ অপরাধের জন্য বিলের ১৪ ধারায় সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদন্ড বা ৫০ হাজার থেকে পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা কিংবা উভয় দন্ডের বিধান রাখা হয়েছে। আইনে ক্ষতিকারক উপাদান ছড়িয়ে দেয় এমন মোটরগাড়ি মহাসড়কে চলানোর অপরাধে সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা জরিমানার প্রস্তাব করা হয়েছে। মহাসড়কে ফসল, খড় বা অনুরূপ উপকরণ শুকানোর জন্য রাখা হলে বা অনির্ধারিত জায়গা দিয়ে চলাচলের অপরাধে সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে। মহাসড়কে ঝুলন্ত বিলবোর্ড, সাইনবোর্ড ও তোরণ নির্মাণ বন্ধের বিধান অমান্য করলে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।
বিলে বলা হয়েছে, নির্ধারিত মাশুল প্রদান সাপেক্ষে নাগরিক সেবা প্রদানকারী সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো ইউটিলিটি সংযোগগুলো মহাসড়কের প্রান্তসীমা বরাবর স্থাপন করা যাবে। তবে সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোও অনুমতি ছাড়া রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি করতে পারবে না। করলে তাদেরকেও শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। ‘মোবাইল কোর্ট আইন-২০০৯’ অনুযায়ী মোবাইল কোর্ট আইনের উল্লিখিত শাস্তি প্রদান করবে।
বিলে আরো বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রভাব হতে মহাসড়কের সম্ভাব্য ক্ষতি কমাতে মহাসড়ক নেটওয়ার্কের ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলগুলো চিহ্নিত করে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব সহনশীল টেকসই অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে। প্রতিবন্ধী, শিশু ও বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিদের চলাচলে মহাসড়কে নির্দ্দিষ্ট স্থান রাখার কথা বলা হয়েছে ওই বিলে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন