বর্ণিল সাজে সাজবে সোহরাওয়ার্দী থেকে বিমানবন্দর : সম্মেলনে পোস্টারে আত্মপ্রচার করলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি
স্টাফ রিপোর্টার : আর মাত্র ১৬দিন পরই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের ২০তম সম্মেলন। দলের জাতীয় সম্মেলনকে সামনে রেখে এরই মধ্যে বর্ণিল রূপ ধারণ করেছে ধানমন্ডির আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়। আর ১৫ অক্টোবরের মধ্যে গণভবন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে বিমানবন্দর বর্ণাঢ্য আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হবে। তবে এবারের সম্মেলনকে কেন্দ্র করে কোনো নেতা ব্যানার, পোস্টারে আত্মপ্রচার করলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে দলের পক্ষ থেকে আগেই হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলনকে ঘিরে বিগত ওয়ান ইলেভেন কেন্দ্রিক নেতাদের কর্মকা- আলোচনায় বেশ গুরুত্ব পাচ্ছে। গত আট বছর আগের ওয়ান ইলেভেনের সময়ে দলে নেতাদের কার কি ভূমিকা ছিল, আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে এই মুহূর্তে তা বেশ জমে উঠেছে। ওই সময়ে যারা হুমকি ও রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে দল ও দলের হাইকমান্ডের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন এবারের সম্মেলনে তাদের মূল্যায়ন করা হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিচ্ছেন দলটির শীর্ষ নেতারা।
জানা গেছে, দলের শীর্ষ পর্যায়ের অভ্যন্তরীণ আলোচনাতেও স্থান পাচ্ছে ওয়ান ইলেভেনের প্রেক্ষাপট। চলছে বিচার-বিশ্লেষণ। নেতাদের ব্যক্তিগত অফিস, দলীয় কার্যালয় ও বাসার ড্রয়িংরুম সর্বত্রই এখন ওয়ান ইলেভেনের কর্মকা- আলোচনা। দুই-চারজন নেতা একত্রিত হলেই শুরু হয়ে যায় আলোচনা। সেই বৈরী সময়ের অবদানের কথা স্মরণ করে পুরস্কার পেতে চান, তখন যারা মাঠে ছিলেন তারা। সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় যারা রাজনীতি থেকে দূরে সরে ছিলেন, পালিয়ে বেড়িয়েছেনÑ সম্মেলনকে কেন্দ্র করে তারা আবার সরব হয়ে উঠেছেন। সম্মেলনকে কেন্দ্র করে পদ-পদবীর প্রত্যাশা করছেন তারা। আর তাতেই আপত্তি ওয়ান ইলেভেনের সময়ে মাঠে থাকা নেতাদের। যারা নিষ্ক্রিয় ছিলেন অথবা পালিয়ে বেড়িয়েছেন, এখন তাদের পদ-পদবী পাওয়া থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে চান সে সময়ের সরব থাকা রাজনীতিকরা।
আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটির অন্তত পাঁচ জন নেতা বলেন, ওয়ান ইলেভেনের সময়ে কোনো কোনো নেতা নেত্রীর (শেখ হাসিনা) পক্ষে কথা বলতে রাজি হননি। সে সময় তারা সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দয়া-দাক্ষিণ্যও নিয়েছেন। আমরা যারা নেত্রীর পক্ষে ছিলাম, তারা আমাদের সমালোচনা করেছেন। আসন্ন সম্মেলনকে ঘিরে তারা আবার পদ-পদবীর আশা করছেন, বিভিন্নভাবে তদবির করছেন। তারা আবারও নেতা হলে দুঃসময়ে নেত্রীর পাশে থাকবেন না। দলের জন্যে কাজ করবেন না। তাদেরকে নেতা বানানো কোনোভাবেই ঠিক হবে না।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য সাহারা খাতুন বলেন, গত সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে রাজনীতিতে কিছু পরীক্ষিত নেতা তৈরি হয়েছেন। সেই সময়ে আমাদের দলের কিছু নেতা সাহসের পরিচয় দিয়ে রাজনীতি করেছেন। শেখ হাসিনাকে মুক্ত করার আন্দোলন করেছেন। আবার কিছু নেতা ছিলেন, যারা ওয়ান ইলেভেন সরকারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলেছেন। শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর সেই নেতারা ক্ষমাও পেয়ে গেছেন। তবে শেখ হাসিনা সব ভুলে গেছেন, এটা আমি মনে করি না। ওয়ান ইলেভেনের সরকারের সময়ে মাঠে থাকা সাহারা খাতুন বলেন, নিশ্চয়ই ওই দুঃসময়ের কথা নেত্রীর মনে আছে।
গত কয়েকদিনে রাজনৈতিক নেতাদের বাসা, অফিস ও ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয় ঘুরে দেখা গেছে, ওয়ান ইলেভেনের আলোচনায় সরব রয়েছেন নেতারা। সেই সময়ের রাজনৈতিক পটভূমিকে কেন্দ্র করে যেসব নেতা ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেছেন তারা চান না, সেই সময়ের পালিয়ে থাকা সুবিধাবাদী নেতারা দলে ফিরে আসুক। তারা বলছেন, দুঃসময়ে যারা পালিয়ে থাকেন তারা সব সময়েই পালিয়ে থাকবেন। সুতরাং তদের দলে ফেরার সুযোগ না দেয়াই যুক্তিযুক্ত। সেখানে যাতায়াত করা নেতারা সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিভিন্ন স্মৃতিচারণা করছেন। এরমধ্যে বেশি আলোচনা হচ্ছে সভাপতি শেখ হাসিনার মুক্তির আন্দোলনে কাদের পাওয়া গেছে, আর কাদের পাওয়া যায়নি। কারা সেই সরকারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলেছেন এসব। ওয়ান ইলেভেনের প্রেক্ষাপটে দলের নেতৃত্বের বিপক্ষে যেসব নেতা গিয়েছিলেন, বর্তমানে তাদের অনেক নেতাই আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সরব হতে শুরু করেছেন। তারা শেখ হাসিনার আশেপাশে এবং ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়েও যাতায়াত করছেন। কিন্তু তাদের এই তৎপরতা ওয়ান ইলেভেনের সময়কার সাহসী নেতারা ভালোভাবে নিচ্ছেন না। তারা বিতর্কিত সেসব নেতাদের তখনকার ভূমিকা নিয়ে এখনকার আলোচনায় তুলোধুনা করছেন।
এ বিষয়ে দলের সভাপতিম-লীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেন, এক-এগারো রাজনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ ও অবিচ্ছেদ্য অংশ। সব কিছুতেই এক-এগারো সামনে আসবে এটাই স্বাভাবিক। তিনি বলেন, সেই সময়ে যারা মাঠে ছিলেন তারা এদলের জন্যে পরীক্ষিত ও ত্যাগী, এটার প্রমাণও তারা দিয়েছেন। মতিয়া বলেন, তবে সেই সময়ের কথা ভুলে গেছেন শেখ হাসিনা। তিনি ক্ষমাশীল, তাই সবাইকে ক্ষমাও করে দিয়েছেন।
জানা গেছে, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম গত সপ্তাহের শেষের দিকে সম্মেলন প্রস্তুতির একটি সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে এক-এগারোর স্মৃতিচারণা করেন। মূলত সেদিন থেকেই ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক-এগারো নিয়ে আলোচনার ডালপালা ছড়ায়। এরপর শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফিরে গণভবনেও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনায় এক-এগারোর স্মৃতি বর্ণনা করেন। দলের শীর্ষ দু’নেতার মুখ থেকে এই আলোচনার সূত্রপাত ঘটায় পরবর্তীতে এক-এগারো সবার মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে।
বর্ণিল সাজে সাজবে সোহরাওয়ার্দী থেকে বিমানবন্দর
এবার আওয়ামী লীগের সম্মেলনে বর্ণিল রূপ ধারণ করেছে ধানমন্ডির আওয়ামী লীগ সভাপতির কার্যালয়। আর ১৫ অক্টোবরের মধ্যে গণভবন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে বিমানবন্দর হবে আলোকসজ্জিত। মঞ্চ ও সাজসজ্জা উপ-কমিটির আহ্বায়ক এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, দেশের মানুষের মধ্যে আওয়ামী লীগের সম্মেলন ঘিরে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা রয়েছে। আমরা এই সম্মেলনকে উৎসবমুখর করার উদ্যোগ নিয়েছি।
আওয়ামী লীগ সূত্র জানিয়েছে, ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে আলোকসজ্জার কাজ শুরু হয়েছে। প্রথমেই ধানমন্ডির কার্যালয়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং সমগ্র সড়ক আলোয় সজ্জিত হয়েছে। সারা ঢাকা আলোকসজ্জায় সজ্জিত হবে। ঢাকার সড়কগুলোতেও বাতি লেগেছে। আগামী ২২-২৩ অক্টোবর দলের জাতীয় সম্মেলনকে সামনে রেখে এই সাজ।
সম্মেলনে পোস্টারে আত্মপ্রচার করলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া হবে
২২ ও ২৩ অক্টোবর আওয়ামী লীগের ২০তম সম্মেলনকে ঘিরে ইতোমধ্যে পোস্টার, ব্যানার প্রকাশ করছে নেতাকর্মীদের কেউ কেউ। কিন্তু এটা সম্মেলনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে। যারা এসব করবে তাদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামীলীগের সভাপতিম-লীর সদস্য সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন