চিড়িয়াখানার ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত হরিণ শাবক বিক্রি করছে কর্তৃপক্ষ। এজন্য প্রতিটি হরিণ শাবকের দাম ৭০ হাজার টাকার পরিবর্তে ৫০ হাজার টাকা পুনরায় নির্ধারণ করা হয়েছে। এক জোড়া ময়ূরের দাম ৫০ হাজার টাকা। গতকাল সোমবার মৎস ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের (প্রাণিসম্পদ-২) থেকে হরিণের দাম পুনরায় নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
আগে প্রতিটি হরিণ শাবকের সরকারি মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছিল ৭০ হাজার টাকা। তবে এই মূল্য আরও কমানোর জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছিল চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। তার পরিপ্রেক্ষিতেই হরিণ শাবকের দাম পুনরায় নির্ধারণ করা হলো।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মতির পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় চিড়িয়াখানার উদ্বৃত্ত প্রতিটি চিত্রা হরিণের বিক্রয় মূল্য ৭০ হাজার টাকার পরিবর্তে ৫০ হাজার টাকা পুনরায় নির্ধারণে সম্মতি প্রদান করা হলো। এ বিষয়ে জাতীয় চিড়িয়াখানার পরিচালক ডা. মো. আব্দুল লতিফ বলেন, এখন থেকে হরিণের মূল্য ৭০ হাজার টাকার পরিবর্তে ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি হবে। আমরা ইতোমধ্যে ৫৫টি হরিণ বিক্রি করেছি। এখন থেকে নতুন দামে হরিণ বিক্রি করব।
জানা গেছে, দীর্ঘ সময় চিড়িয়াখানা ও এর আশেপাশের এলাকায় মানুষের কোলাহল না থাকায় নিরিবিলি পরিবেশে প্রাণীরা নির্বিঘেœ সঙ্গীদের সঙ্গে সময় কাটিয়েছে। দর্শনার্থীরা না আসায় এই প্রাণীদের কেউ উত্ত্যক্ত করছে না। প্রাণীগুলো ফুরফুরে মেজাজে আছে। এ কারণে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে সব প্রাণীর প্রজনন ক্ষমতা বেড়ে গেছে।
এমন উপযুক্ত পরিবেশে চলতি বছরে ইমো পাখি বাচ্চা দিয়েছে ২২টির মতো। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরল প্রাণী ইম্পালা দুটি বাচ্চা দিয়েছে। জলহস্তীর ধারণ ক্ষমতা ৮টা থাকলেও সেগুলো বংশবৃদ্ধি করে ১৪টিতে দাঁড়িয়েছে। জেব্রার ধারণ ক্ষমতা চারটা হলেও এখন সেটি বেড়ে হয়েছে ৭ টি। বানরের সংখ্যাও প্রচুর বেড়েছে।
এছাড়া চিড়িয়াখানায় হরিণের জন্য বরাদ্দ যে তিনটি শেড রয়েছে, সেখানে সর্বসাকুল্যে ১৭০টি হরিণ অবাধে বিচরণ করতে পারে। কিন্তু লকডাউনের মধ্যেই হরিণের সংখ্যা ৩৫০ ছাড়িয়ে গেছে। প্রতি সপ্তাহে তিন-চারটি হরিণের বাচ্চা হচ্ছে।
অন্যদিকে, ময়ূরের ধারণক্ষমতা ৮০টি হলেও খাঁচায় রয়েছে ৬০টি পূর্ণবয়স্ক ময়‚র। গত ৮ মাসে ডিম ফুটিয়ে ১৩০টি বাচ্চা ফোটানো হয়েছে, যার প্রত্যেকটি সুস্থ আছে। এভাবে অল্প সময়ের মধ্যে চিড়িয়াখানায় প্রাণীরা ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত বাচ্চা প্রসব করায় এসব প্রাণী কমিয়ে আনা জরুরি হয়ে পড়েছে। কিন্তু মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয় শুধুমাত্র হরিণ ও ময়ূর এই দুটি প্রাণী বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে।
চিড়িয়াখানার সূত্র জানায়, বিক্রির জন্য আগে প্রতি জোড়া হরিণের দাম ধরা হয়েছিল এক লাখ ৪০ হাজার টাকা এবং প্রতি জোড়া ময়‚রের দাম ধরা হয়েছে ৫০ হাজার টাকা। আগ্রহীদের এসব প্রাণী নারী-পুরুষ জোড়া ধরেই কিনতে হবে। একটি কেনা যাবে না।
হরিণগুলোর নিয়মিত প্রজনন হওয়ায় এখন প্রতি মাসে অন্তত ২০টি করে হরিণ শাবক বিক্রি করা সম্ভব বলে আশা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ৫১টি চিত্রা হরিণ বিক্রি করা হয়েছে। চিড়িয়াখানা সূত্রে জানা গেছে, বন্য প্রাণী পালতে গেলে বন বিভাগের অনুমোদনের প্রয়োজন হয়। মূলত যাদের কাছে সেই অনুমোদনপত্র বা নো অবজেকশান সার্টিফিকেট থাকে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ শুধুমাত্র তাদের কাছেই প্রাণীগুলো বিক্রি করতে পারে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন