করোনা মহামারির কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর গত ১৯ আগস্ট থেকে খুলেছে দেশের পর্যটন ও বিনোদন কেন্দ্রগুলো। রিসোর্ট, বিনোদন পার্ক, হোটেল-মোটেলের পক্ষ থেকে এ জন্য স্বস্তি প্রকাশ করা হয়েছে। করোনায় দীর্ঘদিন ঘরবন্দি থাকার পর মানুষ প্রাণ খুলে একটু নিঃশ্বাস নিতে ছুটছেন সাগর পাহাড় অথবা প্রকৃতির কাছে। ফলে পর্যটন কেন্দ্রগুলো ভ্রমণপিপাসুদের পদচারণায় আবার মুখর হয়ে উঠেছে।
ঐতিহাসিক নিদর্শন ও প্রকৃতি অপরূপ সৌন্দর্যে ঘেরা দেশের উত্তরাঞ্চলেও পরিবার-পরিজন নিয়ে ছুটে আসছেন অনেকে। দিনাজপুর, রংপুর ও বগুড়া অঞ্চলে ঐতিহাসিক স্থাপনা ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি গড়ে উঠেছে কিছু কৃত্রিম বিনোদন কেন্দ্র। সেগুলোতেই প্রতিদিন নারী-পুরুষের ভিড় বাড়ছে। তবে এসব বিনোদনের জায়গাগুলোতে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। এবিষয়টি পর্যবেক্ষণেরও কোনো ব্যবস্থা নেই বলে অনেকের অভিযোগ।
দেশের উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোর মধ্যে বগুড়ায় মহাস্থান গড়, পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার, নাটোরের রাজবাড়ী, রংপুরের তাজহাট চৌধুরীবাড়ী, নীলফামারী তিস্তা বাঁধ, পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া, বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্ট, চা-বাগান, দিনাজপুরের রামসাগর, কান্তজিউ মন্দির, সিংড়া ফরেস্ট এ স্থানগুলোর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও ঐতিহাসিক নিদর্শন পর্যটকদের আকৃষ্ট করে। এছাড়া দিনাজপুরের নবাবগঞ্জে স্বপ্নপুরী ও রংপুরের ভিন্নজগত নামে কৃত্রিমভাবে গড়ে উঠা পার্কগুলোও পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এর বাইরেও ছোট ছোট আরও কিছু বিনোদন কেন্দ্র, পার্ক ও রিসোর্ট রয়েছে। সহনীয় বাজেটে পরিবার নিয়ে এসব প্রাকৃতিক, ঐতিহাসিক ও বিনোদন স্পটগুলোতে মানুষ অনায়াসে ভ্রমণ করতে পারছেন। পর্যটন মৌসুম এখনো শুরু না হলেও অনেকে পরিবার-পরিজন নিয়ে একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে ছুটে আসছে এসব স্থানে।
উন্মুক্ত বিনোদন কেন্দ্র হিসাবে দিনাজপুরের ঐতিহাসিক গোর এ শহীদ ময়দানটি এখন আশপাশের লোকজনের কাছে খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। গোর এ শহীদ ময়দানের বিশালতা শিশু সন্তানদের কাছে পছন্দের জায়গা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাধারণ মানুষের ভিড় ও শিশু-কিশোরদের চাহিদার কারণে মাঠের একপ্রান্তে চরকিসহ ছোটোখাটো রাইট গড়ে উঠেছে। পরসা সাজিয়েছে ফুচকাসহ বিভিন্ন রকমারি খাবারের দোকান।
তবে দিনাজপুরের বিখ্যাত সেই রামসাগর নিয়ে আগত পর্যটকদের রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। ঐতিহাসিক রামসাগর ঘুরে পর্যটকদের অভিযোগের সত্যতাও মিলেছে। দেখা গেছে জৌলুসহীন দীঘির পানি ছাড়া সেখানে আর কিছুই নেই। নামেই গগন ফাটার মতো অবস্থা হয়েছে রামসাগরের। বন বিভাগের নিয়ন্ত্রণে থাকা রামসাগরের গেট ইজারার মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা আদায় হলেও নেই বিনোদনের সামান্যতম কোনো ব্যবস্থা। তাই একপ্রকার বাধ্য হয়ে অথবা নাম শুনেই অনেকে যাচ্ছে রামসাগরে। সরকারের বিভিন্ন দফতরের ব্যবস্থাপনায় বিভিন্ন ঐতিহাসিক নিদর্শনের স্পটগুলো একই কারণে পর্যটক বা ভ্রমণপিপাসুদের আকর্ষণ করতে পারছে না। তব বিনোদনের সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থান হয়ে দাঁড়িয়েছে স্বপ্নপুরী। সমুদ্র সৈকত না থাকলেও কৃত্রিমভাবে তৈরি রবোকোপসহ অগণিত রাইড, বিশাল এলাকা রাত্রীযাপনের সুব্যবস্থায় ভ্রমণপিপাসুরা স্বাচ্ছন্দ্যে এখানে আসছেন। রংপুরের ভিন্নজগতও পিছিয়ে নেই। তবে স্বপ্নপুরীর বড় অন্তরায় যাতায়াত ব্যবস্থা। নিজস্ব যানবাহন ছাড়া স্বপ্নপুরী ভ্রমণ আনন্দের পরিবর্তে কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আর এ কারণে শীত মৌসুমে পিকনিক পার্টির জায়গা পাওয়া মুশকিল হয়ে পড়ে।
স্বপ্নপুরীর স্বপ্নদ্রষ্টা দেলওয়ার হোসেন জানান, দীর্ঘদিন পর বিনোদন কেন্দ্র খুলে দেওয়ায় তিনি অত্যন্তÍ খুশি। সাধারণ মানুষের বিনোদনের ব্যবস্থার মধ্যদিয়ে ব্যবসায় সফলতা পেয়েছেন। তার আরও একটি স্বপ্ন বাস্তবায়নের কাজ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। তা হলো তাজমহলের আদলে একটি আধুনিক মসজিদ নির্মাণ। স্বপ্নপুরী ঘুরেছে একাধিকবার তারপর এখন মানুষ যাচ্ছে নির্মাণাধীন মসজিদটি দেখার জন্য।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন