সোমবার ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার’ যেন মৃত্যুফাঁদ

খলিলুর রহমান | প্রকাশের সময় : ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১২:০০ এএম

রাজধানীর মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারে প্রতিদিন একটা না একটা দুর্ঘটনা ঘটছে। এতে অনেকেই হতাহত হচ্ছেন। গতকালও ওই ফ্লাইওভারে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন দুইজন। এতে করে ফ্লাইওভারটি যেনমৃত্যুর ফাঁদে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয়রা। তবে দ্রুত সময়ের মধ্যে ওই ফ্লাইওভারে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করে বেপরোয়া গাড়ি চালকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হলে দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব বলে মনে করছেন ভুক্তভোগীরা।

সর্বশেষ গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে তিনটার দিকে ওয়ারী থানার সুপার মার্কেট মসজিদ সংলগ্ন হানিফ ফ্লাইওভারে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় দুই যুবক নিহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন- মাসুম ও নাসির হোসেন।
ওয়ারী থানার এসআই মিজানুর রহমান ইনকিলাবকে জানান, রাজধানীর সুপার মার্কেট মসজিদ সংলগ্ন হানিফ ফ্লাইওভার ব্রিজে মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুজন দুর্ঘটনার শিকার হন। পরে রক্তাক্ত অবস্থায় আমরা দুজনকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

ওয়ারী থানায় ওসি কবির হোসেন হাওলাদার জানান, নিহতরা যাত্রাবাড়ী থেকে গুলিস্তানে যাওয়ার পথে ফ্লাইওভারের মোটরসাইকেলটি দুর্ঘটনায় পড়ে। নিহত দুইজনের মধ্যে ৩৮ বছর বয়সি নাসির হোসেন ঠিকাদারি করতেন। তার গ্রামের বাড়ি বরিশালে। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে তিনি থাকতেন শ্যামপুর এলাকায়। অপরজন ৩০ বছর বয়সি মাসুম মিয়ার গ্রামের বাড়ি জামালপুর জেলায়। তিনি রাজধানীর কাজলা এলাকায় পরিবারের সাথে বসবাস করতেন। তারা একে অপরের পরিচিত ছিলেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।

ওসি কবির হোসেন বলেন, ফ্লাইওভারের সুপার মার্কেট মসজিদ সংলগ্ন এলাকায় নাসিরদের মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ল্যাম্পপোস্টে ধাক্কা খায়। গুরুতর অবস্থায় পুলিশ তাদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক দুজনকেই মৃত ঘোষণা করেন।

শুধু মাসুম ও নাসির নয়, সম্প্রতি হানিফ ফ্লাইওভারের ওপর মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় টিপু নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন আরও দু’জন। নিহত টিপু ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের স্টাফ আব্দুর রহিমের ছেলে। অ্যালিফ্যান্ট রোড স্টাফ কোয়ার্টারে পরিবারের সঙ্গে থাকতেন। এছাড়াও গত জানুয়ারি মাসে হানিফ ফ্লাইওভারে যাত্রীবাহী বাসচাপায় এক কমিউনিটি পুলিশ ও এক মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছিলেন। এদিকে, পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত ২ মাসে হানিফ ফ্লাইওভারে সড়ক দুর্ঘটনায় ৯ জন নিহত ও আরো অনেকে আহত হয়েছেন। এছাড়া যাত্রাবাড়ী, ওয়ারী থানা ও ট্রাফিক পুলিশ সূত্র জানায়, ২০১৬-১৭ সালে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারে দুই শতাধিক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে প্রায় ৪০ জন মারা গেছেন, আহত হয়েছেন দেড় শতাধিক। সম্প্রতি শুধু যাত্রাবাড়ী থানার তথ্যে দেখা যায়, ২০১৯ সালে ৩৩ জন, ২০২০ সালে ৫৭ এবং ২০২১ সালের ৯ আগস্ট পর্যন্ত ৩৯ জন সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। তাদের মধ্যে অনেকেরই মৃত্যু হয়েছে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারে, যাদের বড় একটি অংশ বাইকার। এসব মৃত্যুর মামলা হয়েছে যাত্রাবাড়ী থানায়।

ফ্লাইওভারে নিয়মিত যাতায়াতকারী আবুল হোসেন মোল্লা নামে এক ব্যবসায়ী জানান, ফ্লাইওভারে দুর্ঘটনা নিত্য দিনের ঘটনা। ফ্লাইওভারে উঠলেই কারো আর হুঁশ থাকে না। সবাই গতির প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়। বাস, ট্রাক, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেল চালকরা কে কাকে ওভারটেক করতে পারে সেটা নিয়ে ব্যস্ত থাকে। ফ্লাইওভারে সর্বোচ্চ গতিসীমা ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার নির্ধারণ করে দেয়া হলেও তা কেউ মানে না। বেশিরভাগ সময়ই দেখা যায় চালকরা সীমা অতিক্রম করে বেশি গতিতে গাড়ি চালায়। সবাই যদি গতিসীমা মেনে গাড়ি চালায় তবে দুর্ঘটনা অনেকাংশে কমে যাবে বলে মনে করি। পুরো ফ্লাইওভারে সিসি ক্যামেরা বসিয়ে গতি পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণের দাবি জানান তিনি।

কাজলা এলাকার বাসিন্দা রবিউল ইসলাম নামের আরেক ব্যক্তি বলেন, এই ফ্লাইওভারটি সঠিকভাবে নির্মাণ করা হয়নি। কারণ ফ্লাইওভারের দিয়ে দুটি লাইন থাকবে, যা হবে অনেক চওড়া। যাতে বিভিন্ন ধরনের যানবাহন সহজেই চলাচল করতে পারে। বর্তমানের ফ্লাইওভারের যে করুণ অবস্থা গাড়ী চলাচল করতে অনেক কঠিন হয়ে পড়েছে। ফ্লাইওভারে উপরে সবসময় যানজট লেগেই থাকে। এর কারণে প্রতিদিন দুর্ঘটনা ঘটছে।

তবে দুর্ঘটনার কারণ জানতে চাইলে ওয়ারী থানায় ওসি কবির হোসেন হাওলাদার ইনকিলাবকে বলেন, ফ্লাইওভারে কোনো স্পিড ব্রেকার নেই। তাই চালকরা বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চলান। তবে স্পিড ব্রেকার নির্মাণ করা হলে দুর্ঘটনা কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব বলে জানিয়েছেন পুলিশের ওই কর্মকর্তা। তবে সিসি ক্যামেরার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কিছু জায়গায় সিটি ক্যামেরা রয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (5)
আসিফ সরফরাজ ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১:০৪ এএম says : 0
প্রত্যেক ফ্লাইওভারে সিসিটিভি লাগানোর কথা ছিল সেটা কি ৩০২০ সালে গিয়ে লাগানো হবে❓
Total Reply(0)
Md Belayet ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১:০৫ এএম says : 0
সিটি কর্পোরেশনের লোকজন চোখে দেখেনা তাই তাদের চোখের আড়ালে এসব কাজ হয়েছে।। অতি শীঘ্রই তাদেরকে চোখের ডাক্তার দেখায় চশমার আওতাধীন আনা হোক।।
Total Reply(0)
Meshkat Ali ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১:০৫ এএম says : 0
বাহিরের দেশে থেকে বিদেশি নাগরিকরা যখন আমাদের দেশে ঘুরতে যাবে এগুলো দেখে কি রকম লাগবে কিভাবে সৌন্দর্য বজায় রাখবে সেটা না
Total Reply(0)
MD Iqbal Hossen Biplob ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১:০৫ এএম says : 0
ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হয়েছে জাম, জট, যেন না থাকে, আর সেই ফ্লাইওভারের উপরে মানুষ তিন-চার ঘণ্টা জমে থাকে। দুঃখ ও লজ্জাজনক।
Total Reply(0)
Motiur Rahman ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১:০৬ এএম says : 0
সারা শরীরে ব‍্যাথা মলম লাগাবো কোথায়? এরা দেখতে পায়না কানা! চোরের দল,জাতীয় বেইমান।
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন