মিশর তুরস্কের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের কার্যকর পথ খুঁজছে বলে জানিয়েছে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সামেহ শোকরি। তিনি বলেন, আঙ্কারার সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে আমরা অধির আগ্রহী। যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক গণমাধ্যম ব্লুমবার্গকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে তিনি এসব কথা বলেন।
এদিকে, গত মঙ্গলবার আঙ্কারা ও কায়রোর মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নের লক্ষ্যে দেশ দু’টির উপ পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে দ্বিতীয় বারেরমত বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারায় অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে দেশ দু’টির মধ্যে আঞ্চলিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট দ্বন্দের আশু সুরাহা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা। তারা মনে করেন, এ বৈঠকের মধ্যমে তুরস্কের সঙ্গে মিশরের সম্পর্ক এক নতুন উচ্চতার পথে রয়েছে। তাছাড়া, ইথিওপিয়ার সঙ্গে নীলনদে বাঁধ দেয়া নিয়ে কোনও সশস্ত্র সংঘাতে জড়াতে চায়না বলে জানিয়েছে মিশরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
ব্লুমবার্গকে দেয়া ঐ সাক্ষাতকারে সামেহ শোকরি বলেন, ‘আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের চলে যাওয়া আরবদের জন্য কোনও বিচ্ছিন্ন ইঙ্গিত নয়। আরব জাতিগোষ্ঠী এমনটা বিশ্বাস করে না।’
শোকরি বলেন, তুরস্কের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে। আমরা অধীর আগ্রহে তুরস্কের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের পথ খুঁজছি। দেশটির সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করে একটি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা দরকার। তবে এজন্য বেশ কিছু পথ পারি দিতে হবে। তিনি আশা করেন, মিশরের অনিষ্পন্ন ইস্যুগুরো সন্তোষজনক সমাধান হলে ভবিষ্যতে সম্ভাবনার দ্বার ব্যাপক ভাবে খুলে যাবে। এতে করে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা অক্ষুন্ন থাকা সম্ভব।
মিশরের সাবেক গণতান্ত্রিক ভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ড. মোহাম্মদ মুরসিকে সামরিক ক্যু করে ক্ষমতাচ্যুত করে সেনাবাহিনী। হাজার হাজার মানুষ এর প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে আসে। তাহরির স্কয়ারে শুরু হয় সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া পৃথিবীর অন্যতম বিশাল গণসমাবেশ। কিন্তু সে অবস্থানের উপর নেমে আসে খড়গ। সামরিক জান্তা সরকার নির্বিচারে গুলি চালায় জনতার ওপর। ইসলামপন্থী সাধারণ জনতার উপর যখন তখন চড়াও হতে থাকে রাতারাতি বনে যাওয়া বর্তমান স্বৈরশাসক জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আস-সিসি। এসব ঘটনার কড়া প্রতিবাদ করেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেব এরদোগান। এতে করে তুরস্ক-মিশরের সম্পর্কের ব্যাপক অবনতি হয়।
সাক্ষাতকারে মিশরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তুরস্ক সহ ইসলামপন্থীদের সাপোর্টকারী আঞ্চলিক শক্তিগুলোর মধ্যে বিভক্তি চরম আকার ধারণ করেছে। তাছাড়া, সম্প্রতি লিবিয়া সরকার নিয়ে উত্তেজনা বেড়ে গেলে সেখানে তুরস্ক আন্তর্জাতিক সমর্থনপুষ্ট ত্রিপোলী সরকারকে সমর্থন করে। একই বিবাদে মিশর তুরস্কের বিপরীতে গিয়ে যুদ্ধবাজ বিদ্রোহী সশস্ত্র নেতা খলিফা হাফতারের পক্ষে অবস্থান নেয়। এতে করে তুরস্ক ও মিশরের মধ্যে উত্তেজনা চরম আকার ধারণ করে। তবে, সব কিছু উপেক্ষা করে আলোচনার মাধ্যমে মিশর তুরস্ক সম্পর্ক খুবদ্রুত স্বাভাবিক করতে পারবেন বলে আশাবাদী তিনি।
গত মে মাসে প্রথম বারেরমত কায়রোতে তুরস্ক ও মিশরের মধ্যে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ঐ সম্মেলনের পর দেশ দু’টির মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিকরণের ইঙ্গিত আসে। তরিঘড়ি সম্পর্ক উন্নয়নের এ চেষ্টা কেন তা খুব নিশ্চিত করে বিবৃতি করেনি কোনও দেশই। তবে ইরান ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম পার্স টুডেতে প্রকাশিত প্রতিবেদনের উল্লেখ করা হয়, নভেম্বরে জো বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে মধ্যপ্রাচ্যের দেশদু’টি আঞ্চলিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোর স্বার্থে নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নের চাপ অনুভব করে।
তুরস্ক এবং মিশরের সরকারি কর্মকর্তারা গত মঙ্গলবার দ্বিতীয় আবারের মত বৈঠকে বসে। কয়েকটি আরব দেশের সঙ্গে প্রায় এক দশকের অনাস্থাপূর্ণ সম্পর্কের মধ্যে আঙ্কারাও মিশরের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের পদক্ষেপ নিয়েছে। তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারায় দ্বিতীয় দফা বৈঠকে উপ পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের কর্মকর্তারা অংশ নেন।
আরব দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের অংশ হিসেবে গত সপ্তাহে সংযুক্ত আরব আমিরাতের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন জায়েদের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট। এছাড়া, গত মে মাসে তিনি সৌদি রাজার সঙ্গেও আলোচনা করেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন